Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 1:30 am

বাঙালির স্বাধীনতা

কাজী সালমা সুলতানা: ২৯ মার্চ, ১৯৭১। এদিন সারা দেশে পাকিস্তানি দখলদার বাহিনী হত্যাযজ্ঞ চালায়। অনেক স্থানেই তারা মুক্তিযোদ্ধাদের প্রবল প্রতিরোধের মুখে পড়ে এবং কোথাও কোথাও পরাস্ত হয়ে প্রাণ হারায়। এদিন বিকাল ৪টার মধ্যে ময়মনসিংহে দ্বিতীয় ইস্টবেঙ্গল ব্যাটালিয়নের সৈন্যদের সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ১৯ মার্চ জয়দেবপুরে (গাজীপুর) বিদ্রোহ করে তারা ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান হয়ে ময়মনসিংহে পৌঁছে। ময়মনসিংহ টাউন হলে ব্যাটালিয়নের অফিসার এবং সৈনিকদের একত্র করে বাংলাদেশের প্রতি তাদের আনুগত্য প্রকাশের শপথ গ্রহণ করানো হয়। এই শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন দ্বিতীয় ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের সেকেন্ড ইন কমান্ড মেজর কেএম সফিউল্লাহ।

পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী প্রথম থেকেই চট্টগ্রামে প্রবলভাবে প্রতিরোধের মুখে পড়ে। তৎকালীন প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা শুভপুর ব্রিজ ক্ষতিগ্রস্ত করায় বাইরে থেকে পাকিস্তানি বাহিনী সাহায্য পাচ্ছিল না। এদিন চট্টগ্রাম সেনানিবাসের বাইরে এসে মেডিক্যাল কলেজ ও নিকটবর্তী পাহাড়ের ওপর পাকিস্তানি হানাদর বাহিনী সমবেত হয়। সন্ধ্যার দিকে তারা প্রথম আক্রমণ সূচনা করে। কিন্তু চট্টগ্রামের মুক্তিবাহিনী এই আক্রমণ ব্যর্থ করে দেয়।

গ্রেফতারের পর থেকে বঙ্গবন্ধু মেখ মুজিবুর রহমানকে ঢাকা সেনানিবাসে আটক রাখা হয়। এদিন সন্ধ্যায় তাকে সেনানিবাস থেকে সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারে করে তেজগাঁও বিমানবন্দরে নিয়ে আসা হয়। এরপর রাতে সামরিক বাহিনীর একটি বিশেষ বিমানযোগে বঙ্গবন্ধুকে করাচি নিয়ে যাওয়া হয়।

এদিকে প্রথম ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈন্যরা রাত ১১টায় জগদীশপুরের মহড়া শেষ করে যশোর সেনানিবাসে নিজ ইউনিটে ফিরে আসে এবং সঙ্গে থাকা অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ অস্ত্রাগারে ফেরত দেয়।

ক্যাপ্টেন রশীদের সফল অভিযানে ২৫ পাঞ্জাব ব্যাটালিয়নের মেজর আসলাম ও ক্যাপ্টেন ইশফাকসহ ৪০ জন পাকিস্তানি সৈন্য এদিন পাবনায় প্রবলভাবে প্রতিরোধের মুখে পড়ে। পাবনায় সংগ্রাম পরিষদ, বিশেষ ছাত্র-যুবকদের হাতে আগেই অস্ত্র তুলে দিয়েছিলেন পাবনার তৎকালীন ডেপুটি কমিশনার নুরুল কাদের। এ প্রস্তুতির ফলে ২৫ পাঞ্জাব ব্যাটালিয়নের সৈন্যরা পাবনা থেকে গোপালপুরের পথে মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণের শিকার হয় এবং প্রায় সবাই নিহত হয়। জীবিতদের অনেকে বিচ্ছিন্নভাবে রাজশাহীর দিকে যাওয়ার পথে প্রাণ হারায়।

এদিন রাতে প্রায় ১০০ জন বাঙালি ইপিআর সৈনিককে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী প্রেসিডেন্ট হাউজ থেকে নিয়ে যায় এবং তিনটি গ্রুপে ভাগ করে রমনা কালীবাড়ির কাছে নিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে।

সকালে ময়মনসিংহের রাবেয়া মেমোরিয়াল বালিকা বিদ্যালয়ে ইপিআর বাহিনী ও হাজার হাজার জনতার উপস্থিতিতে যথাযোগ্য মর্যাদায় স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করা হয়।

নির্ভীক সৈনিক সিপাহি লুৎফর রহমান লালমনিরহাট শহরের কাছে অবাঙালি ও বাঙালি ইপিআরদের সংঘর্ষে শহীদ হন।

ইপিআর সিপাহি আবদুল হালিম ১২ নম্বর উইংয়ের সুনামগঞ্জ কোম্পানি হেডকোয়ার্টারসে পাকিস্তানি সৈন্যদের আক্রমণ প্রতিহত করতে গিয়ে শহীদ হন।

এভাবেই সারা দেশে পাকিস্তানি দখলদার বাহিনী হত্যাযজ্ঞ শুরু করে। একই সঙ্গে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে বীর বাঙালি যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে।

তথ্যসূত্র: মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর