বাচ্চু পরিবার ও লো মেরিডিয়ানের মালিকের বিরুদ্ধে চার্জশিট অনুমোদন

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট বাজারের ৩০ দশমিক ২৫ কাঠা জমি ক্রয় দেখিয়ে আত্মসাতের প্রায় ৯৫ কোটি টাকা গোপন করার চেষ্টা এবং সাড়ে ৮ কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগে বেসিক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আব্দুল হাই বাচ্চু, তার স্ত্রী-সন্তান ও ভাই এবং হোটেল লো মেরিডিয়ানের মালিক আমিন আহমেদসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট অনুমোদন দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

গতকাল সোমবার দুদকের প্রধান কার্যালয়ে কমিশন থেকে ওই চার্জশিট অনুমোদন দেয়া হয়। শিগগির দুদকের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ নেয়ামুল আহসান গাজী চার্জশিট আদালতে দাখিল করবেন বলে জানা গেছে। দুদকের ঊর্ধ্বতন একটি সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

এর আগে ২০২৩ সালের ৩ অক্টোবর দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক নুরুল হুদা বাদী হয়ে মামলা করেন।

আসামিরা হলেন বেসিক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আব্দুল হাই বাচ্চু, তার স্ত্রী শিরিন আক্তার, তার ভাই শেখ শাহরিয়ার পান্না, বাচ্চুর ছেলে শেখ রাফা হাই ও শেখ ছাবিদ হাই অনিক এবং হোটেল লো মেরিডিয়ানের মালিক আমিন আহমেদ।

তদন্ত প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, আসামি শেখ আব্দুল হাই বাচ্চু ২০১২ সালের ৮ জুলাই ক্যান্টনমেন্ট বাজার এলাকার ৬ নম্বর প্লটের ৩০ দশমিক ২৫ কাঠা জমি ১১০ কোটি টাকায় কেনার জন্য অপর আসামি আমিন আহমেদের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তিপত্র করেন। চুক্তি করা জমির মূল্য ১১০ কোটি টাকা ও চুক্তিপত্র স্বাক্ষরের সময় পরিশোধিত অর্থ ১০ কোটি টাকা। চুক্তিপত্র অনুযায়ী, দুটি দলিলে ভূমির দলিল রেজিস্ট্রি করা হয়, যার মধ্যে ২০১২ সালের ১৬ অক্টোবর প্রথম দলিলে ১৮ কাঠা জমির দাম ৯ কোটি টাকা উল্লেখ করা হয়েছে। যেখানে গ্রহীতা শেখ আব্দুল হাই বাচ্চু, শেখ শাহরিয়ার পান্না ও শিরিন আক্তার। অন্যদিকে দ্বিতীয় দলিলে ওই একই বছরে ১২ দশমিক ২৫ কাঠার দাম ছয় কোটি ২৫ লাখ টাকা ধরা হয়েছে, যেখানে গ্রহীতা হলেন শেখ ছাবিদ হাই অনিক ও শেখ রাফা হাই। অর্থাৎ জমির মোট রেজিস্ট্রেশন মূল্য ধরা হয়েছে ১৫ কোটি ২৫ লাখ টাকা। রেজিস্ট্রেশন মূল্য ৯৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা কম দেখিয়ে অবৈধ আয় গোপন করার চেষ্টা করেছেন তিনি। এছাড়া জমির মূল্য কম দেখিয়ে সরকারের আট কোটি ৫২ লাখ ৭৫ হাজার টাকার রাজস্বও ফাঁকি দিয়েছেন।

সূত্র আরও বলছে, জমি বিক্রি ও প্রকৃত মূল্য গোপন করতে আমিন আহমেদ সহযোগিতা করেছেন। আমিন আহমেদ ১৩৪টি পে-অর্ডারের মাধ্যমে ৭৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা এবং নগদে ৩১ কোটি ৫০ লাখ টাকা নিয়েছেন। অন্যদিকে তাদের আয়কর নথিতে জমির জন্য মূল্য প্রদর্শন করেছেন ২৪ কোটি ৬৪ লাখ ৩৮ হাজার ৪৫৪ টাকা। অর্থাৎ শেখ আব্দুল হাই বাচ্চুর আয়-ব্যয় এবং প্রকৃত সম্পদের মধ্যে কোনো সামঞ্জস্য পাওয়া যায়নি। তিনি বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে ক্ষমতার অপব্যবহার করে অস্তিত্বহীন ও নামসর্বস্ব বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ভুয়া ঋণ মঞ্জুর করে আত্মসাৎ করা অর্থ হস্তান্তর, স্থানান্তর, রূপান্তর ও ছদ্মাবরণের মাধ্যমে গোপন করেছেন। আসামি আমিন আহমেদ বাচ্চুর অবৈধ অর্থের বৈধতা দিতে সরাসরি সহায়তা করেছেন। আসামিদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২-এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।

জাতীয় পার্টি থেকে ১৯৮৬ সালের সংসদ নির্বাচনে বাগেরহাট-১ আসন থেকে অংশ নিয়ে শেখ আবদুল হাই একবার সংসদ সদস্য হয়েছিলেন। এরপর সরাসরি রাজনীতি করতে তাকে দেখা যায়নি। ২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়ী আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বরে বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদে তাকে তিন বছরের জন্য নিয়োগ দেয়। এ মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের মাস, অর্থাৎ ২০১২ সালের আগস্টে তিনি বেস্ট হোল্ডিংস গ্রুপের চেয়ারম্যান আমিন আহমেদের সঙ্গে বাড়িটি কেনার বায়না চুক্তি করেন। বায়না চুক্তিপত্রটি বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে রয়েছে। চুক্তিপত্রে জমির পরিমাণ দেখানো হয় দলিল হওয়া জমির চেয়ে একটু বেশি অর্থাৎ ৩০ দশমিক ২৫ কাঠা। ২০১২ সালের ৮ আগস্টে হওয়া বায়না চুক্তিপত্রে আবদুল হাইসহ তার স্ত্রী, পুত্র, কন্যা ও ভাইয়ের স্বাক্ষর রয়েছে।

বায়না চুক্তি অনুযায়ী বাড়ির মালিকানা পাঁচজনের নামে। জমির বণ্টননামায় শেখ আবদুল হাই ওরফে বাচ্চু ৬ দশমিক ২৫ কাঠা, শেখ শাহরিয়ার ওরফে পান্না ছয় কাঠা, শেখ শিরীন আক্তার দুই কাঠা, শেখ সাবিদ হাই ওরফে অনিক আট কাঠা এবং শেখ রাফা হাই আট কাঠার মালিক।

বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারিতে ২০১৫ সালে ৫৮টি মামলা দায়েরের আট বছর পর গত জুন মাসে এসব মামলায় ব্যাংকটির আলোচিত সাবেক চেয়ারম্যােন আবদুল হাই বাচ্চুসহ ১৪৭ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয় দুদক।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০