Print Date & Time : 19 June 2025 Thursday 4:28 pm

বাজারে ভালো চা পাতা কম সাবারি গ্রিনটি সর্বোচ্চ দামে বিক্রি

রুপম আচার্য্য, মৌলভীবাজার: মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলে দেশের দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক চা নিলাম কেন্দ্রে চলতি অর্থবছরের ১৩তম চা নিলাম অনুষ্ঠিত হয়েছে। এবারের চা নিলামে এম আর খান চা বাগানের চা পাতা সর্বোচ্চ দামে বিক্রি হয়, যার প্রতি কেজির বাজারদর ছিল ২৭২ টাকা। এদিকে সাবারি টি প্লান্টেশন কোম্পানি লিমিটেডের গ্রিনটিও সর্বোচ্চ দামে বিক্রি হয়, যার প্রতি কেজি বিক্রয়দর ছিল এক হাজার ১৮০ টাকা। গতকাল বুধবার শ্রীমঙ্গল চা নিলাম কেন্দ্রের অস্থায়ী অফিস জেলা পরিষদ অডিটোরিয়ামের হলরুমে এ নিলাম অনুষ্ঠিত হয়। তবে চট্টগ্রামের বড় বায়াররা এ নিলামে অংশগ্রহণ করেনি।

এদিকে কয়েকজন ক্রেতা জানিয়েছেন, ব্রোকারসদের সিন্ডিকেটের কারণে অনেকে এ নিলাম থেকে চা পাতা কিনছে না এবং এ নিলামে অনেকে আসতে চায় না।

জানা যায়, শ্রীমঙ্গলের চারটি ব্রোকারস হাউস মিলিয়ে প্রায় ৩৫ জন বায়ার নিলামে অংশগ্রহণ করেন। এতে ৯১ হাজার ৬০৪ দশমিক ১০ কেজি চা পাতা নিলামে ওঠে; যার বাজারদর আনুমানিক এক কোটি ৮৩ লাখ ২০ হাজার ৮২০ টাকা। এর আগে গত ১২ অক্টোবর নিলামে দুই লাখ ৬৩ হাজার ৫৩৫ দশমিক ৯০ কেজি চা পাতা নিলামে ওঠে, যার বাজারদর ছিল আনুমানিক পাঁচ কোটি ২৭ লাখ সাত হাজার টাকা।

শ্রীমঙ্গল টি ব্রোকার্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. হেলাল আহমদ শেয়ার বিজকে জানান, ‘প্রায় ৯১ হাজার চা প্রদর্শন হয়েছে, যার বাজারদর প্রায় দেড় কোটি টাকার ওপর। আজকের এই নিলামে সর্বোচ্চ দামে বিক্রি হয়েছে এমআর খান চা বাগানের ব্ল্যাক টি ২৭২ টাকা, শ্রীমঙ্গলের মাস্টার টি এটি ক্রয় করছে। সাবারি টি প্লান্টেশনের গ্রিন টি সর্বোচ্চ দামে এক হাজার ১৮০ টাকা কেজিদরে বিক্রি হয়েছে। চায়ের কোয়ালিটি বাড়ছে বলে চায়ের দর বাড়ছে। আশা করছি, এভাবে চায়ের কোয়ালিটি বাড়লে চায়ের বাজার আরও বাড়বে।’

মাস্টার টি সাপ্লাইয়ের স্বত্বাধিকারী মো. শরিফুল ইসলাম বুলবুল শেয়ার বিজকে জানান, ‘এ নিলামে ভালো চা বাগানের চা পাতার দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। বিভিন্ন বাগানের চা বিভিন্ন দামে বিক্রি হয়। যেমন ২২০ টাকা, ২৫০ টাকা, ২৬০ টাকাসহ এ রকম বিভিন্ন দাম ব্রোকারস হাউসগুলো করেছে।’

শ্রীমঙ্গল ব্রোকারসের টি স্টাফ মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘কয়েক দিন আগে শ্রমিক ধর্মঘটের কারণে যে রেজাল্ট আসছে, তাতে এখন পর্যন্ত ভালো বাগানের কোনো ভালো চা পাতা আসেনি। হয়তো বাগানের ব্যবস্থাপকরা যদি তাদের যথাযথ ভূমিকা পালন করে, তাহলে হয়তো আগামী কিছুদিনের মধ্যে ভালো চা পাব। ভালো চা বাজারে সবসময় ভালো দাম থাকে। এখন যেহেতু বাজারে ভালো চা খুবই কম, তার চাহিদাটা অনেক বেশি এবং তার দামটাও অনেক বেশি।’

তিনি আরও বলন, ‘বর্তমানে চায়ের কোয়ালিটি ও কালার ঠিক থাকছে না, ব্রাউন হয়ে যাচ্ছে। যেহেতু আমাদের এখানে পঞ্চগড়ের চা আসে, তার দামও কম। এ সপ্তাহে পঞ্চগড়ের চা পাতার দামটা মোটামুটি অনেক কম। ১২০ থেকে ১৪০ টাকা পর্যন্ত চা বিক্রি হচ্ছে। আর ভালো দামের চা হচ্ছে বিশেষ করে মধুপুর, কেদারপুর, গাজীপুর, বালিশিরা, রাজঘাট তাদের চা পাতা খুব ভালো দামে বিক্রি হচ্ছে। তাদের চায়ের গুণগত মান অনেক ভালো। ২৮০ থেকে ৩০০ ও ৩১০ টাকা পর্যন্ত বর্তমানে ভালো চায়ের দাম রয়েছে।’

এদিকে বাংলাদেশ চা বোর্ড এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, দেশের চাশিল্পে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ১৪ দশমিক ৭৪ মিলিয়ন কেজি অর্থাৎ এক কোটি ৪৭ লাখ ৪০ হাজার কেজি চা উৎপাদিত হয়েছে, যা অতীতের যে কোনো মাসের উৎপাদন রেকর্ডকে ছাড়িয়ে গেছে।

গত বছর ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরের তুলনায় এ বছরের ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে প্রায় ১৭ শতাংশ চা উৎপাদন বেশি হয়েছে। এর আগে মাসভিত্তিক উৎপাদনের সর্বশেষ রেকর্ড হয়েছিল গত বছরের ২০২১ সালে অক্টোবর মাসে। গত অক্টোবরে ২০২১ সালে ১৪ দশমিক ৫৮ মিলিয়ন কেজি অর্থাৎ এক কোটি ৪৫ লাখ ৮০ হাজার কেজি চা উৎপাদিত হয়েছিল। জানা যায়, ‘২০২২-২৩ অর্থবছরে শ্রীমঙ্গল চা নিলাম কেন্দ্রে মোট ২৩ দিন চা নিলাম অনুষ্ঠিত হবে। চলতি বছর অর্থাৎ ২০২২ সালে ১৭টি এবং আগামী বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালে ছয়টি নিলাম হবে।’