Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 3:57 pm

বাজার কিছুটা ঘুরতেই ফের চাঙা ‘জেড’ ক্যাটাগরি

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: সাম্প্রতিক পতনের পর আবার কিছুটা ঘুরে দাঁড়িয়েছে পুঁজিবাজার। কিন্তু ধকল কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই ফের মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে অপেক্ষাকৃত দুর্বল তথা ‘জেড’ ক্যাটাগরির কোম্পানির শেয়ার। এসব কোম্পানির আর্র্থিক অবস্থা দুর্বল। ঝুঁকিতে রয়েছে তাদের শেয়ারের মূল্য আয় অনুপাত। নেই সন্তোষজনক শেয়ারপ্রতি আয় ও সম্পদ। কিন্তু আর্থিক বিবেচনায় দুর্বল হলেও পুঁজিবাজারে সব সময়ই এ ধরনের কিছু কোম্পানির আধিপত্য দেখা যায়। আর না-জেনে না-বুঝে এসব কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে ক্ষতিগ্রস্ত হন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।

বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, সম্প্রতি পুঁজিবাজার ধসের পর গত সপ্তাহে তা কিছুটা ঘুরে দাঁড়ায়। ফলে দর বাড়ে অধিকাংশ কোম্পানি এবং মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিটের। কিন্তু ভালো কোম্পানির পাশাপাশি বেড়েছে কিছু চালচুলাহীন কোম্পানির শেয়ারের দর। সপ্তাহের বেশিরভাগ দিনই দর বৃদ্ধির দৌড়ে আধিপত্য বিস্তার করেছে এসব কোম্পানি। আর সপ্তাহ শেষে দরবৃদ্ধির তালিকায় (এ ক্যাটাগরি বাদে) উঠে আসে এ ধরনের আটটি প্রতিষ্ঠান। এগুলো হচ্ছে প্রগ্রেসিভ লাইফ ইন্স্যুরেন্স, সিভিও পেট্রোকেমিক্যাল, মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক, দেশবন্ধু পলিমার, ওয়েস্টার্ন মেরিন, সিনোবাংলা, জুট স্পিনার্স ও শাইনপুকুর সিরামিকস। সপ্তাহের ব্যবধানে এসব কোম্পানির শেয়ারের দর বেড়েছে ৭ থেকে ১৬ শতাংশ পর্যন্ত। বিষয়টি ‘অস্বাভাবিক’ বলে মনে করছেন বাজারসংশ্লিষ্টরা।

তাদের অভিমত, তুলনামূলকভাবে বাজারে কিছু দুর্বল কোম্পানির শেয়ারের দর অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। সেই তুলনায় বাড়ছে না মৌলভিত্তির কোম্পানির শেয়ারের দর।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ডিএসইর সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট ও বর্তমান পরিচালক শাকিল রিজভী শেয়ার বিজকে বলেন, ‘পুঁজিবাজার এখন ধীরে ধীরে স্থিতিশীলতার দিকে এগোচ্ছে। বিনিয়োগকারীরাও বাজারে ফিরে আসছেন এটা ভালো খবর। তবে তাদের কাছে অনুরোধ থাকবে, তারা যেন কোনো ধরনের ভুল না করেন।’

তিনি বলেন, পুঁজিবাজারে এখন অনেক ভালো মৌলভিত্তির শেয়ারের দর ক্রয়যোগ্য রয়েছে। দুর্বল কোম্পানির দিকে না ঝুঁকে তারা যদি কোম্পানি দেখেশুনে বিনিয়োগ করতে পারেন, তাহলে তারা ভালো ফল আশা করতে পারবেন।’

অন্যদিকে এসব কোম্পানি নিয়ে মন্তব্য চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএসইর সাবেক এক প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘ঊর্ধ্বমুখী বাজারে সুযোগসন্ধানীরা ওত পেতে থাকে। এ সময় অনেকেই তাদের স্বার্থ হাসিল করতে চায়। কথাটি বিনিয়োগকারীদের মাথায় রাখা উচিত। কারণ যার পুঁজি, নিরাপদ রাখার দায়িত্ব তারই।’

একই প্রসঙ্গে ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান শেয়ার বিজকে বলেন, ‘আমাদের দেশের বিনিয়োগকারীরা আগের চেয়ে সচেতন হয়েছেন। ফলে তাদের উচিত হবে না অন্য কারও কথায় বা গুজবে কান দিয়ে শেয়ার কেনাবেচা করা। ইনভেস্ট করার আগে তাদেরই ঠিক করতে হবে, তিনি যে কোম্পানিতে বিনিয়োগ করছেন, সেটা ঝুঁকিমুক্ত না কি না। সিদ্ধান্ত ভুল হলে এর মাশুল তাকেই দিতে হবে।’ তিনি বিনিয়োগকারীদের মৌলভিত্তির কোম্পানির সঙ্গে থাকার আহ্বান জানান।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, গত সপ্তাহে দরবৃদ্ধির দৌড়ে এগিয়ে থাকা কোম্পানিগুলোর মধ্যে ১৫ দশমিক ৬৭ শতাংশ দর বেড়েছে প্রগ্রেসিভ ইন্স্যুরেন্সের শেয়ারের দর। কোম্পানিটির অবস্থান হয় শীর্ষ তালিকার এক নম্বরে। পরের অবস্থানে থাকা সিভিও পেট্রোকেমিক্যালের শেয়ারের দর বেড়েছে ১৪ দশমিক শূন্য পাঁচ শতাংশ। তৃতীয় অবস্থানে থাকা মেঘনা কনডেন্সড মিল্কের দর বাড়তে দেখা যায় ১০ দশমিক ৩১ শতাংশ। এ ছাড়া দেশবন্ধু পলিমারের শেয়ারের দর ৮ দশমিক ৪০ শতাংশ, ওয়েস্টার্ন মেরিনের ৮ দশমিক ৩৬ শতাংশ, সিনোবাংলার ৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ, জুট স্পিনার্সের ৭ দশমিক ৪৭ শতাংশ ও শাইনপুকুর সিরামিকের শেয়ারের দর বেড়েছে ৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ।

এদিকে কোম্পানিগুলো বর্তমানে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে অবস্থান করছে। ফলে মৌলভিত্তির বিচারে এসব শেয়ারের অস্বাভাবিক দরবৃদ্ধির বিষয়টি সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখছেন সবাই। বিষয়টি নজর এড়ায়নি বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষের। ইতোমধ্যে কয়েকটি কোম্পানিকে দরবৃদ্ধির কারণ জানতে চেয়ে নোটিস পাঠিয়েছে ডিএসই কর্তৃপক্ষ। জবাবে কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তাদের শেয়ারের দরবৃদ্ধির কোনো কারণ নেই।