গত এক সপ্তাহে পুঁজিবাজার থেকে ১৪ হাজার কোটি টাকা নাই হয়ে গেছে। এক সপ্তাহে অর্থনীতির এমন কী ঘটল যেটার নেতিবাচক প্রভাব বাজারে দেখা গেছে? নিশ্চয়ই এখানে বড় ধরনের কারসাজি হচ্ছে। কিন্তু নিয়ন্ত্রক সংস্থা কী করছে? তাদের দায়িত্ব কী? আসলে বাজার নিয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনীহা রয়েছে এবং এটা নিয়ে তাদের কোনো মাথাব্যথাও নেই। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়। মাহমুদ হোসেনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দ্য ডেইলি স্টারের বিজনেস এডিটর সাজ্জাদুর রহমান, মাইডাস ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের সিইও মোহাম্মদ হাফিজ উদ্দিন এবং পুঁজিবাজার বিশ্লেষক সাবির আহমেদ।
সাজ্জাদুর রহমান বলেন, গত এক সপ্তাহে পুঁজিবাজারে ১৪ হাজার কোটি টাকা নেই। এখানে আসলে অনেক ভাবার বিষয় রয়েছে। কারণ এক সপ্তাহে অর্থনীতির এমন কী ঘটল যেটার নেতিবাচক প্রভাব বাজারে দেখা যাচ্ছে। নিশ্চয়ই এখানে বড় ধরনের কারসাজি হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রক সংস্থা কী করছে? তাদের দায়িত্ব কী? এতেই বোঝা যাচ্ছে, বাজার নিয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনীহা রয়েছে এবং এটা নিয়ে তাদের কোনো মাথাব্যথা নেই।
মোহাম্মদ হাফিজ উদ্দিন বলেন, পুঁজিবাজারে আস্থার অভাব প্রকট রয়েছে। ধীরে ধীরে বিনিয়োগকারী কমে যাচ্ছে। বাজারে বিনিয়োগকারী তখনই আসবে, যখন তারা বিনিয়োগের নিরাপত্তা পাবেন এবং লাভবান হবেন। তাই বাজারে আস্থা ফেরাতে হলে নিয়ন্ত্রক সংস্থা থেকে শুরু করে সরকারের উচ্চ মহলের উদ্যোগ নিতে হবে। বিশেষ করে অর্থ মন্ত্রণালয়কে এগিয়ে আসতে হবে। ইচ্ছা করলে তারা পারেন। কিন্তু এ মুহূর্তে তাদের কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। ২০১০ সালে বাজারে প্রায় ৩০ থেকে ৩৪ লাখ বিনিয়োগকারী ছিল। এটি সবাই জানে। এ হিসাবে বিবেচনা করলে ১০ বছরে এক কোটি বিনিয়োগকারী হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেখানে মাত্র ২৫ লাখ বিও অ্যাকাউন্ট রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ১২ থেকে ১৩ লাখ বিও অ্যাকাউন্টধারী সক্রিয় রয়েছেন। তার মানে বিনিয়োগকারী বাজারবিমুখ হয়ে যাচ্ছেন। বাজার টিকিয়ে রাখতে হলে বিনিয়োগকারীদের বাজারমুখী করতে হবে। এছাড়া আর কোনো উপায় নেই। বিনিয়োগকারীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, বাজার নিয়ে একেবারে আস্থা না হারিয়ে ধৈর্য ধরুন। দেখেশুনে ভালো ইকুইটিতে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ করুন।
সাবির আহমেদ বলেন, বাজার ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার ওপর বিনিয়োগকারীর আস্থা নেই। আমিও সেটা মনে করি। এখন বিনিয়োগ করার মতো কোনো পরিবেশ নেই। কারণ বাজার কয়েক বছর ধরে এমনিতেই ভালো নয়। ২০১৯ সালে বাজার তেমন ভালো অবস্থানে ছিল না। বিনিয়োগকারী শুধু লোকসান করে যাচ্ছেন এবং অনেকে পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছেন। এটি নিয়ে অনেক আলোচনা ও সমালোচনা হচ্ছে। আবার নতুন বছরের গত সপ্তাহে বাজারে টানা পতন হয়েছে। বাজার এভাবে নি¤œমুখী হচ্ছে কিন্তু নিয়ন্ত্রক সংস্থা নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। এক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীর নিয়ন্ত্রক সংস্থার ওপর আস্থার ঘাটতি থাকাটাই স্বাভাবিক। তাই বিনিয়োগকারীদের জন্য বাজারে ভালো একজন অভিভাবক দরকার। যে অভিভাবক বিনিয়োগের নিরাপত্তা দেবেন এবং বিপদ থেকে উদ্ধার করবেন।
তিনি আরও বলেন, বেসরকারি খাতে প্রবৃদ্ধি যেখানে ১৭ থেকে ১৮ শতাংশ ছিল। এখন তা ১০ শতাংশে নেমে এসেছে। বেসরকারি খাতের প্রবৃদ্ধির উন্নতি না হলে দেশের উন্নয়ন হবে না। মূলত দেশে উন্নয়ন হয়েছে এ খাতের প্রবৃদ্ধির মাধ্যমেই।
শ্রুতিলিখন: শিপন আহমেদ