Print Date & Time : 23 June 2025 Monday 2:54 pm

বাজার চাহিদার ৪৩ শতাংশ বিএসআরএম স্টিলের

সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: বর্তমানে দেশের ইস্পাতের বাজার প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। আর বার্ষিক উৎপাদন সক্ষমতা প্রায় ৮০ লাখ টন। তবে এখন পর্যন্ত চাহিদা দাঁড়িয়েছে ৪০ লাখ টন। এর মধ্যে বিএসআরএম গ্রুপের প্রতিষ্ঠান বিএসআরএম স্টিল রি-রোলিং মিল ও বিএসআরএম স্টিল লিমিটেড গত বছরের ১৭ লাখ ২৭ হাজার ১৮৮ টন রড উৎপাদন করে, যা মোট চাহিদার প্রায় ৪৩ শতাংশ। বিক্রি ছিল ১৭ লাখ ৪৩ হাজার টন।

স্টিল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মতে, ইস্পাতশিল্পে মূলত দুই ধরনের পণ্য উৎপাদন হয়। এর মধ্যে আছে ফ্ল্যাট স্টিল (সিআই শিট ও সিআর কয়েল) ও লং স্টিল (এমএস রড বা টিএমটি বার)। এ খাতে সক্রিয় চার শতাধিক প্রতিষ্ঠান। তবে মোট চাহিদার প্রায় ৭০ শতাংশ পূরণ করছে বিএসআরএম, একেএস স্টিল, কেএসআরএম, আরএসআরএম ও আরও কিছু প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানগুলো স্থানীয়ভাবে বিলেটও (ইস্পাতশিল্পের আধা প্রক্রিয়াজাত কাঁচামাল) প্রস্তুত করে। বিএসআরএম, একেএস স্টিল ও কেএসআরএম এ তিন প্রতিষ্ঠান দেশে রডের মোট চাহিদার প্রায় ৬০ শতাংশ সরবরাহ করে।

বিএসআরএম সূত্রে জানা যায়, ১৯৫২ সালে বেসরকারি খাতে প্রথম স্টিল রি-রোলিং মিল স্থাপনের মাধ্যমে দেশে ইস্পাতশিল্পের সূচনা করে বিএসআরএম গ্রুপ। এ গ্রুপের পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত দুটি প্রতিষ্ঠানের রড, চ্যানেল, বার ও  অ্যাঙ্গেল সম্মিলিত উৎপাদন ১৭ লাখ ২৭ টনের অধিক।  এর মধ্যে বিএসআরএম স্টিল রি-রোলিং মিলের উৎপাদন ছিল ১০ লাখ ৪৩ হাজার ৩১৮ টন। আর বিক্রির পরিমাণ ছিল ১০ লাখ ৬৬ হাজার ২৫১ টন। এতে নিট মুনাফা হয় ২৯৬ কোটি ১৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা। অন্যদিকে বিএসআরএম স্টিল লিমিটেড বিগত বছরের ছয় লাখ ৮৩ হাজার ৮৭০ টন রড উৎপাদন করে এবং বিক্রয় ছিল ছয় লাখ ৭৬ হাজার ৭৪৯ মেট্রিক টন। এতে নিট মুনাফা হয় ১৩৪ কোটি ৫১ লাখ ৭০ হাজার টাকা, যা এ গ্রুপটিকে পরিণত করেছে দেশের ইস্পাত খাতে মার্কেট লিডার।

চলতি বছরের গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান বিএসআরএম আয়রন অ্যান্ড স্টিল কোম্পানি লিমিটেডের (বিসকো) সঙ্গে একত্রীকরণ করা হয়। এ প্রক্রিয়া শেষ হলে চার লাখ ৩০ হাজার টন উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন আরেকটি বিলেট প্লান্ট স্থাপনের প্রক্রিয়া শুরু করবে বিএসআরএম। এতে উৎপাদন আগামী বছর বেড়ে হবে সাড়ে ২১ লাখ টনে। এতে বিলেটের আন্তর্জাতিক বাজারে অস্থিতিশীল মূল্যের ঝুঁকি এবং পরনির্ভরতা হ্রাস পাবে। নতুন বিলেট প্লান্ট স্থাপন এবং সাবসিডিয়ারি কোম্পানির সঙ্গে একত্রিত হলে কোম্পানির উৎপাদন ও মুনাফা উভয়ই বৃদ্ধি পাবে। দেশের অবকাঠামো কাজে গুণগত মান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ‘মাক্সিমা, আল্ট্রিমা ও সেঞ্চুরা’ নামে নতুন রড উৎপাদনের মনোযোগী গ্রুপটি, যা উন্নয়ন প্রকল্পগুলোতে আরও কার্যকর ভ‚মিকা পালন করবে।

