Print Date & Time : 22 June 2025 Sunday 10:01 am

বাঙালি জাতি কখনোই স্বৈরতন্ত্র মেনে নেয়নি: ড. কামাল

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাঙালি জাতি কখনোই স্বৈরতন্ত্রকে মেনে নেয়নি, নেবেও না বলে উল্লেখ করেছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন। গতকাল দুপুর ১টার দিকে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে খালেদা জিয়ার কারাবাসের দুবছর এবং মুক্তির দাবিতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের এক প্রতিবাদ সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।

ড. কামাল বলেন, ‘দেশের ইতিহাস থেকে আমরা দেখেছি, জনগণকে বঞ্চিত করে এখানে কেউ স্বৈরতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে পারেনি। আজ যারা ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে, তাদের সেই ইতিহাসের দিকে তাকিয়ে দেখা উচিত। বাঙালি জাতি কখনোই স্বৈরতন্ত্রকে মেনে নেয়নি, নেবেও না।’

তিনি বলেন, ‘দেশের ১৬ কোটি মানুষের অধিকার হচ্ছে, দেশে গণতন্ত্র থাকবে। প্রকৃত অর্থে নির্বাচিত সদস্যরা দেশ পরিচালনা করবেন। সেখানে আজ আমাদের গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করতে হচ্ছে। ঐক্যবদ্ধ হয়ে আমাদের নিজের অধিকার আদায় করে নিতে হবে।’

ড. কামাল বলেন, ‘সংবিধান অনুযায়ী দেশের প্রকৃত মালিক জনগণ। মালিক হিসেবে দেশের জনগণকে যেন সম্মান জানানো হয়। মালিক হিসেবে দেশের জনগণ যেন ভূমিকা রাখতে পারেÑসে ব্যবস্থা করতে হবে। লাখ লাখ মানুষ জীবন দিয়ে জনগণের এ অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে। দেশের জনগণকে বঞ্চিত করে সরকার দেশ চালাচ্ছে, এটা আমরা মেনে নিতে পারি না।’

সরকারের সমালোচনা করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক বলেন, ‘স্বাধীনতার ৫০ বছর হতে যাচ্ছে। এটা আমাদের জন্য লজ্জার ব্যাপার। সরকার জোর করে ক্ষমতা দখল করে দেশের মানুষকে বঞ্চিত করছে। সরকার স্বাধীনতার ৫০ বছর পালন করতে যাচ্ছে। মানুষকে বঞ্চিত করে স্বাধীনতার ৫০ বছর উদ্যাপন একটা প্রহসন। যারা জনগণের সঙ্গে এ প্রহসন করছে, এখন সময় এসেছে তাদের সহজ ভাষায় বলার সরে দাঁড়াও, সরে দাঁড়াও, সরে দাঁড়াও।’

ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘ক্ষমতা আত্মসাৎ করে, স্বৈরতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার যে অপচেষ্টা চলছে, যেভাবে দুর্নীতি, কুশাসন, মানুষের বিরুদ্ধে অত্যাচার চলছে, লাখ লাখ মিথ্যা মামলা দেওয়া এটা আর মেনে নেওয়া যায় না। এমন স্বৈরতন্ত্রের মাধ্যমে দেশের মানুষ ও শহীদদের প্রতিও অসম্মান জানানো হচ্ছে।’

জনগণের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘যে দেশ লাখ লাখ প্রাণের বিনিময়ে স্বাধীন হয়েছে, সেই দেশে আমাদের দাবি আদায়ের জন্য সভা করতে হয়Ñএটা দুঃখের বিষয়। এখন আমাদের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনকে সামনে রেখে মাঠে নামতে হবে এবং আমরা আমাদের দাবি-দাওয়া অর্জন করে ছাড়ব। যারা দেশের ক্ষমতাকে আত্মসাৎ করেছে, তাদের চিহ্নিত করে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে বিতাড়িত করতে হবে। খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে ড. কামাল বলেন, ‘স্বাধীনতার এতদিন পরও দেশে বিরোধী দলের নেতা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে সভা করতে হবে, দাবি করতে হবেÑএটা অকল্পনীয় কষ্টের বিষয়।’

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘আমি নির্বাচনে যাওয়ার জন্য খালেদা জিয়াকে কিছুটা উৎসাহিত করেছিলাম। এখন আমি বলতে চাই, তার মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত বিএনপির আর কোনো নির্বাচনে যাওয়া ঠিক হবে না।’

বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, ‘এখন আর বক্তব্য দেওয়ার সময় নেই, রাস্তায় নামতে হবে। আন্দোলন করে খালেদা জিয়া ও গণতন্ত্রকে মুক্ত করতে হবে।’

জেএসডি সভাপতি আ স ম রব বলেন, ‘শেখ হাসিনাকে বলতে চাই, আপনি কি শান্তিমতো ক্ষমতা থেকে বিদায় নেবেন, নাকি অন্যভাবে যাবেন। সিটি নির্বাচনে মানুষ ভোট না দিয়ে প্রমাণ করছে যে, গণতান্ত্রিক উপায়ে ক্ষমতা পরিবর্তন হবে না। তাই তারা ভোট দিতে যায়নি। জনগণ আমাদের বলছে, রাস্তায় নামার জন্য তারা প্রস্তুত। এখনও সময় আছে, শান্তিপূর্ণভাবে বিদায় নিন। না হলে কীভাবে হবেÑসেটা বুঝতেও পারবেন না।’ 

এ সময় প্রতিবাদ সভায় উপস্থিত ছিলেন বিকল্পধারা বাংলাদেশের সভাপতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক নুরুল আমিন ব্যাপারী, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, জেএসডির শহীদুল্লাহ কাউসার, ফ্রন্টের দফতর নেতা জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু প্রমুখ।