বিশ্বের অন্যান্য পুঁজিবাজারে যখন বাজারসংক্রান্ত কোনো নিয়মনীতি করা হয়, তার আগে অনেক গবেষণা করা হয়। বিভিন্ন খাতের অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়। তারপর সেটি বাস্তবায়ন করা হয়। কিন্তু আমাদের দেশে এ পর্যন্ত যতগুলো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তা এককভাবে। ফলে বাজারে যখন কোনো সমস্যা দেখা দেয়, তখন অন্যান্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা এ সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে। তাই বাজারসংক্রান্ত সিদ্ধান্ত সব নিয়ন্ত্রক সংস্থার একত্রে বসে নিতে হবে। একসঙ্গে বসে সিদ্ধান্ত নিলে কেউ ছোট হয়ে যাবে না। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়।
মাহমুদ হোসেনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ফিনিক্স সিকিউরিটিজ লিমিটেডের পরিচালক এ কাদের চৌধুরী এবং সিনিয়র সাংবাদিক ফজলুল বারী।
এ কাদের চৌধুরী বলেন, গত এক সপ্তাহ ধরে বাজার একটু ইতিবাচক দেখা যাচ্ছে। এটি বাজারের জন্য ভালো দিক। সামনের দিনগুলো এভাবেই বাজার ইতিবাচক ধারায় এগোলে বিনিয়োগকারী আসবেন এবং তাদের বিগত দিনের লোকসান ধীরে ধীরে পুষিয়ে নিতে পারবেন বলে আশা করি।
তিনি আরও বলেন, বিশ্বের পুঁজিবাজারে যখন বাজারসংক্রান্ত কোনো নিয়মনীতি করা হয়, তার আগে তারা অনেক গবেষণা করেন। বাজারসংশ্লিষ্ট ছাড়াও বিভিন্ন খাতের অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়। তারপর সেটি বাস্তবায়ন করা হয়। বাজারে সমস্যা হলে যাতে কেউ এটি নিয়ে কোনো কথা বলতে না পারেন। কিন্তু এ বাজারে তার ভিন্নতা দেখা যায়। এ পর্যন্ত যতগুলো বাজারসংশ্লিষ্ট সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তা এককভাবে। ফলে বাজারে যখন কোনো সমস্যা দেখা দেয়, তখন অন্যান্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা এটি নিয়ে সমালোচনা করে। তাই বাজারসংক্রান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নিতে হলে সব ধরনের নিয়ন্ত্রক সংস্থার সঙ্গে একত্রে বসে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। একসঙ্গে বসে সিদ্ধান্ত নিলে কেউ ছোট হয়ে যাবে না। বরং বাজারের জন্য সেটি ভালো। আসলে এখানে মানসিকতার একটা বিষয় রয়েছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থায় যারা রয়েছে তাদের মধ্যে এ বিষয়টির অভাব রয়েছে। তাদের মানসিকতা পরিবর্তন করতে হবে। যদি পরিবর্তন করা না যায়, তাহলে বাজারের জন্য খুবই খারাপ হবে।
ফজলুল বারী বলেন, এখন বাজার ইতিবাচক ধারায় এগোচ্ছে। এ ধারা বজায় রাখতে হলে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে আরও স্বচ্ছভাবে কাজ করতে হবে। গত কিছুদিন ধরে দেখা যাচ্ছে, রেকর্ড ডেটের পরও কোম্পানির শেয়ারদর বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা বাজারকে স্থিতিশীল রাখবে। তবে কারসাজি বন্ধ করতে হবে। বাজারে অর্থপ্রবাহ বাড়াতে হবে এবং প্রতিযোগিতামূলক করতে হবে। তাহলে দেখা যাবে অর্থের অভাব হবে না বরং বিনিয়োগ আরও বেড়ে যাবে। এর সঙ্গে যদি ব্যাংক ও আর্থিক খাত ভালোর দিকে যায়, সূচক ও টার্নওভার বেড়ে যাবে। যদি সূচক ও টার্নওভার বেড়ে যায় এমনিতেই বিনিয়োগকারী আসবেন।
তিনি আরও বলেন, বিশ্বের অন্যান্য পুঁজিবাজার যারা পরিচালনা করেন অর্থাৎ নিয়ন্ত্রক সংস্থায় যারা থাকেন, তারা সবাই বাজারসংশ্লিষ্ট অভিজ্ঞ। কিন্তু আমাদের পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থায় প্রথমই গলদ রয়েছে। কারণ যারা বাজার পরিচালনা করেন, তারা কেউ বাজারে অভিজ্ঞ লোক নন। তারা বাজারবহির্ভূত কর্মকর্তা। বিশেষ করে এখানে আমলা, শিক্ষক বা বাজার সম্পর্কে কোনো কিছু বোঝেন না তাদের বসানো হয়। আবার যারা আসেন তারা বিভিন্ন প্রশিক্ষণে যান। এটা বাজারের কোনো কাজে আসে না। এসব কর্মকর্তার কাছ থেকে বাজারে ভালো কিছু আশা করা যায় না। এটা আসলে কাম্য নয়।
শ্রুতিলিখন: শিপন আহমেদ