Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 1:15 pm

বাজার নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখুক আলু আমদানি

‘৩০ টাকায় মিলবে আলু, প্রথম দিনে আমদানি ১০৯ টন’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে গতকালের জাতীয় দৈনিকগুলোয়। প্রতিবেদনের ভাষ্য: দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে আলু আমদানি শুরু হয়েছে। প্রতি মেট্রিক টন আলু আমদানি হচ্ছে ১০০ থেকে ১৫০ ডলারে। প্রতি কেজিতে দাম ২৫ টাকা। সব খরচসহ ৩০ টাকা কেজিতে এই আলু বিক্রি করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন এ স্থলবন্দর দিয়ে যারা আলু আমদানি করেন তারা। তারা বলছেন, ভারত ও বাংলাদেশে ট্রান্সপোর্টেশন চার্জ, ডিউটি চার্জসহ সব চার্জ পরিশোধের পর এক কেজি আলুর দাম পড়বে প্রায় ৩০ থেকে ৩২ টাকা।

সরকার আলু, পেঁয়াজ ও ডিমের দাম নির্ধারণ করে দেয়ার পর পণ্য তিনটির দাম কমেছে কিংবা বাজার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, এটি বলা যাবে না। বরং ভোক্তারা এর চেয়ে বেশি দামেই কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। এতে প্রমাণিত হয়, সরকারের ঘোষণাকে পাত্তা দেননি ব্যবসায়ীরা! এদিকে বুধবার সরকার চিনি আমদানিতে শুল্ক অর্ধেক কমানোর পর পাইকারি বাজারে চিনির দাম উল্টো বেড়েছে। পাইকারি চিনি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পাইকারি বাজারে চিনির দাম বাড়তে শুরু করেছে। গত তিন দিনে এ বাজারে খোলা চিনির দাম বেড়েছে কেজিতে চার টাকা। পাইকারি বাজারে চিনির দাম এখন ১৩০ টাকা।

জানা গেছে, সরকার এখন পর্যন্ত ১৫৭টি প্রতিষ্ঠানকে এক লাখ সাত হাজার ২১৫ টন আলু আমদানির অনুমতি দিয়েছে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের কাছে আরও আবেদন আছে; সেগুলো যাচাই-বাছাই করে অনুমোদন দেয়া হবে।

আমরা জানি, বাজার নিয়ন্ত্রণে নির্দিষ্ট ভোগ্যপণ্য আমদানি একমাত্র উপায় নয়। কেননা অসাধু ব্যবসায়ীরা আগেই দাম বাড়িয়ে রাখেন। পরে পণ্য আমাদানির পর কিছু কমিয়ে দেন। এবার তারা সেটিও করেননি। সংঘবদ্ধ ব্যবসায়ীদের এ কৌশল নতুন নয়। তবু কেন সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে না, তা আমাদের বোধগম্য নয়। আমাদের মন্ত্রীদের নিজস্ব মন্ত্রণালয়ের দুর্বলতার কথা স্পষ্ট। তারা বলছেন, ‘ওরা কথা শোনে না। সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়।’

বিশেষজ্ঞরা বলেন, আলু আমদানির পাশাপাশি সেটি সরকার ঘোষিত দামে বিক্রি হয় কি না, তাও নিশ্চিত করতে হবে। পণ্য নেই মর্মে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দাম বাড়ানোর কারসাজি চলে; সরকারি নজরদারি জোরদার হলে দেখা যায় সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা সেগুলো বিক্রিও করতে পারছেন না, গুদামেও রাখতে পারছেন না। তখন রাতের আঁধারে জনমানবহীন এলাকায় সেগুলো ফেলে দেয়া হয়Ñএমন ঘটনাও ঘটেছে।

ভোক্তাসাধারণ প্রতিনিয়তই প্রতারিত হওয়ার প্রধান কারণ, তারা সংগঠিত নন। এর সঙ্গে প্রশাসনের উদাসীনতা যোগ হলে ব্যবসায়ীরা বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। ২০১২ সালে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় পেঁয়াজ, রসুন, মসুর ডাল, ছোলা, সব ধরনের মসলা ও খাবার লবণ অত্যাবশ্যকীয় পণ্য হিসেবে ঘোষণা করে। সে অনুযায়ী এসব পণ্যের আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় মূল্য পর্যালোচনা করে মতামত দেয়া ট্যারিফ কমিশনের কাজ। সংস্থাটি যথানিয়মে এ দায়িত্ব পালন করলে এসব পণ্যের বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়ত বলেই আমরা মনে করি। এর পাশাপাশি টিসিবি ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরকেও সক্রিয় হতে হবে।