বর্তমানে অনেক কোম্পানির শেয়ারের দাম, ডিভিডেন্ড ইল্ড, পিই রেশিও সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে। এ সময় দীর্ঘমেয়াদে ওইসব কোম্পানির শেয়ার কিনে রাখলে ভালো একটি লাভ পাওয়া যাবে। আর যারা ডে ট্রেডিং করে তাদের অবশ্যই শেয়ার কেনার আগে জেনে-বুঝে এবং বিচক্ষণতার সঙ্গে কোম্পানি নির্বাচন করতে হবে, কারণ টাকা বিনিয়োগকারীর। লাভ-ক্ষতি বিনিয়োগকারীকেই বহন করতে হবে। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়। হাসিব হাসানের গ্রন্থনা ও সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আইনজীবী ও পুঁজিবাজার বিশ্লেষক হাসান মাহমুদ বিপ্লব এবং আমার স্টক ডটকমের সিইও মুহাম্মদ আল জাহাঙ্গীর।
হাসান মাহমুদ বিপ্লব বলেন, বর্তমানে পুঁজিবাজারে টার্নওভার ও মৌলভিত্তির কোম্পানির শেয়ারের দাম তেমন বাড়ছে না, কিন্তু স্বল্প মূলধনি কোম্পানির শেয়ারের দাম দিন দিন বেড়েই চলেছে। এখন কথা হচ্ছে যে, যখন পুঁজিবাজার নি¤œগতিতে থাকে, তখন স্বল্প মূলধনি কোম্পানির শেয়ারের দাম বৃদ্ধি পায়। আর এটা হওয়াই স্বাভাবিক, কারণ এটি শুধু এদেশের ক্ষেত্রে নয়, অন্য দেশেও হয়ে থাকে। এখানে আরেকটি কারণ হচ্ছে, যেহেতু মৌলভিত্তির কোম্পানির শেয়ারে কোনো পরিবর্তন আসছে না, তাই স্বল্প মূলধনি কোম্পানির শেয়ারের দিকে বিনিয়োগকারীরা বেশি ঝুঁকছে, কারণ এখানে কিছু না কিছু লাভ করছে। নির্বাচনের আগে স্বল্প মূলধনি কোম্পানির শেয়ারের দাম এ রকম ওঠানামা করবে। তবে নির্বাচনের পর পুঁজিবাজার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে বলে মনে করি।
বিনিয়োগকারীর উদ্দেশে তিনি বলেন, বর্তমানে অনেক কোম্পানির শেয়ারের দাম, ইল্ড, পিই রেশিও সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে। এই সময়ে দীর্ঘমেয়াদে ওইসব কোম্পানির শেয়ার কিনে রাখলে ভালো একটি লাভ পাওয়া যাবে। আর যারা ডে ট্রেডিং করে তাদের অবশ্যই শেয়ার কেনার আগে জেনে-বুঝে এবং বিচক্ষণতার সঙ্গে ওইসব কোম্পানির শেয়ার কিনতে হবে। কারণ টাকা বিনিয়োগকারীর। লাভ-ক্ষতি বিনিয়োগকারীকে বহন করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, পুঁজিবাজারে যখন গ্রামীণফোন অন্তর্ভুক্ত হয় তখন নতুন অনেক দেশি এবং বিদেশি বিনিয়োগকারী বিনিয়োগ করেছে এবং বাজার মূলধনও বেড়েছিল। তখন গ্রামীণফোন দেশের পুঁজিবাজারে অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় সিএনএন, বিবিসি ও টাইম ম্যাগাজিনে খবর প্রচার করা হয়েছিল। আসলে এটা দেশের পুঁজিবাজারের জন্য ইতিবাচক। এখন কথা হচ্ছে, গত পাঁচ বছরে যেসব কোম্পানি পুঁজিবাজারে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, বেশিরভাগই স্বল্প মূলধনি। তেমন উল্লেখযোগ্য কোনো কোম্পানি ছিল না। তাই পুঁজিবাজারকে ভালো অবস্থানে নিতে হলে আরও দেশি এবং বহুজাতিক কোম্পানিকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। যদি গ্রামীণফোনের মতো ইউনিলিভার কোম্পানিকে দেশের পুঁজিবাজারে অন্তর্ভুক্ত করা যায়, সেক্ষেত্রে আরও অনেক বিনিয়োগকারী আসবে এবং বাজারের মূলধন বাড়বে।
মুহাম্মদ আল জাহাঙ্গীর বলেন, পুঁজিবাজারে মৌলভিত্তির কোম্পানির শেয়ারের তুলনায় স্বল্প মূলধনি কোম্পানির শেয়ারের দাম বেশি বৃদ্ধি পাচ্ছে। আবার বর্তমানে যে টার্নওভার, তা যদি আরও কমে যায় তাহলে স্বল্প মূলধনি কোম্পানির শেয়ারের দাম আরও বেড়ে যাবে। কারণ ওইসব কোম্পানির শেয়ার কিনতে বেশি টাকা লাগে না। যেহেতু প্রতিদিনই বিনিয়োগকারী লাভ পাচ্ছে, তাই স্বল্প মূলধনি কোম্পানির দিকে বেশি ঝুঁকছে।
তিনি আরও বলেন, যখন স্বল্প মূলধনি কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়ে, তখন কারসাজি চক্র বেড়ে যায়। শুধু এদেশের পুঁজিবাজারে নয়, অন্য দেশের পুঁজিবাজারেও কারসাজি চক্র বেড়ে যায়। তবে এটি সাময়িক সময়ের জন্য। ২০১০ ও ২০১১ সালে পুঁজিবাজার ধসের পর লাভ-লোকসান যাই হোক বিনিয়োগকারীরা এখনও পুঁজিবাজারে রয়েছে। তাই বিনিয়োগকারী ধরে রাখতে হলে ভালো কোম্পানি আনার বিকল্প নেই।
শ্রুতিলিখন: শিপন আহমেদ