মো. আসাদুজ্জামান নূর: বছরের শুরু থেকেই সূচক বেড়ে লেনদেন হচ্ছে পুঁজিবাজারে। গতকাল বুধবার প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক বেড়েছে ৩৩ পয়েন্ট। এ নিয়ে চলতি সপ্তাহে টানা চার দিন আর বছরের ১৪ কার্যদিবসের মধ্যে ১২ দিনই বাড়ল সূচক। সেইসঙ্গে বেড়েছে লেনদেনও।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বছরের শুরু থেকেই ঊর্ধ্বমুখী ধারায় পুঁজিবাজারে লেনদেন হচ্ছে। আগের বছরের শেষ দিকে লেনদেনের যে খরা দেখা গেছে, তা কাটিয়ে উঠতে শুরু করেছে। ফলে পুঁজিবাজারের এ ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা বিনিয়োগকারীদের সক্রিয় করে তুলেছে। বাড়িয়েছে শেয়ার ক্রয় প্রবণতা, যা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে লেনদেনে।
গত বছরের শেষ কার্যদিবসে ডিএসইতে লেনদেন হয়েছিল ৯২১ কোটি ৮১ লাখ টাকা। সেখান থেকে বেড়ে বুধবার দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৭৩৫ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল এক হাজার ৭১২ কোটি ৮৭ লাখ টাকা।
চলতি বছর একেক দিন বিমা খাত, পরে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, প্রকৌশল, খাদ্য, ওষুধ ও রসায়নে আগ্রহ দেখা গেছে। প্রতি দিনই বিবিধ খাত হয় লেনদেনের শীর্ষে বা দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল। কয়েক দিন ধরে বস্ত্র খাতে আগ্রহ ধীরে ধীরে বাড়ছিল। গতকাল তা বেড়ে ২০০ কোটি টাকার আশেপাশে ছিল। লেনদেনের পাশাপাশি বেড়েছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারদরও।
গতকাল বস্ত্র খাতে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহে ৬৮ শতাংশ কোম্পানির শেয়ারদর বেড়েছে, কমেছে ২২ শতাংশ কোম্পানির। সবচেয়ে বেশি কোম্পানির দর অবশ্য বেড়েছে প্রকৌশল এবং ওষুধ ও রসায়ন খাতে। এর মধ্যে প্রকৌশলে ৮৪ শতাংশ এবং ওষুধ খাতের ৮১ শতাংশ কোম্পানির শেয়ারে অর্থ যোগ হয়েছে।
দিনের সবচেয়ে বেশি লেনদেন হওয়া খাত অবশ্য ছিল বিবিধ। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ওষুধ ও রসায়নের সঙ্গে বস্ত্রের অবস্থান ছিল কাছাকাছি। বিবিধ খাতে লেনদেন হয়েছে সবচেয়ে বেশি ২৭৮ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ওষুধ ও রসায়নে হাতবদল হয়েছে ১৯৮ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। তৃতীয় অবস্থানে থাকা বস্ত্রে হাতবদল হয়েছে ১৯৭ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। চামড়া, প্রকৌশল, বিমা, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতেও লেনদেন ছাড়িয়েছে ১০০ কোটি টাকার বেশি।
গতকাল লেনদেন হওয়া সিকিউরিটিজের মধ্যে দর বেড়েছে ১৬৯টির, কমেছে ১৭০টির এবং অপরিবর্তিত ছিল ৪০টির। দিন শেষে সূচকে যোগ হয়েছে ৩৩ পয়েন্ট। ডিএসইএক্স অবস্থান করছে সাত হাজার ৮৯ পয়েন্টে, যা গত দুই মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসইএস ২ ও ডিএস৩০ সূচক বেড়েছে ১৮ পয়েন্ট।
গতকাল সূচক বৃদ্ধিতে প্রধান ভূমিকায় ছিল বেক্সিমকো গ্রুপ। গত দুই থেকে তিন মাস ধরে এ গ্রুপের কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর ক্রমেই কমছিল। এর মধ্যে এক দিনে বাড়ল চারটি কোম্পানির দর। তবে কোম্পানিটির ইসলামি সুকুক বন্ড অভিহিত মূল্যের আরও একটু নিচে নেমে গেছে।
সূচক যত পয়েন্ট বেড়েছে, তার অর্ধেকের বেশি বাড়িয়েছে বেক্সিমকো একাই। টানা দরপতনের মধ্যে থাকা এ কোম্পানিটির শেয়ারদর এক দিনেই বেড়েছে পাঁচ দশমিক ২৭ পয়েন্ট। এতে সূচক যোগ হয়েছে ১৮ দশমিক ৯ পয়েন্ট। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা এসিআই লিমিটেডের শেয়ারদর সাত দশমিক ৫৭ শতাংশ বাড়ার কারণে সূচকে যোগ হয়েছে চার দশমিক ৫৯ পয়েন্ট। বেক্সিমকো গ্রুপেরই আরেক কোম্পানি বেক্সিমকো ফার্মার দর এক দশমিক ৭৬ শতাংশ বাড়ার কারণে সূচকে যোগ হয়েছে চার দশমিক তিন পয়েন্ট।
এছাড়া তিতাস গ্যাস, ব্র্যাক ব্যাংক, গ্রামীণফোন, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন, ইউনিলিভার, স্কয়ার ফার্মা ও লিনডে বিডিও সূচকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পয়েন্ট যোগ করেছে। সব মিলিয়ে এই ১০টি কোম্পানিই সূচকে যোগ করেছে ৪৬ পয়েন্ট।
বিপরীতে সবচেয়ে বেশি সাত দশমিক ৪৩ পয়েন্ট সূচক কমিয়েছে রবি। কোম্পানিটির শেয়ারদর কমেছে এক দশমিক ২৬ পয়েন্ট। এছাড়া ইউনাইটেড পাওয়ার, লাফার্জহোলসিম সিমেন্ট, ওয়ালটন, বিএসআরএম স্টিল, ট্রাস্ট ব্যাংক, অলিম্পিক একসেসোরিজ, ইস্টার্ন লুব্রিকেন্ট, জিপিএইচ ইস্পাত ও ডাচ্-বাংলা ব্যাংকও সূচক কিছুটা কমিয়েছে। সব মিলিয়ে এই ১০টি কোম্পানি সূচক কমিয়েছে ২২ দশমিক শূন্য এক পয়েন্ট।