Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 1:36 pm

বাঘাবাড়ী নৌবন্দরগামী ১৩০ জাহাজ যমুনায় আটকা

শাহীন রহমান, পাবনা : তীব্র নাব্য সংকটের কারণে যমুনার আরিচা ও গোয়ালন্দ পয়েন্টে বাঘাবাড়ী নৌবন্দরগামী অন্তত ১৩০টি পণ্যবাহী জাহাজ আটকে পড়েছে। এসব জাহাজে চট্টগ্রাম থেকে জ্বালানি তেল, রাসায়নিক সার, ক্লিংকার, কয়লাসহ বিভিন্ন পণ্য রয়েছে। বাঘাবাড়ী-আরিচা নৌপথের পাঁচটি পয়েন্টে নাব্য সংকট মারাত্মক আকার ধারণ করায় জাহাজগুলো বন্দরে যেতে পারছে না। এ কারণে পণ্যসামগ্রী আমদানি-রফতানি অর্ধেকেরও বেশি নেমে যাওয়ায় বাঘাবাড়ী নৌবন্দর কার্যত অচল হয়ে পড়েছে।

জানা গেছে, বাঘাবাড়ী-আরিচা নৌপথে উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় জ্বালানি তেল, রাসায়নিক সারসহ অন্যান্য মালামাল পরিবহনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। বাঘাবাড়ী বন্দর থেকে উত্তরাঞ্চলে চাহিদার ৯০ ভাগ জ্বালানি তেল ও রাসায়নিক সার সরবরাহ করা হয়। এছাড়া উত্তরাঞ্চল থেকে বাঘাবাড়ী বন্দরের মাধ্যমে চাল ও গমসহ অন্যান্য পণ্যসামগ্রী রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয়।

বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওহাব মাস্টার জানান, বাঘাবাড়ী-আরিচা নৌপথের মোল্লার চর, ব্যাটারির চর, মোহনগঞ্জ, কৈটোলা ও চর পেঁচাকোলা পয়েন্টে পানির গভীরতা কমে দাঁড়িয়েছে চার থেকে ছয় ফুটে। এতে নাব্য সংকট মারাত্মক আকার ধারণ করায় বিভিন্ন পণ্যবাহী ১৩০টি কার্গো জাহাজ বাঘাবাড়ী বন্দরে যেতে পারছে না। প্রায় ১০ দিন ধরে কার্গো জাহাজগুলো বাঘাবাড়ী বন্দরের ৪৫ কিলোমিটার ভাটিতে পাটুরিয়া, গোয়ালন্দ ও দৌলতদিয়া পয়েন্টে নোঙর করে রয়েছে। প্রতিদিনই আটকে পড়া জাহাজের সংখ্যা বাড়ছে।

সেখান থেকে প্রতিদিন দুই থেকে তিনটি লাইটারেজ জাহাজ বাঘাবাড়ী বন্দরে ভিড়তে পারছে। তবে লাইটারেজ জাহাজ সংকটে জ্বালানি তেল ও অন্যান্য পণ্যসামগ্রী পরিবহন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। তিনি বলেন, নৌ-চ্যানেলটি সচল রাখার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান বরাবর লিখিত আবেদন করা হয়েছে, কিন্তু যথাসময়ে এ নৌ-চ্যানেল ড্রেজিং না করায় এ অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। উত্তরাঞ্চলে ডিজেল ও ইউরিয়া সারের চাহিদা পূরণ করতে না পারায় বোরো আবাদে কৃষকরা হিমশিম খাচ্ছেন বলেও তিনি জানান।

বাঘাবাড়ী নৌবন্দরের লেবার এজেন্ট আবদুল মজিদ ও আবুল হোসেন জানান, নাব্য সংকটের কারণে সরাসরি কোনো জাহাজ বাঘাবাড়ী বন্দরে ভিড়তে না পারায় কার্যত অচল হয়ে পড়েছে বাঘাবাড়ী নৌবন্দর। এতে তারা আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। সেইসঙ্গে সরকারও বিপুল অঙ্কের রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

