বাইসাইকেল ঋণ প্রকল্পের শুভ উদ্যোগ

 

রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক অপেক্ষাকৃত কম মুনাফায় ক্ষুদ্র ঋণ প্রকল্পের আওতায় শিক্ষার্থীদের জন্য চালু করেছে ‘বাইসাইকেল ঋণ কর্মসূচি’। এটি শুধু স্কুলগামী শিক্ষার্থী নয়, অভিভাবকদের জন্যও সুখবর। এ কর্মসূচি দূরের শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়যাত্রা যেমন সহজ করবে, তেমনি নতুন পরিবহন রাস্তায় নামায় পরিবেশেরও কোনো ক্ষতি হবে না। সঠিক সময়ে যানবাহন না পেয়ে স্কুলে পৌঁছাতে যাদের দেরি হতো, বাইসাইকেলপ্রাপ্তির মাধ্যমে ওইসব শিক্ষার্থীও কাটিয়ে উঠতে পারবে তাদের সমস্যা। নিজস্ব বাহনের আনন্দ তো শিক্ষার্থীদের উৎফুল্ল করবেই। ব্যাংকটির এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। আমরা মনে করি, যাতায়াত সমস্যার কারণে শিক্ষার্থীদের ঝরেপড়া কমাবে এ কর্মসূচি। তাদের আর্থিক অন্তর্ভুক্তির প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নেবে আরেক ধাপ।

আর্থিক খাতে শিক্ষার্থীদের অন্তর্ভুক্তির পাশাপাশি তাদের সঞ্চয়ের মানসিকতা গড়ে তুলতে ‘স্কুল ব্যাংকিং কর্মসূচি’ কেন্দ্রীয় ব্যাংককে শুরু করতে দেখেছি নিকট অতীতে। এটি শিক্ষার্থীদের মধ্যে যেমন জনপ্রিয় হয়েছে তেমনি ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকেও মিলেছে ইতিবাচক সাড়া। এ কর্মসূচি এগিয়ে নিতে অভিভাবকরাও জুগিয়েছেন সহায়তা। প্রচার চালানো গেলে বাইসাইকেল ঋণ কর্মসূচিতেও একই রকম সাড়া পাওয়া যাবে। আমরা বিশ্বাস করি, বিশেষত দরিদ্র শিক্ষার্থীদের বাহন ক্রয়ে ঋণ সহায়তা জোগানোর দায়িত্ব শুধু সোনালী নয়, সব ব্যাংকেরই। অন্য ব্যাংকগুলো যাতে সহজ শর্তে এমন ঋণ প্রকল্প চালু করে, সেজন্য উপযুক্ত নির্দেশনা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে আশা করি। খেলাপি ঋণ শ্রেণিবিন্যাসে বাংলাদেশ ব্যাংকের যে সার্কুলার আছে, তাতে মেয়াদি ঋণের শর্তকে অপেক্ষাকৃত কঠোর বলেই মনে করেন অনেকে। শিক্ষার্থীদের বাইসাইকেল ঋণের ক্ষেত্রে একই নিয়ম বিদ্যমান থাকলে তা সমস্যা হতে পারে ব্যাংকগুলোর জন্য। এ ব্যাপারেও কর্তৃপক্ষের বিবেচনা প্রত্যাশিত। বিনিয়োগ করতে ব্যাংক সাধারণত ঝুঁকির বিষয়টি বিবেচনায় রাখে। এক্ষেত্রে মাসিক কিস্তিভিত্তিক ঋণ সমন্বয়ের পাশাপাশি বাধ্যতামূলকভাবে সঞ্চয়ের ব্যবস্থা রেখে এ প্রকল্পের বিনিয়োগ ঝুঁকি কমানো যেতে পারে। এর আরেকটি সুবিধা হলো, মাধ্যমিক পরীক্ষা পাসের পর উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হতে যে বাড়তি টাকার প্রয়োজন পড়ে, তখন এ সঞ্চয় প্রকল্পের মাধ্যমে উপকৃত হতে পারবে শিক্ষার্থীরা। এ সঞ্চয় প্রকল্পের

মুনাফার হার অপেক্ষাকৃত বেশি রাখা গেলে এর প্রতি শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের আকর্ষণও থাকবে বেশি।

ছাত্রছাত্রী নির্বিশেষে বাইসাইকেলযোগে এখনও স্কুলে যায় অনেকে। বাস্তবতা হলো, দেশে এমন অনেক স্কুল রয়েছে, যেগুলোয় শিক্ষার্থীদের সাইকেল রাখার পর্যাপ্ত স্ট্যান্ড নেই। স্ট্যান্ড থাকলেও প্রহরী নেই কোনো কোনো স্কুলে। এতে বাহনটির নিরাপত্তা যেমন বিঘিœত হয়, তেমনি রোদে পুড়ে কিংবা বৃষ্টিতে ভিজে কমে যায় এর ব্যবহার উপযোগিতা। এ অবস্থায় ব্যাংকের করপোরেট সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটি (সিএসআর) তহবিল থেকে স্কুলগুলোয় সাইকেল স্ট্যান্ড বানিয়ে দেওয়া যায় কি না, তাও আমরা ভেবে দেখতে বলবো কর্তৃপক্ষকে। এর মাধ্যমে ব্যাংকের স্থায়ী প্রচারের ক্ষেত্রও তৈরি হতে পারে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে।

শুধু সাইকেল নয়, ল্যাপটপ-ডেস্কটপের মতো প্রযুক্তিপণ্যও এখন দরকারি হয়ে উঠেছে শিক্ষাজীবনে। সন্দেহ নেই, সন্তানকে এটি কিনে দেওয়ার মতো টাকা একসঙ্গে জোগাড় করতে পারেন না অনেক অভিভাবক। ফলে গৃহকর্ম সম্পাদনের পাশাপাশি তাত্ত্বিক জ্ঞানচর্চার ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়তে হয় বিশেষত উচ্চশিক্ষায় অধ্যয়নরত অনেক শিক্ষার্থীকে। উপযুক্ত শর্ত দিয়ে পণ্যটি ক্রয়ে বিনিয়োগ প্রকল্প চালু করা ব্যাংকগুলোর পক্ষে কি সম্ভব? বিষয়টি ভেবে দেখতে বলবো ব্যাংকগুলোকে। এক্ষেত্রে বিবেচনায় রাখা দরকার, এ স্তরের শিক্ষার্থীদের অনেকেই কিন্তু উপার্জনে সক্ষম। কর্মজীবনে প্রবেশের ক্ষেত্রে কম্পিউটার-সম্পর্কিত দক্ষতার অভাব এখনও দেখা যায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে। শিক্ষাজীবনে তাদের এ

প্রযুক্তিপণ্য ক্রয়ে সহায়তা জোগানো গেলে উল্লিখিত সমস্যা সমাধানেরও একটা উপায় হবে। আর এটি ব্যবহার করে শিক্ষাজীবনেই যদি কেউ সচ্ছলতা অর্জন করতে পারে,  তাহলে তো সোনায় সোহাগা!

 

 

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০