প্রতি রবি থেকে বৃহস্পতিবার পুঁজিবাজারের বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে এনটিভি ‘মার্কেট ওয়াচ’ অনুষ্ঠানটি সম্প্রচার করে। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ বিবেচনায় তার গুরুত্বপূর্ণ অংশ নিয়ে শেয়ার বিজের নিয়মিত আয়োজন ‘এনটিভি মার্কেট ওয়াচ’ পাঠকের সামনে তুলে ধরা হলো:
পুঁজিবাজার গত কয়েক বছরের তুলনায় ভালো অবস্থানে গেলেও একে স্বাভাবিক বলা যায় না। কারণ ভালো কোম্পানিগুলোকে এখনও পুঁজিবাজারে আনা যাচ্ছে না। বাজারে ভালো কোম্পানির অভাব রয়েই গেছে। আমাদের বাজারে বন্ড বা মিউচুয়াল ফান্ডগুলো কোনো ভ‚মিকা রাখতে পারছে না। যারা মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করেছেন, তাদের অবস্থা ভালো নয়। ৩৬টি মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে মাত্র সাতটির দর ফেসভ্যালুর ওপরে। বাকিগুলো ফেসভ্যালুর নিচে। ৩০টি ব্যাংকের মধ্যে সাতটির দর ২০ টাকার নিচে এবং কয়েকটির দর ২০ টাকা ছুঁইছুঁই। একে ভালো বাজার বলা যায় না। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে এ বিষয়টি আলোচিত হয়। হাসিব হাসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আলোচক ছিলেন অর্থনীতি বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান এবং ফিনিক্স সিকিউরিটিজ লিমিটেডের সাবেক এমডি এ কাদির চৌধুরী।
মিজানুর রহমান বলেন, শেয়ারবাজারের জন্য প্রাসঙ্গিক বিষয় হচ্ছে সামষ্টিক অর্থনীতির কিছু সূচকে উন্নতি হয়েছে সাম্প্রতিক সময়ে, যেগুলো পুঁজিবাজারকে প্রভাবিত করে। বর্তমানে ট্রেড ব্যালান্স ও কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ব্যালান্স ঋণাত্মক অবস্থায় রয়েছে। আমাদের এক্সপোর্ট প্রবৃদ্ধি স্থবির হয়ে পড়েছে ও রেমিট্যান্স প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক অবস্থায় চলে গেছে। আর এর জন্য দায়ী মুদ্রার প্রকৃত বিনিময় হার বৃদ্ধি। গত আট বছরে মুদ্রার প্রকৃত বিনিময় হার বৃদ্ধি পেয়েছে ৫০-৬০ শতাংশ। এ সময়ে বাংলাদেশে অনেক বেশি মূল্যস্ফীতি হয়েছে। যে কারণে রফতানিকারকরা হারাচ্ছে মূল্য প্রতিযোগিতা সক্ষমতা এবং রেমিট্যান্স যারা পাঠায় তারা জানে টাকা ডলার এক্সচেঞ্জ রেটটি ৭৯ থেকে ৮০ টাকার মধ্যে গত ৮-৯ বছর ধরে ঘুরপাক খাচ্ছে। মানে টাকা নামমাত্র অতিমূল্যায়িত। আর নামমাত্র হওয়ায় এটি আমাদের দুটি অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিকে আঘাত করছে। একটি রফতানি প্রবৃদ্ধি অন্যটি রেমিট্যান্স। ফলে আমাদের কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ব্যালান্সে ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিকে যদি সাত-আট শতাংশ প্রবৃদ্ধি টেরিটরিতে নিতে চাই তাহলে এ ভারসাম্যহীনতা দূর করাটি খুব জরুরি। একই সঙ্গে মূল্যস্ফীতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। পুঁজিবাজারের জন্য ব্যাংক খাতের বড় সমস্যা এক্সপোজার সীমা না। এ খাতের বড় সমস্যা হচ্ছে তার লোন বা অ্যাসেটের আরোপিত বৈশিষ্ট্য। গত সাত-আট বছরে ব্যাংক খাতে অ্যাসেটের আরোপিত বৈশিষ্ট্যে যে ধারাবাহিক পতন হয়েছে, এটি একটি বড় গভর্নেন্স সংকট। প্রতিটি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে কোনো স্বচ্ছতা নেই। সেখানে ডিপজিটর বা সব বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণের কোনো পদ্ধতি নেই। ব্যাংক খাতের সুশাসন, ডিপজিটরদের স্বার্থ সংরক্ষণ, ব্যাংকের ব্যবস্থাপনাকে বোর্ড থেকে আলাদা করা, অডিট কমিটিগুলোকে স্বাধীন করা, পরিচালকদের স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেওয়াÑএসব বিষয় যদি করতে না পারি তাহলে এ খাতে একটি বড় বিপর্যয় অপেক্ষা করছে বলে মনে করি।
এ কাদির চৌধুরী বলেন, ২০১৩-১৪ সালের চেয়ে বর্তমান পুঁজিবাজার অনেক ভালো। আগে আমাদের বার্ষিক বাজেট কম ছিল। বর্তমানে আগের তুলনায় অনেক বেশি বাজেট। স্বাভাবিকভাবেই বাজারে ক্যাশ ইনফ্লো অনেক বেড়ে গেছে এবং মানুষের হাতে অনেক টাকা-পয়সা হয়েছে। তবে বাজার স্বাভাবিক নয়। আমাদের প্রত্যাশা ছিল বাজারের এ বাড়ন্ত অবস্থায় ভালো কোম্পানিগুলো বাজারে আসবে এবং আসা উচিত ছিল। কিন্তু তা দুর্ভাগ্যবশত হয়নি। কিছু কোম্পানি বাদে বাজারে যে কোম্পানিগুলো আছে তাদের তেমন কোনো প্রভাব বা পরিচিতিও নেই। কিন্তু তারা তালিকায় পরিণত হয়। তাছাড়া আমাদের বাজারে অন্যান্য প্রডাক্ট যেমন বন্ড, বড় বড় ফান্ড এবং আরও কিছু বিষয় অনুপস্থিত। যেগুলো অন্যান্য দেশের বাজারকে প্রবলভাবে প্রভাবিত করে। আর এসব আমাদের বাজারে নেই। এ বাজারে যারা মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করেছেন, তাদের অবস্থা ভালো নয়। ৩৬টি মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে মাত্র সাতটির দর ফেসভ্যালুর ওপরে। বাকিগুলো ফেসভ্যালুর নিচে। ৩০টি ব্যাংক বাজারে তালিকাভুক্ত আছে। এর মধ্যে সাতটির দর ২০ টাকার নিচে আছে এবং কোনোটি ২০ টাকা ছুঁইছুঁই। আর এটিকে আমি বাজারের জন্য ভালো দিক বলব না।
শ্রুতি লিখন: রাহাতুল ইসলাম