শেয়ার বিজ ডেস্ক: বাংলা ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতিকে সারা বিশ্বে আরও ছড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত একুশে পদক প্রদান অনুষ্ঠানে এ আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা বাঙালি, আমাদের সংস্কৃতি চর্চা অব্যাহত থাকবে। আমাদের সাহিত্য সংস্কৃতি এটা যেন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আরও বিস্তার লাভ করে, সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে।’
প্রজন্মের পর প্রজন্ম যেন ভাষার জন্য ত্যাগের ইতিহাস জানবে সে আশাবাদ ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আজকে স্বাধীন জাতি। প্রকৃতপক্ষে এই একুশ আমাদের শিখিয়েছে মাথা নত না করার, একুশ শিখিয়েছে আত্মমর্যাদাবোধ, এই একুশে রক্ত অক্ষরে লিখা হয়েছিল আমাদের স্বাধীনতা। আমাদের জন্য এই দিনটি অত্যন্ত গৌরবের, আমরা চাই এই গৌরবের ইতিহাস প্রজন্মের পর প্রজন্ম মানুষ যেন জানে।’
ভাষায় মর্যাদা সবসময় অক্ষুন্ন রাখার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ঘটনাচক্রে অনেক কারণে মানুষকে বাইরে থাকতে হয়, তারপরও ভাষার মর্যাদা সবসময় অক্ষুন্ন রাখতে হবে। জীবন-জীবিকার জন্য যেহেতু পৃথিবী এখন আর একটি দেশ নিয়ে চলতে পারে না, সারা বিশ্বকে নিয়ে চলতে হয়। অন্য ভাষা শেখার প্রয়োজনীয়তা আছে, তাই বলে নিজের ভাষাকে ভুলে যাওয়া বা নিজের ভাষা বিচ্যুত হওয়া এটা আমাদের জন্য মোটেও ঠিক নয়।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের ভাষা কৃষ্টি আমাদের সংস্কৃতি জাতিসত্তার মর্যাদা যেমন বৃদ্ধি পাচ্ছে, পাশাপাশি বাঙালি জাতি হিসেবে বিশ্বদরবারে মাথা উঁচু করে চলব।’
বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য ২০ গুণী ব্যক্তি ও একটি প্রতিষ্ঠানকে এবার একুশে পদক দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গুণীজনদের হাতে এসব পদক তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী। এদের মধ্যে ভাষা আন্দোলনের জন্য আমিনুল ইসলাম বাদশা (মরণোত্তর); শিল্পকলায় (সংগীত) ডালিয়া নওশিন, শঙ্কর রায় ও মিতা হক; শিল্পকলায় (নৃত্য) মো. গোলাম মোস্তফা খান; শিল্পকলায় (অভিনয়) এমএম মহসীন; শিল্পকলায় (চারুকলা) অধ্যাপক শিল্পী ড. ফরিদা জামান; মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য আক্তার সরদার (মরণোত্তর), আবদুল জব্বার (মরণোত্তর), ডা. আ আ ম মেসবাহুল হক (বাচ্চু ডাক্তার) (মরণোত্তর); সাংবাদিকতায় জাফর ওয়াজেদ (আলী ওয়াজেদ জাফর); গবেষণায় ড. জাহাঙ্গীর আলম, হাফেজ কারী আল্লামা সৈয়দ মোহাম্মদ ছাইফুর রহমান নিজামী শাহ; শিক্ষায় অধ্যাপক ড. বিকিরণ প্রসাদ বড়–য়া; অর্থনীতিতে অধ্যাপক ড. শামসুল আলম; সমাজসেবায় সুফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান; ভাষা ও সাহিত্যে ড. নূরুন নবী, সিকদার আমিনুল হক (মরণোত্তর) ও নাজমুন নেসা পিয়ারি; চিকিৎসায় অধ্যাপক ডা. সায়েবা আখতারকে একুশে পদক দেওয়া হয়।
এছাড়া গবেষণায় ২০২০ সালে একুশে পদকে ভূষিত হয়েছে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট।
পুরস্কার প্রদান শেষে পদকপ্রাপ্তদের সঙ্গে ফটোসেশনে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে প্রতিবছর বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে এই পুরস্কার দিয়ে আসছে সরকার।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংস্কৃতিবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ। পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংস্কৃতিবিষয়ক সচিব ড. মো. আবু হেনা মোস্তফা কামাল।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, প্রধানমন্ত্রী উপদেষ্টা, বিচারক, সংসদ সদস্য, বিভিন্ন বাহিনী ও সংস্থা প্রধান, কূটনীতিকসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
