বাজারের উন্নয়নে সুশাসন বাড়াতে হবে

ডিমিউচুয়ালাইজেশনের পর পুঁজিবাজারে কিছু কিছু জায়গায় অগ্রগতি হয়েছে। ইতোমধ্যে সাংহাই ও সেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জ ডিএসইর স্ট্রাটেজিক পার্টনার হয়েছে এবং এসএমই বোর্ড করা হয়েছে। তবে এখনও এর কার্যকারিতা শুরু হয়নি। ডিমিউচুয়ালাইজেশনের পর বাজারে যতটা অগ্রগতি হওয়ার কথা ছিল তা হয়নি। বাজারের উন্নয়ন করতে হলে ডিএসইতে রিসার্স টিম এবং সুশাসন বাড়াতে হবে। কারণ সময় এসেছে পুঁজিবাজারকে শক্তিশালী বাজারে পরিণত করার। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়। আহমেদ রশীদ লালীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অর্থনীতিবিদ ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম, ডিএসইর বর্তমান পরিচালক শাকিল রিজভী, এবিবির সাবেক সভাপতি নুরুল আমিন এবং বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. ছায়েদুর রহমান।
ড. এবি. মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে আট দশমিক দুই শতাংশ, যা ২০১৮-১৯ অর্থবছরের চেয়ে একটু বেশি। গত অর্থবছরে আট দশমিক ১৩ শতাংশ ধরা হয়েছিল যা অন্যান্য সূচকের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। যেমন আগের অর্থবছরের তুলনায় রেমিট্যান্স অনেক কম আবার বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ প্রবৃদ্ধি নেমে এসেছে ১২ শতাংশে কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৬ দশমিক পাঁচ শতাংশ। ব্যাংক থেকে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ কমে গেছে এবং মূলধনি যন্ত্রপাতির আমদানিও কমে গেছে। চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে আট দশমিক দুই শতাংশ ধরা হয়েছে। এটি অতিরঞ্জিত মনে হচ্ছে। এখন রফতানির গ্রোথ ১১ শতাংশের বেশি কিন্তু এ গ্রোথের ধারাবাহিকতা থাকবে কিনা সন্দেহ রয়েছে। আবার রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধি বাড়ার সম্ভাবনা আছে বলে মনে হচ্ছে না। গত কয়েক বছর ধরে বিশ্বে মূল্যস্ফীতি কমে আসছে। দেশে মূল্যস্ফীতি একটু সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বেশকিছু ব্যাংকে তারল্য সংকট, প্রভিশন ঘাটতি এবং অনেক খেলাপি ঋণ রয়েছে। কিন্তু চলতি বছর বাজাটে খেলাপি ঋণ নিয়ে কোনো সুস্পষ্ট বক্তব্য শোনা যায়নি। আবার রাজনৈতিক প্রভাব ঘাটিয়ে ঋণ দেওয়া ও আদায়ের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি, আইনি প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতা অর্থাৎ অর্থঋণ আদালতে হাজার হাজার কোটি টাকা আটকে রয়েছে। এ বিষয়গুলো সমাধা করতে না পারলে ভবিষ্যতে আরও সমস্যা বাড়বে।
শাকিল রিজভী বলেন, সময় এসেছে পুঁজিবাজারকে শক্তিশালী বাজারে পরিণত করার। পুঁজিবাজারে ডিমিউচুয়ালাইজেশনের পর কিছু কিছু জায়গায় অগ্রগতি হয়েছে। ইতোমধ্যে সাংহাই ও সেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জ ডিএসইর স্ট্রাটেজিক পার্টনার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে এবং এসএমই বোর্ড করা হয়েছে তবে এখনও এর কার্যকারিতা শুরু হয়নি। ডিমিউচুয়ালাইজেশনের পর বাজারে যতটা অগ্রগতি হওয়ার কথা ছিল তা হয়নি। বাজারের উন্নয়ন করতে হলে ডিএসইতে রিসার্স টিম এবং সুশাসন বাড়াতে হবে। এতে বিভিন্ন সমস্যা বেরিয়ে আসবে যা বাজারের জন্য ভালো হবে। বিনিয়োগকারীরাও উপকৃত হবে।
নুরুল আমিন বলেন, গত দুবছর ধরে ব্যাংক খাতে তারল্য সংকটের যে অবস্থা তা আগামী ছয় মাসেও উন্নতি হচ্ছে না। গত দু’দিন আগে একটি পত্রিকায় ব্যাংকের প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়, সেখানে দেখানো হয় গত বছরের চেয়ে এ বছর কোন ব্যাংক কত ভালো করেছে। তবে সেখানে ব্যাংকের মুনাফা ইতিবাচক ছিল। কিন্তু গত দুদিনে পুঁজিবাজার অন্তর্ভুক্ত ব্যাংকগুলোর বেশিরভাগের শেয়ারদর কমেছে। ব্যাংকগুলোর মুনাফা হওয়া সত্ত্বেও বিনিয়োগকারীদের আস্থা নেই। এর মূল কারণ খেলাপি ঋণ, প্রভিশন ঘাটতি এবং তারল্য সংকট প্রভৃতি সমস্যা। আবার ব্যাংকের সুদহার সরকার এবং মালিক পক্ষ নয়-ছয় করার জন্য চেষ্টা করছে। যদি ৯ শতাংশে ঋণ দেওয়া যায় সেক্ষেত্রে কস্ট অব ডুয়িং বিজনেসের জন্য ভালো হবে। কিন্তু এখনও বিষয়টি বাস্তবায়ন করতে পারিনি। অর্থাৎ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো মানলেও বেসরকারি ব্যাংকগুলোকে মানাতে পারিনি।
মো. ছায়েদুর রহমান বলেন, একই উদ্দেশ্যে দুই স্টক এক্সচেঞ্জকে ডিমিউচুয়ালাইজেশন করা হয়েছে। দুই পুঁজিবাজার গতিশীল, গভীরতা বাড়ানো এবং বিনিয়োগকারীর স্বার্থরক্ষার জন্য করা হয়েছে। ইতোমধ্যে বেশকিছু জায়গায় পরিবর্তন আনা হয়েছে এবং কিছু কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তবে এখানে সুশাসন, মার্কেটিং ও রিসার্স টিম বিভাগে প্রত্যাশা অনুযায়ী উন্নয়ন হয়নি। বাজার এখন একটা পর্যায় এসেছে। আশা করি বাকি কাজগুলোও সম্পন্ন করা হবে।

শ্রুতিলিখন: শিপন আহমেদ

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০