প্রতিনিধি, বাকৃবি: সম্প্রতি একাত্তর টেলিভিশন আয়োজিত একাত্তর জার্নালের এক টকশোতে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) গবেষক অধ্যাপক ড. জাকির হোসেনের গবেষণামূলক কাজকে প্রশ্নবিদ্ধ করা এবং বিব্রতকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করার বিষয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন নীল দল ও কৃষি অনুষদ ছাত্র সমিতি। এছাড়া এ বিষয়ে মানববন্ধন করেছে ছাত্র ইউনিয়ন বাকৃবি সংসদ।
গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের নীল দলের আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব, কৃষি অনুষদ ছাত্র সমিতির সহসভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং ছাত্র ইউনিয়ন বাকৃবি সংসদের দপ্তর সম্পাদকের স্বাক্ষরিত পৃথক প্রতিবাদলিপিতে এ তথ্য জানানো হয়।
কৃষি অনুষদ ছাত্র সমিতির প্রতিবাদলিপিতে জানানো হয়, গত ২ নভেম্বর একাত্তর টেলিভিশনে আয়োজিত একাত্তর জার্নালের একটি টকশোতে বাকৃবির গবেষক অধ্যাপক ড. জাকির হোসেনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। অনুষ্ঠানের সঞ্চালকসহ অন্যান্য আমন্ত্রিত অতিথি দ্বারা অশোভন ও আক্রমণাত্মক আচরণ এবং প্রক্রিয়াধীন গবেষণাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়। টকশোতে গবেষকের গবেষণামূলক কাজকে প্রশ্নবিদ্ধ করা এবং বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করায় কৃষি অনুষদ ছাত্র সমিতি হতবাক ও মর্মাহত হয়েছে। একাত্তর টেলিভিশনের ওই সাংবাদিকদের জবাবদিহির আওতায় নিয়ে এসে ক্ষমা চাওয়া এবং গবেষণা-সম্পর্কিত সঠিক প্রতিবেদন প্রকাশের দাবি জানিয়েছে কৃষি অনুষদ ছাত্র সমিতি।
এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নীল দলের প্রতিবাদলিপিতে জানানো হয়, অধ্যাপক ড. জাকিরের গবেষণা দল কিন্তু কখনো বলেনি যে, বেগুন খেলে ক্যানসার হবে। কিন্তু একাত্তর টেলিভিশনের ওই টকশোতে উপস্থাপকসহ আরও দুই সাংবাদিক যেভাবে তাকে জেরা করলেন, তা কোনোক্রমেই শিষ্টাচারের পর্যায়ে পড়ে না। ওই সাংবাদিকরা সায়েন্টিফিক রিপোর্টস জার্নালটির মান, প্রকাশক, কীভাবে গবেষণা হয়, কীভাবে জার্নালে প্রকাশ করতে হয় প্রভৃতি সম্বন্ধে ন্যূনতম জ্ঞানও রাখেন না বলে প্রতীয়মান হয়েছে।
প্রতিবাদলিপিতে আরও জানানো হয়, গবেষণার বিষয়-সম্পর্কিত ন্যূনতম জ্ঞান না থাকা সত্ত্বেও ৭১ টিভির সাংবাদিকদের টকশোতে অসৌজন্যমূলক আচরণ কখনোই কাম্য নয়। অসৌজন্যমূলক কর্মকাণ্ড গবেষক ও জনমনে নেতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি করে, যা দেশ ও জাতির জন্য কল্যাণকর নয়। নীল দল ও ছাত্র সমিতি গবেষক অধ্যাপক ড. জাকির হোসেন ও তার গবেষণার ওপর একাত্তর টেলিভিশনের ওই সাংবাদিকদের ভিত্তিহীন ও অসৌজন্যমূলক আচরণের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জ্ঞাপন করে।
এদিকে ছাত্র ইউনিয়ন বাকৃবি সংসদে মানববন্ধনে বক্তারা অধ্যাপক ড. মো. জাকির হোসেনের সঙ্গে এমন অশোভন আচরণের তীব্র নিন্দা জানান এবং ওই অনুষ্ঠানের সঞ্চালকসহ যারা এ ধরনের অপ্রীতিকর মন্তব্য করেছেন, তাদের অনতিবিলম্বে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা প্রার্থনার দাবি জানান। ভবিষ্যতে এমন অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সচেতন হতে হবে।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি ‘সায়েন্টিফিক রিপোর্টস’ বিশ্বখ্যাত জার্নালে বাকৃবির কৃষি রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. জাকির হোসেনের নেতৃত্বে বেগুনে ভারী ধাতুর উপস্থিতি শীর্ষক গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়। ড. জাকির বেগুন নিয়ে যে গবেষণা করেছেন, যেটি সাদা চোখে খুবই সাদামাটা একটি গবেষণা মনে হলেও মানবদেহের স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা বিবেচনায় নিলে গবেষণাটি গুরুত্বপূর্ণ। গবেষণায় জামালপুরের জেলার কিছু এলাকার চাষকৃত বেগুনে কয়েকটি ভারী ধাতু, যেমন লেড, ক্যাডমিয়াম ও নিকেলের উপস্থিতি পাওয়া গেছে, যা মানবদেহের সহনীয় মাত্রার চেয়ে অতিরিক্ত। এসব ভারী ধাতু ক্যানসার সৃষ্টিকারী পদার্থ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। অতিরিক্ত মাত্রায় এসব ভারী ধাতুর উপস্থিতি মানবশরীরের জন্য হুমকিস্বরূপ ও মারণব্যাধি ক্যানসারসহ অন্যান্য রোগ তৈরি করতে সক্ষম।