Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 10:37 am

বাজারে দুষ্টচক্রের একতা ভেঙে শাস্তি দিতে হবে

বর্তমানে বাজার যে অবস্থানে এসেছে, তাতে প্রণোদনা দিয়ে একে ভালো করা যাবে না। বর্তমান অর্থমন্ত্রী এক সময় বলেছিলেন, এ বাজারে ৫০ হাজার কোটি টাকা দিলেও খেয়ে ফেলবে। আসলে এখানে দুষ্টচক্রের মূল হোতাদের ধরতে হবে। বাজারে এখন সবাই মিলেমিশে খাই, এ রকম প্রবণতা হয়ে  দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ দুষ্টচক্রের একতা ভাঙতে হবে। তাদের শাস্তি দিতে হবে। এত মূল্যবোধহীন হয়ে পড়লে বাজার এর চেয়ে বেশি দূর এগোবে না। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়।

হাসিব হাসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পুঁজিবাজার বিশ্লেষক সাব্বির আহমেদ, এফসিএ এবং ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) প্রেসিডেন্ট সাইফ ইসলাম দিলাল।

সাব্বির আহমেদ বলেন, পুঁজিবাজার-সংক্রান্ত অনেক আইনকানুন করা হয়েছে। নিঃসন্দেহে এ আইনকানুনগুলো অনেক ভালো। কিন্তু ওই আইনকানুন যদি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা না হয় বা না করে সেটি বিনিয়োগকারীর কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। বিনিয়োগকারীর আস্থা তৈরি করতে হবে। শুধু সুন্দর আইনকানুন করে ফ্রেমে সাজিয়ে রাখলে হবে না বা কাগজে-কলমে লেখা থাকলেই চলবে না। এটি বাস্তবায়ন করতে হবে। 

তিনি আরও বলেন, আমাদের এক সময় কিছুই ছিল না। স্বাধীনতার পর দেশের অর্থনীতি আজ এ অবস্থানে এসেছে। জনগণের মধ্যে কোনো সমস্যা নেই। তারা দেশের উন্নয়নে সহযোগিতা করতে চায়। আবার যারা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে রয়েছেন, তাদের মধ্যে অনেক ভালো লোক রয়েছেন। কিন্তু এখানে কিছু দুষ্ট ও স্বার্থান্বেষী লোক রয়েছেন। এরা সব সময় সুবিধা খোঁজেন। এরা নিজেদের স্বার্থ ছাড়া কিছুই বোঝেন না। এসব ব্যক্তিদের খুঁজে বের করতে হবে। যারা দেশপ্রেমিক এবং দেশের জন্য কাজ করতে চান, তাদের সামনে নিয়ে আসতে হবে।

সাইফ ইসলাম দিলাল বলেন, ১৯৯৬ সালে থেকে পুঁজিবাজার দেখে আসছি। যখনই বাজার-সংক্রান্ত কোনো ইস্যু তৈরি হয়, আবার সেটি কিছুদিন পর ধামাচাপা দেওয়া হয়। আসলে বাজারকে এগিয়ে নিতে হলে ইতিবাচকভাবে এগিয়ে আসতে হবে। যাতে বিনিয়োগকারীরা পুঁজি হারিয়ে পথে না বসেন। যদি বাজারে এভাবে পতন হতে থাকে, সেক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীও নিঃস্ব হয়ে যাবে। অন্যদিকে অর্থনৈতিক উন্নয়নের এত বড় একটি খাত নড়বড়ে রেখে দেশের অর্থনীতি গতিশীল রাখা সম্ভব হবে না। আবার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাজারের বেশকিছু বিষয় সংস্কার করেছে। এ সীমিত সংস্কার বাজার স্বাভাবিক করার জন্য যথেষ্ট নয়। তাই বাজারকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে হলে আরও উদ্যোগী হতে হবে এবং সংস্কার করতে হবে। আর এটি সরকার এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থাকেই করতে হবে। 

তিনি আরও বলেন, এখন বাজার যে অবস্থানে এসেছে, এখানে অর্থ ও প্রণোদনা দিয়ে ভালো করা যাবে না। বর্তমান অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, এ বাজারে ৫০ হাজার কোটি টাকা দিলেও খেয়ে ফেলবে। আসলে এখানে মূল হোতাদের ধরতে হবে। সবাই মিলেমিশে খাই, বাজারে এখন এ রকম প্রবণতা দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ দুষ্টচক্রের একতা ভাঙতে হবে। তাদের শাস্তি দিতে হবে। এত মূল্যবোধহীন হয়ে পড়লে বাজার এর চেয়ে বেশি দূর এগোবে না। আমরা শুধু বিনিয়োগকারীদের দোষারোপ করি। একটা সময় ব্যাংক খাত অনেক খারাপ অবস্থানে ছিল। তখন একটি ব্যাংক সংস্কার কমিটি গঠন করা হয়েছিল। সে সংস্কার কমিটির সুপারিশে ব্যাংক খাত আজ এ অবস্থানে এসেছে। তাই ব্যাংক সংস্কার কমিটির মতো এখন পুঁজিবাজার সংস্কার কমিটি করা দরকার। এটি যদি করা যায় তাহলে বাজার ভালো হবে মনে করি।  আমরা পদ্মা সেতু, মেট্রোরেলসহ আরও অনেক অবকাঠামো উন্নয়নের কথা বলি। যদি এসব অবকাঠামো উন্নয়ন এগিয়ে নিতে হয়, সেক্ষেত্রে আগে ব্যাংক, আর্থিক এবং পুঁজিবাজারের উন্নয়ন করতে হবে।

শ্রুতিলিখন: শিপন আহমেদ