প্রতিনিধি, বাকৃবি: আজ ১৮ আগস্ট। ১৯৬১ সালের এ দিনে ময়মনসিংহ শহরে প্রতিষ্ঠিত হয় দেশের কৃষিশিক্ষা ও গবেষণার সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি)। আজ বাকৃবির ৬১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী এবং ৬২তম প্রতিষ্ঠা দিবস। দিবসটি উপলক্ষে নানা কর্মসূচির আয়োজন করছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
গত ৬১ বছরে ধান, সরিষা, কুল, সয়াবিন, আলু, আম, লিচু, মুখিকচুসহ বেশ কিছু ফসলের কয়েকটি করে উন্নত জাত উদ্ভাবন করেছে এ বিশ্ববিদ্যালয়। প্রায় সাড়ে ১১ হাজার ফলদ, ভেষজ প্রজাতির বৃক্ষসমৃদ্ধ এখানকার জার্মপ্লাজম সেন্টারটি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম এবং দেশে প্রথম। গাঙ মাগুর, কই, বাটা মাছ, তারাবাইন, গুচিবাইন, বড় বাইন, কুঁচিয়াসহ বিভিন্ন মাছের কৃত্রিম প্রজনন পদ্ধতিও উদ্ভাবন করেছেন এ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা ও গবেষণাকে বেগবান করার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বেশকিছু বিশেষায়িত গবেষণাগার।
সম্প্রতি বাকৃবি গবেষকরা পাঙ্গাস থেকে ১১টি পণ্য উদ্ভাবন করেন। সেগুলো হলোÑফিশ বার্গার, ফিশ আঁচার, ফিশ চাটনি, ফিশ কাটলেট, ফিশ সসেজ, ফিশ পাপড়, ফিশ ফ্লেক, ফিশ চিপস, ফিশ ম্যাকারনি-পাস্তা, ফিশ জিলাটিন, ফিশ আঠা। এছাড়া সরিষার উচ্চফলনশীল পাঁচটি জাত উদ্ভাবন (বাউ সরিষা- ৪, ৫, ৬, ৭ ও ৮) এবং লবণসহিষ্ণু ও স্বল্পসময়ে উৎপাদনক্ষম উচ্চফলনশীল তিনটি সরিষার জাত উদ্ভাবন (বাউ সরিষা-১’, ‘বাউ সরিষা-২’ এবং ‘বাউ সরিষা-৩) করেছেন। উদ্ভাবিত জাতগুলো ১২ ডেসিসিমেন্স পর্যন্ত লবণ সহনশীল। বাউ মিষ্টি আলু-৪, বাউ মিষ্টি আলু-৫ এবং বাউ মিষ্টি আলু-৬ নামে তিনটি মিষ্টি আলুর নতুন ৩ জাত উদ্ভাবন করেছেন। গরু-ছাগলের মাংসে যক্ষ্মার জীবাণু শনাক্তও করেন বাকৃবি গবেষকরা।
ময়মনসিংহ শহর থেকে চার কিলোমিটার দক্ষিণে পুরোনো ব্রহ্মপুত্র নদের পশ্চিম তীরে এক হাজার ২০০ একর জায়গায় অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়টিতে মোট ছয়টি অনুষদে ৪৩টি বিভাগ রয়েছে। এখান থেকে বর্তমানে ৮টি বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি প্রদান করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এ পর্যন্ত ৫০ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থীকে ডিগ্রি দিয়েছে। বর্তমানে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী সাত হাজার ৯২৩ জন। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ৫৬৩ জন। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ছেলেদের জন্য ৯টি ও মেয়েদের জন্য ৫টি আবাসিক হল (সর্বশেষ শেখ হাসিনা হল) রয়েছে।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দিক দিয়ে এটি প্রকৃতকন্যা নামে পরিচিত। সবুজ গাছ-গাছালিতে ভরা ১২০০ একরের এই ক্যাম্পাস সবাইকে আকৃষ্ট করে। তাই বার বার দর্শনার্থীরা ছুটে আসে এই সবুজ চত্বরে।
বর্তমানে বাকৃবির উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করছেন অধ্যাপক ড. লুৎফুল হাসান। তিনি লবণাক্ততা সহিষ্ণু তিনটি সরিষার জাত এবং বাউধান-৩ উদ্ভাবনের মাধ্যমে কৃষিক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য সিআইপি মর্যাদায় এআইপি (এগ্রিকালচারলি ইম্পরট্যান্ট পারসন) হিসেবে সম্মাননা-২০২০ পদকপ্রাপ্ত হন।