লেবার সরদার লুৎফর রহমান বলেন, এ মৌসুমে প্রতিদিন বন্দরে এক হাজার ২০০ থেকে এক হাজার ৩০০ শ্রমিক কাজ করত। বন্দরে জাহাজ ভিড়তে না পাড়ায় ৫০০ থেকে ৭০০ শ্রমিক কর্মহীন হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। কার্গো জাহাজ পুরা লোড নিয়ে বন্দরে পৌঁছাতে না পারায় ব্যবসায়ীদেরও জাহাজপ্রতি ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা অতিরিক্ত ব্যয় হচ্ছে। এ কারণে ব্যবসায়ী ও জাহাজ মালিকরা বাঘাবাড়ী বন্দরের মালামাল পরিবহনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন বলেও জানান তিনি।

এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএ আরিচা অফিসের যুগ্ম পরিচালক আবদুস ছালাম জানান, প্রতি বছর এ সময় দৌলতদিয়া-বাঘাবাড়ী নৌ-চ্যানেলে নাব্য সংকট দেখা দেয়। বর্তমানে এ রুটে সাত থেকে আট ফুট পানির গভীরতা রয়েছে। তবে মোল্লার চর, ব্যাটারির চর, মোহনগঞ্জ, কৈটোলা ও চর পেঁচাকোলা পয়েন্টে পানির গভীরতা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র চার থেকে ছয় ফুটে। নৌ-চ্যানেলটি সচল রাখার জন্য ড্রেজিং অব্যাহত রয়েছে।

তিনি আরও জানান, বাঘাবাড়ী নৌপথে ছয় থেকে সাড়ে সাত ফুট ড্রাফটের পণ্যবাহী জাহাজ চলাচলের জন্য বলা হয়েছে। কিন্তু কার্গো জাহাজগুলো অতিরিক্ত পণ্য বহন করায় ডুবোচরে আটকে পড়ছে। এছাড়া বালির প্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় ড্রেজিং করার পর ভাটিতে পলি পড়ে ডুবোচরগুলো আগের স্থানে ফিরে যাচ্ছে বলেও জানান তিনি।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের পাবনা হাইড্রোলজি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তা নদীর প্রবাহ একসঙ্গে ধারণ করে যমুনা নদী প্রবাহিত হয়। ভারত তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি শুষ্ক মওসুমে সেচের জন্য একতরফা প্রত্যাহার করে নিচ্ছে। ফলে ভাটির বাংলাদেশ অংশে তিস্তার পানি প্রবাহ কমে এক হাজার কিউসেকে নেমে এসেছে। এর বিরুপ প্রভাব পড়েছে যমুনায় নদীতে। তিস্তার পানি প্রবাহ না বাড়া পর্যন্ত যমুনায় নাব্য সংকট অব্যাহত থাকবে বলেও সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।

এ ব্যাপারে বাঘাবাড়ী পোর্ট অফিসার সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ড্রেজিং চলছে, দুই-তিন দিনের মধ্যে এ সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। আর বাঘাবাড়ী বাফার গুদাম ইনচার্জ সোলায়মান হোসেন বলেন, বন্দরের ৪৫ কিলোমিটার ভাটিতে জাহাজ থেকে সার ছোট ছোট নৌকায় লাইটারেজ করে বাঘাবাড়ীতে নিয়ে আসা হচ্ছে। এতে বাফার গুদামগুলোতে আপৎকালীন সারের মজুদ গড়ে তোলার কাজ চরমভাবে বিঘিœত হচ্ছে। তবে আগের মজুদ থেকে রাসায়নিক সার সরবরাহ অব্যাহত থাকায় এখনও এ অঞ্চলে সারের তেমন কোনো সংকট দেখা দেয়নি বলেও জানান তিনি।