বিএসআরএম গ্রুপের চেয়ারম্যান আলী হুসেন আকবর আলী শেয়ার বিজকে বলেন, বাংলাদেশ দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে ‘এশিয়ান টাইগার’ হিসেবে উদীয়মান হচ্ছে। বর্তমান সরকারের বিনিয়োগবান্ধব নীতিমালা বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগে আকৃষ্ট করছে। আর বাংলাদেশ বিনিয়োগের জন্য একটি নিরাপদ এবং নির্ভরযোগ্য স্থান। এ বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সরকারি, বেসরকারি পর্যায়ে গৃহীত বিভিন্ন মেগা প্রকল্প রডের চাহিদাকে বহুগুণে বৃদ্ধি করবে। এর মধ্যে আমাদের উৎপাদন সক্ষমতাও বেড়েছে। এ বছরের আমরা প্রথমবারের মতো দশ লাখ মেট্রিক টন রড উৎপাদনের ইতিহাস গড়েছি।

অন্যান্য ইস্পাত কোম্পানির মধ্যে একক কোম্পানি হিসেবে ইস্পাত খাতের শীর্ষ প্রতিষ্ঠান একেএস রি-রোলিং মিলস। লং স্টিলে প্রতিষ্ঠানটির বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা ১২ লাখ টন। কোম্পানিটি আমদানিকৃত বিলেট থেকে বিভিন্ন গ্রেডের রড উৎপাদন করে থাকে। ২০১৪ সাল পর্যন্ত তাদের উৎপাদনের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ বিক্রি হলেও বাজার পরিস্থিতির কারণে ২০১৫ সাল থেকে তা কিছুটা নিম্নগামী। একইভাবে কেএসআরএমর বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা আট লাখ টন হলেও বিক্রি অর্ধেক। পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত জিপিএইচ ইস্পাত আগামীর চাহিদার কথা মাথায় রেখে সক্ষমতা পাঁচগুণ করতে প্রায় এক হাজার ৭০০ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নিয়েছে আরেক তালিকাভুক্ত ইস্পাত কোম্পানি জিপিএইচ ইস্পাত লিমিটেড। অর্থসংস্থানে রাইট শেয়ার ইস্যুর পাশাপাশি নি¤œ সুদের বিদেশি উৎস থেকে ঋণ নিচ্ছে এ কোম্পানি। প্রতিষ্ঠানটির বার্ষিক সক্ষমতা এমএস রডে এক লাখ ২০ হাজার টন, সম্প্র্রসারণের পর যা সাত লাখ ৬০ হাজারে উন্নীত হবে। আর এমএস বিলেটে সক্ষমতা এক লাখ ৬৮ হাজার থেকে বেড়ে ১০ লাখ টন ছাড়াবে। পুঁজিবাজারের আরেক ইস্পাত খাতের অন্যতম শীর্ষ প্রতিষ্ঠান রতনপুর স্টিল রি-রোলিং মিলস (আরএসআরএম) লিমিটেড। ২০১৩-১৫ সাল পর্যন্ত এ প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন সক্ষমতা ছিল এক লাখ ৮৭ হাজার ২০০ টন। আলোচ্য সময়ে প্রতিষ্ঠানটি তাদের উৎপাদন সক্ষমতার যথাক্রমে ৪৭, ৪৬ ও ৫৫ দশমিক ২৩ শতাংশ সদ্ব্যবহার করতে সক্ষম হয়।

বিএসআরএমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমের আলী হুসেন বলেন, বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো ফিউশন বন্ডেড ‘সেঞ্চুরা’ নামে নতুন পণ্য নিয়ে এসেছি। অ্যান্টি রাস্টিং ক্ষমতাসম্পন্ন এ রডগুলো উপকূলীয় এলাকায় ব্যবহারের জন্য বিশেষভাবে তৈরি। এ রড ব্যবহার করে কোনো অবকাঠামো নির্মাণ করা হলে তা অন্য যেকোনো রডের তুলনায় দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং মেরামতের খরচ বাঁচায়।

উল্লেখ্য, পুঁজিবাজরের প্রকৌশল খাতের তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠান বিএসআরএম স্টিল রি-রোলিং মিলস লিমিটেড পরিচালনা পর্ষদ গত ১৮ মাসের নিরীক্ষিত হিসাববছরের জন্য ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ এবং ১০ অন্তর্বর্তীকালীন নগদ লভ্যাংশ দেয়। এ গ্রæপের আরেক কোম্পানি বিএসআরএম স্টিলস লিমিটেডের প্রতিষ্ঠান ২০১৭ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাববছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে ১৫ শতাংশ চ‚ড়ান্ত নগদ লভ্যাংশ অনুমোদন করে। এর আগে ২০ শতাংশ নগদ অন্তর্বর্তীকালীন লভ্যাংশ ঘোষণা করেছিল। সে হিসাবে সদ্য সমাপ্ত হিসাববছরের জন্য মোট ৩৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করল।