Print Date & Time : 19 June 2025 Thursday 10:03 pm

বাজারে আস্থা না ফেরার কারণ নানা ধরনের কারসাজি

প্রতি রবি থেকে বৃহস্পতিবার পুঁজিবাজারের বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে এনটিভি ‘মার্কেট ওয়াচ’ অনুষ্ঠানটি সম্প্রচার করে। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ বিবেচনায় তার গুরুত্বপূর্ণ অংশ নিয়ে শেয়ার বিজের নিয়মিত আয়োজন ‘এনটিভি মার্কেট ওয়াচ’ পাঠকের সামনে তুলে ধরা হলো:

পুঁজিবাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা না থাকার মূল কারণ মানুষ বিশ্বাস করে এখনও বাজারে বিভিন্ন কারসাজি হচ্ছে এবং নানা উপায়ে সেটি করা হচ্ছে। ব্রোকারেজ হাউজগুলোর মাধ্যমে সাজানো লেনদেন করা ছাড়াও সূচক কৃত্রিমভাবে বাড়ানো এবং স্বল্প লেনদেন করেই তা বাড়ানো হচ্ছে। বিনিয়োগকারীদের আস্থার জায়গায় এ ধরনের সমস্যাগুলো রয়েই গেছে। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়। হাসিব হাসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আলোচক ছিলেন এনবিইআরের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আহসানুল আলম পারভেজ এবং হাইডেলবার্গ সিমেন্টের পরিচালক মো. গোলাম ফারুক।
আহসানুল আলম পারভেজ বলেন, পুঁজিবাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা না থাকার মূল কারণ হচ্ছে, মানুষ বিশ্বাস করে এখনও বাজারে বিভিন্ন কারসাজি হচ্ছে এবং নানা উপায়ে সেটি করা হচ্ছে। ব্রোকারেজ হাউজগুলোর মাধ্যমে সাজানো লেনদেন করা ছাড়াও সূচক কৃত্রিমভাবে বাড়ানো হচ্ছে। স্বল্প লেনদেন করেই তা বাড়ানো হচ্ছে। বিনিয়োগকারীদের আস্থার জায়গায় এ ধরনের সমস্যাগুলো রয়েই গেছে। ফলে যারা কারসাজি করছে বিএসইসি তাদের ধরা তো দূরের কথা সেদিকে তাকায়ও না। শেয়ারদর বাড়ার ক্ষেত্রে কিছু কোম্পানির বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করে মানুষকে সান্ত¡না দেওয়ার চেষ্টা করে মাত্র। আর এই কাজগুলো তারা স্বার্থ বা চাপ নাকি দুটোর জন্যই করে, সেটাই আসলে চিন্তার বিষয়। আবার অনেকেই বলেন, তদন্তগুলো তারা কেন গোপনে করে না এবং তদন্তের আগেই মানুষ কীভাবে বিষয়গুলো জেনে যায়? এ ক্ষেত্রে আমি মনে করি তদন্তগুলো গোপনে বা প্রকাশ্যে করলেও তা বাজারের কোনো কাজে আসবে না। তাই বাজার সম্প্রসারণের জন্য বিভিন্ন কারসাজি বন্ধ করা খুবই জরুরি।
মো. গোলাম ফারুক বলেন, যে কোনো ক্যাপিটাল মার্কেট দুই ধরনের হয়ে থাকে। একটি অরগানিক অন্যটি স্পেকুলেটিভ। অর্গানিক হচ্ছে যারা বাজার বিশ্লেষণ করে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ করেন। আর স্পেকুলেটি হচ্ছে, গুজবনির্ভর বাজার। আর আমাদের বাজার প্রকৃতপক্ষেই গুজবনির্ভর। যেমন ব্যাংকের ক্ষেত্রে দেখা যায়, একটি নির্দিষ্ট গ্রুপ ব্যাংকগুলোর শেয়ার কিনছে। ফলে কোনো একটি ব্যাংককের শেয়ারদর যখন এনএভির নিচে নেমে যায় তখন পৃথিবীর সব জায়গায় অন্যরা সেটিকে কভার করে। আমাদের দেশে হয়তো একটি নির্দিষ্ট গ্রুপ অনেকগুলো ব্যাংকের মধ্যে ঢুকে পড়েছে। আর তারা ঢোকা মানে ওই ব্যাংকের শেয়ারদর বাড়বে। তিনি বলেন, বাজারে বেশ কিছু শেয়ার আছে যাদের দর অনেক বেড়েছে, কিন্তু তাদের দর বাড়ার কোনো যুক্তিসংগত কারণ নেই। তাদের ব্যবস্থাপনা, কর্মক্ষমতা, লাভজনকতা বা টার্নওভারসহ কোথাও কোনো পরিবর্তন নেই, তারপরও দর বাড়ছে। সেখানে খবর ছিল শুধু তাদের ছেলে বা মেয়ের নামে শেয়ার স্থানান্তর হচ্ছে, কিন্তু এই খবরে তো আর শেয়ারদর এতটা বাড়ার কথা নয়। হয়তো এখানে কোনো কারসাজি হয়েছে এবং এ বিষয়গুলো বিএসইসির খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ নেওয়া দরকার বলে মনে করি। তাছাড়া আমাদের বাজারের গভীরতা অনেক কম এবং এটিকে আরও অনেক বেশি সম্প্রসারণের ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। আর এর জন্য বিভিন্ন যন্ত্রাংশ এনে বাজারকে ঢেলে সাজাতে হবে এবং অনেক আকর্ষণীয় করে তুলতে হবে, যাতে নতুন বিনিয়োগে উৎসাহিত হয় বিনিয়োগকারীরা।

শ্রুতিলিখন: রাহাতুল ইসলাম