শেয়ার বিজ ডেস্ক: ভরা মৌসুমেও দাম বেড়ে যাওয়ায় বাজার নিয়ন্ত্রণে আবারও ভারত থেকে আলু আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। হিলি স্থলবন্দরের ৪৯ আমদানিকারক বৃহস্পতিবার ৩৪ হাজার টন আমদানির অনুমতি পেয়েছেন। আজ শনিবার ভারত থেকে আলু আমদানি করা হতে পারে।
হিলি স্থলবন্দরের আমদানিকারক শহিদুল ইসলাম জানালেন, দেশের বাজারে সরবরাহ স্বাভাবিক ও দাম নিয়ন্ত্রণে আবারও আলু আমদানির অনুমতি দিয়েছে সরকার। বুধবার আমিসহ বন্দরের বেশ কয়েকজন আমদানিকারক অনুমতি চেয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের অনলাইনে আবেদন করেছিলাম। বৃহস্পতিবার থেকে অনুমতিপত্র (আইপি) দেয়া শুরু করে দপ্তর। শনিবার-রোববার থেকে আমদানি শুরু হবে। আমদানি শুরু হলে আলুর কেজি ২০-২৫ টাকার মধ্যে চলে আসবে। খবর: ইউএনবি।
হিলি স্থলবন্দর উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ কেন্দ্রের উপসহকারী সঙ্গনিরোধ কর্মকর্তা ইউসুফ আলী জানান, বাজার নিয়ন্ত্রণে বুধবার আলু আমদানির সিদ্ধান্ত দিয়েছিল সরকার। ওই দিন থেকেই অনুমতির আবেদন গ্রহণ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকাল থেকে আইপি দেয়া শুরু হয়েছে। এখন পর্যন্ত হিলির ৪৯ আমদানিকারক ৩৪ হাজার টন আলু আমদানির অনুমতি পেয়েছেন।
এদিকে আলুর উচ্চমূল্য নিয়ে প্রায় এক বছর ধরে আলোচনার মধ্য অবশেষে পাইকারিতে তা নেমেছে ৩০ টাকার নিচে। কিন্তু খুচরা পর্যায়ে তার সুফল সেভাবে পাচ্ছেন না ভোক্তারা।
শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন সুপার শপগুলোর কোথাও ‘ছাড়’ দিয়ে ৩৭ টাকা, কোথাও ৪১ টাকা কেজিতে বিক্রি করা হচ্ছে বহুল ব্যবহƒত সবজিটি। পাড়া-মহল্লায় বা এলাকার বাজারে তা বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকা পর্যন্ত।
এমনকি যে বাজারে পাইকারি দর ২৬ টাকা, সেই বাজারেই কেবল ১০ থেকে ২০ মিটার দূরে দাম দেখা গেছে ৩৫ টাকা। রাজধানীর কারওয়ান বাজার, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট ও টাউনহল বাজার ঘুরে আলুর দামে এই চিত্র দেখা গেছে।
গত বছরের এপ্রিল থেকে চড়তে থাকা আলুর বাজার ঠাণ্ডা করতে সরকারি সব ‘টোটকা’ ব্যর্থ হওয়ার পর চলতি মৌসুমে তৈরি হয় আরো ‘বিস্ময়’। গত বছরের যে সময় নতুন আলুর দাম ছিল ২৫ টাকা, সেই সময়ে তা ৬০ এমনকি ৭০ টাকায় কিনতে বাধ্য হয়েছেন ক্রেতারা।
শীতে আলু উঠার পর ক্রমে দাম কমতে থাকলেও এবার দেখা গেছে উল্টো চিত্র। শীতের শুরুতে ৫০ টাকায় নেমে পরে তা লাফ দিয়ে বেড়ে ছাড়ায় ৭০ টাকা।
সে সময় জানা যায়, মৌসুমের শুরুতে বৃষ্টিতে আলুর উৎপাদন পিছিয়ে গেছে। আলুর আকার দেখে সেটি বোঝাও যায়। ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাস জুড়ে স্বাভাবিকের তুলনায় আলুর আকার ছিল ছোট। বেশি দাম পাওয়ায় চাষিদের ছোট আলু বাজারে নিয়ে আসাই এর কারণ বলে উঠে আসে বিক্রেতাদের ভাষ্যে।
কারওয়ান বাজারে পাইকারি দোকান বিক্রমপুর ভাণ্ডারে ডায়মন্ড বড় আকারের আলু বিক্রি হচ্ছিল দাম ২৭ থেকে ২৮ টাকা কেজি দরে; মধ্যম আকারেরগুলোর দাম ছিল ২৬ টাকা কেজি দরে; ছোট আলুর কেজি ছিল ২২ টাকা। লাল আলু ২৫ টাকা কেজি দরে কিনতে দেখা যায় ক্রেতাদের।
বিক্রমপুর ভাণ্ডারের স্বত্বাধিকারী ইউসুফ মিয়া বলেন, ‘আলুর দাম আরও কমে পাইকারিতে ২০ টাকার নিচে নামবে মনে হচ্ছে। আজ রাতে আরও দুই টাকা কমবে জেনেছি। এতদিন আলুর কিছুটা সংকট ছিল, বাজারে আলু খুব বেশি ওঠেনি। এখন বাজারে আলুতে ভরপুর। দাম কমবেই।’
কারওয়ানবাজারে আলুর আড়তে বিক্রেতারা ধারণা করছেন পাইকারিতে দাম অচিরেই ২০ টাকার নিচে নেমে আসবে।
খুচরা পর্যায়ে তাহলে দাম এত কেন এই প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘তারা (খুচরা ব্যবসায়ী) বেশি লাভ করে। কেউ কেউ ৪৫ টাকা কিংবা ৫০ টাকায়ও বেচে। তাদের ধরা উচিত।’
একই বাজারে মদিনা ট্রেডার্সে রাত ও দিনের দামে পার্থক্য ‘রাত-দিনের’। রাতে এখানে পাইকারি দরে, দিনে বিক্রি হয় খুচরা দরে।
আগের রাতে ২২ থেকে ২৮ টাকায় বিক্রি হওয়া আলু পরের দিন বিকালে ৩৫ টাকা কেজিতে বিক্রি করেছে তারা।
এই দোকানের বিক্রেতা মোহাম্মদ হোসেন বলেন, ‘দাম প্রতিদিন দু-এক টাকা করে কমছে। এক সপ্তাহের ভেতরে সাত-আট টাকা কমে গেছে। আলুর দাম কমলেও খুচরা দোকানিরা দাম কমাচ্ছে না। তারা কমালেই বাজার নিয়ন্ত্রণ হয়ে যাবে সম্পূর্ণ। মালের আমদানি বেশি, তাই বাজার আরও কমার সম্ভাবনা আছে।’