বাছবিচার না করে বিনিয়োগ কাম্য নয়

দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বর্তমানে ঝুঁকিতে থাকা কয়েকটি কোম্পানিতে বাছবিচার না করেই একশ্রেণির বিনিয়োগকারী উৎসাহী হচ্ছেন বলে যে সংবাদ গতকালের শেয়ার বিজে প্রকাশ হয়েছে, তা উদ্বেগের। এতে সংশ্লিষ্টদের বিনিয়োগই শুধু ঝুঁকিতে পড়বে না, বাজারও হবে প্রভাবিত। এসব শেয়ারের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধির পেছনে কারও কারসাজি রয়েছে কি না, আমরা জানি না। তবে  বিনিয়োগকারীদের অতি আশাবাদ ও ঝুঁকি গ্রহণের এমন প্রবণতা নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। এজন্য বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) প্রয়োজনীয় পদক্ষেপও প্রত্যাশিত। প্রসঙ্গত বিনিয়োগকারীদের আমরা ডিএসই পরিচালক শাকিল রিজভীর মন্তব্য স্মরণ করিয়ে দিতে চাইÑ‘বুদ্ধিমান বিনিয়োগকারীর কাজ হচ্ছে ভালো কোম্পানিতে বিনিয়োগ করা এবং যথাসময়ে মূলধন তুলে নেওয়া।’ তাহলেই কেবল তারা অর্জন করতে সক্ষম হবেন কাক্সিক্ষত রিটার্ন।

বস্তুত যে কয়েকটি কোম্পানিতে বিনিয়োগে এমন প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে, গত তিন মাসে লাগামহীনভাবে বেড়েছে ওসবের শেয়ারদর। অথচ সংশ্লিষ্ট কোম্পানির পক্ষ থেকে উল্লিখিত সময়ে পাওয়া যায়নি কোনো সংবেদনশীল তথ্য। এ থেকে স্পষ্ট, এসব কোম্পানির ব্যাপারে নিত্যদিন যেসব গুজব রটছে, তাতে কান দিচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। এমনটি যে বাজারে তালিকাভুক্ত অন্যান্য কোম্পানির শেয়ার হাতবদলের ক্ষেত্রেও ঘটছে, তা বলা বাহুল্য। বিনিয়োগকারীদের এমন প্রবণতা পুঁজিবাজারের জন্যও শঙ্কার। তাতে হঠাৎ করেই সৃষ্টি হয় অস্থিতিশীলতা। সূচক অস্বাভাবিকভাবে ওঠানামার কারণে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে সঞ্চার হয় ভীতির। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আমরা চাইবো, কারা এসব গুজব ছড়াচ্ছে তা খতিয়ে দেখুক নিয়ন্ত্রক সংস্থা। বিনিয়োগকারীদেরও ওসবে কান না দেওয়ার ব্যাপারে সতর্ক করা হোক পুনর্বার।

বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে ব্যাংকিং খাতকে বিবেচনা করা হয় ‘শক্তিশালী’ হিসেবে। নিকট অতীতে ভালো হারে লভ্যাংশ দেওয়ায় এর প্রতি বিনিয়োগকারীদের স্বভাবতই রয়েছে বাড়তি আগ্রহ। দেখা যাচ্ছে, লাগামহীনভাবে শেয়ারদর বৃদ্ধির কারণে বর্তমানে যে কয়েকটিকে বেশি ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ বিবেচনা করা হচ্ছে, সেগুলোর মধ্যে ব্যাংকিং খাতের কোম্পানি রয়েছে চারটি। বাস্তবতা হলো, এ তথ্য অনেক বিনিয়োগকারীর অজানা। জানলে এসবের ব্যাপারে তাদের উৎসাহে কিছুটা হলেও ভাটা পড়তো বলে মনে হয়। উল্লেখ্য, বাংলাদেশের পরিস্থিতিতে কোনো কোম্পানির পিই ১৫-এর উপরে চলে গেলে তাতে বিনিয়োগ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে বলে মনে করেন অনেক বিশ্লেষক। প্রতিবেদনে যেসব কোম্পানির নাম উঠে এসেছে, তার মধ্যে সিংহভাগের পিই রয়েছে ১৫-এর উপরে। বস্তুত তাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করলে এসব কোম্পানিতে বিনিয়োগের পরামর্শ কেউ দেবেন না। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকিং খাতের বেশ কয়েকটি কোম্পানি রয়েছে, যাদের পিই বর্তমানে ১৫-এর নিচে। এজন্য শুধু খাত নয়, কোম্পানি বাছাইয়ের ক্ষেত্রেও বিনিয়োগকারীকে হতে হবে সচেতন। প্রতিষ্ঠানের অবস্থা-সংক্রান্ত বিভিন্ন বিশ্লেষণ এ ব্যাপারে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা জোগায়। হালনাগাদ তথ্যও বিনিয়োগকারীদের রাখতে হবে হাতের নাগালে। সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে কোনো বিনিয়োগকারী যদি মৌলভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানি বাছাইয়ের মাধ্যমে পোর্টফোলিও গঠন করেন, তাহলে তার লোকসানের আশঙ্কা অনেকটাই কমে যায়। তাতে অকারণে কোনো শেয়ারের দরবৃদ্ধিও জনমনে সৃষ্টি করবে না সন্দেহ।

পুঁজিবাজারে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ অপেক্ষাকৃত লাভজনক বলে উল্লেখ করা হয় বিভিন্ন ক্ষেত্রে। আমাদের বাজারে এমন বিনিয়োগকারী অবশ্য কম। এর অর্থ এই নয় যে, শেয়ারদর অব্যাহতভাবে বাড়তে থাকলেও তা নিয়ে চুপচাপ থাকতে হবে। এমন পরিস্থিতিতে সঙ্গত কারণেই মুনাফা-সচেতনতা বেড়ে ওঠে অনেকের। মনে রাখা দরকার, শেয়ারের দাম যত দ্রুত বৃদ্ধি পায়, হ্রাস পায় তার চেয়ে আরও কম সময়ে। তাই হাতবদলের সিদ্ধান্ত শুধু ভেবেচিন্তে নিলেই হবে নাÑনিতে হবে যথাসময়ে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০