Print Date & Time : 22 June 2025 Sunday 4:30 pm

বাজার নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন: কৃষিমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক : বাজার নিয়ন্ত্রণ করা খুব কঠিন এবং বাস্তবে এটা করা যায় না বলে মন্তব্য করেছেন কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক। গতকাল মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে বিশ্ব খাদ্য দিবস ২০২০ ও কৃষির সমসাময়িক বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন।

বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের উদ্যোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা নিয়ন্ত্রণ করা খুব কঠিন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং প্রশাসন চেষ্টা করে। তবে বাস্তবে এটা করা যায় না। বাজারে চাহিদা ও তাদের (ব্যবসায়ী) নানা কারসাজির কাছে এটা করা খুব কঠিন একটা কাজ। তবে আমরা চেষ্টা করছি। আমরা নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছি না।’

ব্যবসায়ীরা নৈতিকতার বাইরে গিয়ে প্রতি কেজি আলুতে অন্তত ২০ টাকা লাভ করছেন বলে জানান তিনি। মন্ত্রী বলেন, ‘আলুর দাম নিয়ন্ত্রণে সরকার কাজ করছে। একই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আর ২০ থেকে ২৫ দিন আলুর দাম একটু বেশি থাকবে। তারপর নতুন সবজি এলে দাম কমবে।’

গত কয়েকদিন ধরে বাজারে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। পাশাপাশি বেড়েছে অন্য সবজির দামও। এতে দরিদ্র, নি¤œ মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত হিমশিম খাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর তিন পর্যায়ে আলুর দাম নির্ধারণ করে দিয়ে তা বাস্তবায়ন করতে দেশের সব জেলা প্রশাসককে এ ব্যাপারে চিঠি দিয়েছে। 

কেজিপ্রতি খুচরা পর্যায়ে ৩০, পাইকারিতে ২৫ ও হিমাগার থেকে ২৩ টাকা। এই দামে আলু বিক্রি না করলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও ভোক্তা অধিকার কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেছে, বেঁধে দেওয়া দাম বাস্তবায়নের কোনো চিত্র বাজারে নেই। আলুর দাম আগের মতোই আছে। এ পর্যন্ত কোথাও কোনো বাজারে অভিযানের কথাও শোনা যায়নি। 

এদিকে, করোনাভাইরাস মহামারি ও চলতি বছরে কয়েক দফা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষির ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সরকার আসন্ন রবি মৌসুমে কয়েকটি ‘পুনর্বাসন কর্মসূচি’ নিচ্ছে বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক।

মন্ত্রী বলেন, ‘কয়েক দফা বন্যার পর আমাদের সবচেয়ে বড় কাজ হলো, কৃষক যাতে অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যয়ের মুখে না পড়ে সে জন্য পুনর্বাসন কর্মসূচি নেওয়া। আমরা রবি ফসলে ব্যাপক পুনর্বাসন কর্মসূচি নিয়েছি। আমরা বলছি যে হাইব্রিড বোরো সেটার আরও অনেক বেশি বীজ বিনামূল্যে চাষিদের দেব, যাতে উৎপাদন বৃদ্ধি করা যায়। এখন মোটা চাল ব্যবহার করার প্রবণতা দেখা দিয়েছে। আমরা মোটা চাল বা হাইব্রিড ধানের উৎপাদন বৃদ্ধি করব, যেন আগামী বোরোতে একটা উল্লেখযোগ্য পরিমাণ চালের উৎপাদন বৃদ্ধি করতে পারি।’

কৃষি তথ্য সার্ভিস-এইআইসের তথ্য বলছে, এসএল ৮এইচ, ব্রি-হাইব্রিড ধান ১, ২, ৩, হীরা, তেজ, এসিআই-২, সাথী, লাল তীর, মধুমতি, আলোড়ন, জাগরণ, জাগরণ-৩, রূপসী বাংলা-১, রূপালী ও সচ্ছল জাতের হাইব্রিড বোরো ধানের চাষ এখন বাংলাদেশে হচ্ছে।

কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘বোরো ধানের বীজে প্রতি কেজিতে ১০ টাকা হারে ভর্তুকি দেওয়া হবে। কেজিতে প্রায় ২৫ শতাংশ হলেও আমরা ভর্তুকি দেওয়ার চিন্তা করেছি। আগামী বছর হাইব্রিড বোরো চাষ করার জন্য ১০০ কোটি টাকা চেয়েছি, যাতে বিনামূল্যে চাষিদের হাইব্রিড বীজ দিতে পারি।’

বোরো মৌসুমে কৃষকের মজুরি ও ধান কাটার সরঞ্জাম কিনতেও সহযোগিতা করার কথা বলেন কৃষিমন্ত্রী। তিনি বলেন, ৩ হাজার ২০ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের আওতায় আগামী বোরো মৌসুমে ধান কাটতে কম্বাইন্ড হারভেস্টার, রিপার আনবে কৃষি মন্ত্রণালয়। এতে কৃষি শ্রমিকের মজুরি ‘সহনশীল মাত্রায় চলে আসবে’ বলে কৃষিমন্ত্রীর বিশ্বাস।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, এ বছর দুই দফা বন্যায় দেশের ৩৪ জেলায় দেড় লাখ হেক্টরের বেশি ফসলি জমি প্লাবিত হয়েছে। প্রথম ধাপে ২৮টি জেলার প্লাবিত এলাকায় প্রায় ৩৪৯ কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি নিরূপণ করেছিল অধিদপ্তর। আশ্বিনের শেষভাগেও দেশের কিছু কিছু এলাকায় ফের বন্যা দেখা দিয়েছে।

বন্যার পর আউশ ও আমনের উৎপাদনসহ সার্বিক পরিস্থিতি প্রতিদিন নিবিড়ভাবে পর্যালোচনা করে ‘প্রয়োজন হলে’ সীমিত পরিমাণে চাল আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। বন্যার কারণে আউশ ও পরে আমন ধানের বীজতলা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় কাক্সিক্ষত ফলন না আসায় চাল আমদানির চিন্তা চলছে বলে জানান আব্দুর রাজ্জাক।

তিনি বলেন, ‘আউশের জন্য আমরা ২ লাখ হেক্টর জমি টার্গেট করেছিলাম। সেটা অর্জনও করেছিলাম। আগাম বন্যার কারণে আউশ কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সবচেয়ে ঝুঁকির কারণ হলো আমন। আমন নিয়েও আমাদের অনিশ্চয়তা আছে। এ পরিস্থিতিতে যদি কিছু ঘাটতিও হয়, যদি আমনের বেশি ক্ষতি হয়ে যায়, হারভেস্ট করতে না পারি, সেক্ষেত্রে প্রয়োজনে কিছু চাল আনাও লাগতে পারে। সেটা আমরা এখনও কিছুই বলতে পারছি না। আমরা আরও কয়েকটা দিন দেখব। আরও ১৫-২০ দিন পরে বোঝা যাবে আমনের উৎপাদন কী হবে।’

তবে উঁচু জমিতে বোরো আমন ধানের আবাদ ‘ভালো হবে’এমন আশায় কৃষিমন্ত্রী বলেছেন, ‘আমি মনে করি না যে বাংলাদেশে খাদ্য নিয়ে কোনো হাহাকার হবে, যে পরিমাণ খাদ্য আছে। সরকারের যে সোশ্যাল সেইফটিনেট প্রোগ্রাম, খাদ্য যদি ঘাটতি হয়, তাহলে কম মূল্যে, বিনামূল্যে গরিব মানুষের মধ্যে চাল বিতরণ করা হবে। সেক্ষেত্রে সরকার নীতিগত অনুমোদনও দিয়ে রেখেছে।’

আব্দুর রাজ্জাক জানান, এই অর্থবছরে চালের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়ে ৩ কোটি ৮৭ লাখ টনে উন্নীত হয়েছে। বাংলাদেশ ধান উৎপাদনে সম্প্রতি ইন্দোনেশিয়াকে পেছনে ফেলে বিশ্বে তৃতীয় স্থানে উঠে এসেছে।

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) দাবি করেছে, নভেম্বর শেষে বাংলাদেশে চাহিদা মেটার পর সাড়ে ৫৫ লাখ টন চাল উদ্বৃত্ত থাকবে।