অনেকে বলেন, এখনই বিনিয়োগের সময়। এখন অনেক কম দরে ভালো মানের শেয়ার কেনা যাবে। কিন্তু তাতেও কোনো বিনিয়োগকারী ভরসা পাচ্ছেন না। কারণ, প্রতিনিয়ত শেয়ারের দর কমে যাচ্ছে। এক সময় দেখা যেত, বিদেশি বিনিয়োগ এসে বাজারকে অনেক চাঙা করেছে। এখন তাও দেখা যায় না। আসলে এখন আর বিনিয়োগকারীর আস্থা নেই। আস্থা ফেরাতে হলে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়। মাহমুদ হোসেনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মার্কেন্টাইল ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান এম আমানুল্লাহ ও আইসিএবির কাউন্সিল মেম্বার মো. শাহাদাৎ হোসেন।
এম আমানুল্লাহ বলেন, পুঁজিবাজার এমন একটি স্থান, যেখানে ওঠা-নামা থাকবেই। এক সময় বাজার খারাপের দিকে যাবে; আবার সেখান থেকে ভালো অবস্থানে ফিরে আসবেÑএটাই বাজারের নিয়ম। এটি সব পুঁজিবাজারেই থাকে; কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে আমাদের পুঁজিবাজারের অবস্থা ভালো দেখা যাচ্ছে না এবং বিনিয়োগকারীদের ভালো কোনো আশাও দিতে পারছি না। আবার অনেকে বলেন, এখনই বিনিয়োগের সময়। এখন অনেক কম দরে ভালো মানের শেয়ার কেনা যাবে। কিন্তু তাতেও কোনো বিনিয়োগকারী ভরসা পাচ্ছেন না। কারণ, প্রতিনিয়ত শেয়ারের দর কমে যাচ্ছে। বাজারে তারল্য সংকট একেবারে নেইÑসেটা বলব না। তবে এর মূল কারণ ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ। এ খাতে অনেক বিনিয়োগ কমে গেছে। বিদেশি বিনিয়োগও তেমন বাড়ছে না। এক সময় দেখা গেছে, বিদেশি বিনিয়োগ এসে বাজারকে অনেক চাঙা করেছে। এখন সেটা দেখা যায় না। আসলে বিনিয়োগকারীর আস্থা নেই। আস্থা ফেরাতে হলে বাজারে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।
তিনি আরও বলেন, দেশের ব্যাংকের সুদহার অনেক বেশি। বিশ্বের কোনো দেশে এমন উচ্চ সুদহার নেই। আর বেশিরভাগ কল-কারখানা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তা পরিচালনা করে থাকে। তারা ওই ঋণ পরিশোধ করতে করতেই মুনাফা থেকে লোকসানে চলে আসে। তারা যদি ঋণ না নিয়ে নিজস্ব অর্থে কল-কারখানা করত, তাহলে অনেক মুনাফা করতে পারত।
মো. শাহাদাৎ হোসেন বলেন, পুঁজিবাজার এখন ভালো অবস্থানে নেই। এর কারণ বিনিয়োগকারীর আস্থার অভাব। আরেকটি বড় বিষয় হচ্ছে, বাজারের ভালো-মন্দ নির্ভর করে বিনিয়োগকারীর চাহিদা ও পণ্য সরবরাহের ওপর। কিন্তু চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে অনেক ব্যবধান রয়েছে। আবার পুঁজিবাজার গতিশীল রাখতে ব্যাংক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। ব্যাংক বড় অঙ্কের অর্থ বাজারে বিনিয়োগ করত; কিন্তু ব্যাংক এখন সেটি পারছে না। আসলে একদিকে ব্যাংকে চলছে তারল্য সংকট, অন্যদিকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েই চলেছে। এছাড়া ব্যাংক খাতে আরও অনেক সমস্যা রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সামগ্রিক অর্থনীতি নিয়ে অনেকে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন। রেমিট্যান্স ছাড়া অর্থনীতির অন্য সূচকগুলো অনেক কমেছে। আসলে আমাদের বড় সমস্যা হচ্ছে, আমরা একটি নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর বেশি নির্ভরশীল। এ কারণে অর্থনীতির সূচকগুলো কমে যাওয়া বেশি দেখা যায়। এটি উত্তরণে পুঁজিবাজারে পণ্যের বৈচিত্র্য আনতে হবে। আসলে কোনো একটি নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর নির্ভর করা উচিত নয়।
শ্রুতিলিখন: শিপন আহমেদ