শেয়ার বিজ ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রথম বছরে দেশটিতে ৬৬ লাখ নতুন কর্মসংস্থান হয়েছে। এর আগে কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্টের প্রথম বছরে এত কর্মসংস্থান হয়নি। খবর: সিএনএন।
যুক্তরাষ্ট্রের নিয়োগকর্তারা গত এক বছরে এ কর্মসংস্থান বা পদ তৈরি করেছেন। চাকরিপ্রার্থীদের দক্ষতা উন্নয়ন, পণ্য কেনায় বিশেষ ছাড় ও নগদ প্রণোদনাসহ বিভিন্ন সুযোগ দেয়ার নিশ্চয়তাও দিয়েছেন নিয়োগদাতারা। এর কৃতিত্ব দেয়া হয়েছে বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে। গত বছর দেশটির মোট অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ছিল পাঁচ দশমিক সাত শতাংশ। ১৯৮৪ সালের পর যা সবচেয়ে ভালো বলে জানা গেছে। তখনকার প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগানের সময় এমন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দেখা যায়।
গত মাসে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্রের চাকরির বাজারের এমন শক্তিশালী চিত্র ফুটে ওঠে। এর আগে জিমি কার্টারের সময় প্রথম বছরে প্রায় ৪০ লাখ পদ তৈরি হয়। প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের সময় এ সংখ্যা ছিল ২৮ লাখ। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম এক বছরে যা ছিল ২০ লাখ।
২০২০ সালে শুরু হয় কভিড-১৯ মহামারি। এর মধ্যেই ক্ষমতা গ্রহণ করেন বাইডেন। তবে অল্প সময়ের মধ্যে তিনি অর্থনীতি পুনরুদ্ধার করতে পেরেছেন। বিশেষ করে চাকরির বাজার চাঙ্গা করার ক্ষেত্রে তিনি সুবিধা পেয়েছেন। এরই ধারাবাহিকতায় গত বছর নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য ও পরিষেবার জোরালো চাহিদা থাকায় দেশটির বিনিয়োগকারীরা প্রচুর বিনিয়োগ করেন। বড়দিন উপলক্ষে কর্মীদের ব্যাপক চাহিদা থাকায় উল্লেখযোগ্য হারে কর্মী নিয়োগ দিয়েছে প্রতিষ্ঠানগুলো। ফলে দেশটির কর্মসংস্থান ধারণার চেয়ে বেশি হয়েছে। এতে বেকারত্বের হার কমে ২০ মাসের মধ্যে সর্বনিন্ম পর্যায়ে নেমে আসে। বেকারত্বের হার অক্টোবরের চার দশমিক ছয় শতাংশ থেকে কমে চার দশমিক পাঁচ শতাংশে নামে, যা প্রায় ২০ মাসের মধ্যে সর্বনি¤œ। প্রতিষ্ঠানগুলোয় শ্রমিক চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় তাদের ঘণ্টাপ্রতি মজুরিও বেড়েছে। গত বছর ডিসেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের শ্রম বিভাগ নভেম্বরের এ কর্মসংস্থানের প্রতিবেদন প্রকাশ করার পর বিশ্ব পুঁজিবাজারে সূচক বাড়ে।
জো বাইডেনের শপথ নেয়ার পর ২০২১ সালে দেশটিতে চাকরি বাড়ে চার দশমিক ছয় শতাংশ। তবে কার্টারের সময় চাকরি বাড়ে চার দশমিক আট শতাংশ। ফলে শতাংশের ভিত্তিতে বাইডেন একটু পিছিয়ে রয়েছেন। লিন্ডন জনসনের শাসনামলে তিন দশমিক চার শতাংশ পদ বাড়ে।
যুক্তরাষ্ট্রের শ্রম পরিসংখ্যান ব্যুরো জানায়, ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে চাকরি ছাড়ার ক্ষেত্রে। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে ৪৩ লাখ কর্মী চাকরি ছাড়েন। নভেম্বরের রেকর্ড ৪৫ লাখের চেয়ে যা কম। অর্থাৎ শেষের দুই মাসে রেকর্ড ৮৮ লাখ মানুষ চাকরি ছাড়েন। দেশটিতে ২০২০ সালে ৩ কোটি ৬৩ লাখ লোক চাকরি ছেড়েছিলেন। আর ২০১৯ সালে এ সংখ্যা ছিল ৪ কোটি ২১ লাখ। যুক্তরাষ্ট্রে গত বছর মোট সাত কোটি ৫৩ লাখ কর্মী নিয়োগ করা হয়। একই সময় চাকরি ছাড়েন প্রায় ছয় কোটি ৯০ লাখ। তাদের মধ্যে চার কোটি ৮০ লাখ স্বেচ্ছায় চাকরি ছাড়েন।
সিএনএন জানায়, লাখো কর্মী ভালো বেতন, নগদ প্রণোদনা বা আরও ভালো সুবিধার জন্য এ সময় চাকরি ছাড়েন। তাছাড়া মহামারিতে পরিবারের শিশু কিংবা বয়স্কদের যতœ নেয়ার জন্যও অনেকে চাকরি ছাড়েন। এ ছাড়া অনেক বয়স্ক কর্মী অবসর নেন। কারণ অনেক প্রতিষ্ঠান তরুণদের নিয়োগ দিতে আগ্রহী ছিল গত বছর। গত বছর রেকর্ডসংখ্যক কর্মী চাকরি ছাড়লেও সার্বিকভাবে মার্কিন শ্রমবাজারে মোট কর্মসংস্থান বেড়েছে। গত ডিসেম্বরে নতুন চাকরির সংখ্যা ছিল ১ কোটি ৯ লাখ।