প্রতি রবি থেকে বৃহস্পতিবার পুঁজিবাজারের বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে এনটিভি ‘মার্কেট ওয়াচ’ অনুষ্ঠানটি সম্প্রচার করে। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ বিবেচনায় তার গুরুত্বপূর্ণ অংশ নিয়ে শেয়ার বিজের নিয়মিত আয়োজন ‘এনটিভি মার্কেট ওয়াচ’ পাঠকের সামনে তুলে ধরা হলো:
দেশের অর্থনীতিতে এমন কিছু হয়নি যাতে করে গত ছয় মাস বাজার টানা নেতিবাচক আচরণ করবে। আসলে এগুলো করানো হয়। ব্যাংক পরিচালকরা বিভিন্ন ধরনের সুবিধা আদায় করে নিচ্ছেন পুঁজিবাজারকে কেন্দ্র করে। প্রশ্ন হচ্ছে, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) বা ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কী করছে? বাজার পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, অনেক স্টক যেমন লংকাবাংলার শেয়ার ৭০ টাকার ওপরে ছিল, সেটি এখন ২৫-২৬ টাকা। অথচ এসইসি এ ব্যাপারে কোনো তদারকিই করেনি। তাই বাজার নিয়ন্ত্রণে নিয়ন্ত্রক সংস্থার ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে বারবার। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়। হাসিব হাসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আলোচক ছিলেন দি ডেইলি স্টারের বিজনেস এডিটর সাজ্জাদুর রহমান এবং ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি সাইফ ইসলাম দিলাল এবং অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আহসানুল আলম পারভেজ।
সাজ্জাদুর রহমান বলেন, দেশের পুঁজিবাজার স্বাভাবিক আচরণ করে না। বাজার যখন বাড়তে থাকে তখন সব ধরনের শেয়ারদর অযৌক্তিকহারে বাড়তে থাকে। আবার যখন কমে তখন কমতেই থাকে। তাই এটিকে দক্ষ বাজার বলা যায় না। গত ছয় মাসে প্রায় এক হাজার পয়েন্টের মতো সূচকের পতন হয়েছে। অথচ এমন আচরণের কোনো যৌক্তিক কারণ ছিল না। দেশের অর্থনীতিতে এমন কিছু হয়নি যাতে গত ছয় মাস বাজার টানা নেতিবাচক আচরণ করবে। আসলে বাজারে এগুলো করানো হয়। লক্ষ করলে দেখা যায়, ব্যাংক পরিচালকরা বিভিন্ন ধরনের সুবিধা আদায় করে নিচ্ছেন পুঁজিবাজারকে কেন্দ্র করে। তারা নিজেদের কিছু স্বার্থ এবং দাবি আদায় করে নিচ্ছেন পুঁজিবাজারের মাধ্যমে। প্রশ্ন হচ্ছে, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) বা ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কী করছে? দেখা যায়, অনেক স্টক যেমন লংকাবাংলার শেয়ার ৭০ টাকার ওপরে ছিল, সেটি এখন ২৫-২৬ টাকা। অথচ এসইসি এ ব্যাপারে কোনো তদারকিই করেনি।
সাইফ ইসলাম দিলাল বলেন, বাজারে বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা দেওয়ার দায়িত্ব নিয়ন্ত্রক সংস্থার। একটি কোম্পানি যখন পুঁজিবাজারে নতুন আসে তখন কৃত্রিমভাবে দর বাড়ানো বা লাভবান হওয়ার জন্য বিভিন্ন কারসাজি করা নতুন কিছু নয়। তবে এই বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ দেখবে এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা দেবে। কিন্তু শুরু থেকেই এ ব্যাপারে তাদের দায়িত্বশীল ভূমিকা দেখা যাচ্ছে না। আর নিয়ন্ত্রক সংস্থা যদি যথাযথ তদারকি না করে তাহলে পুঁজিবাজার কখনোই স্বাভাবিক অবস্থায় আসবে না। বাজারে কোনো একটি দল লাভবান হওয়ার জন্য ছোট কোম্পানি ধরে তার দর বাড়াতেই থাকে। তখন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ওই শেয়ারের দিকে ঝুঁকে পড়ে এবং কারসাজিকারকরা সেটি থেকে বেরিয়ে যায়। এতে আটকে পড়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা তাদের সর্বস্ব হারাচ্ছে। এই ঘটনা বাজারে অহরহ হচ্ছে। আর এসবের জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা দায়ী। তারা বাজারে ভালো কোম্পানিগুলোকে আনতে পারছে না, যা আনছে তা বলার মতো নয়।
আহসানুল আলম পারভেজ বলেন, দেশের সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশন এবং স্টক মার্কেট বিকলাঙ্গ। মানে আমাদের এসইসি’ই বিকলাঙ্গ। ফলে এসইসির কাছ থেকে স্বাভাবিক ব্যবহার আশা করা যায় না। আর এসইসিকে বিকলাঙ্গ বলার কারণ হচ্ছে, আর্থিক সংস্থাগুলোর হেড বা প্রধান যিনি থাকেন তার একটি মেয়াদ থাকে। ওই মেয়াদের মধ্যে বোঝা যায় এসইসির নেতৃত্বটি কতটুকু সক্ষম বা যোগ্য। এই জায়গায় এসইসির নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। তাছাড়া আমরা কল্পনা করতে পারি, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে তিন মেয়াদে রাখা হতে পারে। এটা দিলেই বোঝা যাবে দেশের অর্থনীতির কী অবস্থা হয়? কাজেই এই জায়গায় আমাদের একটি গলদ রয়েই গেছে। আমরা পুঁজিবাজারের ওপর আস্থাহীনতার কথা বলি। আমি মনে করি নিয়ন্ত্রক সংস্থার ওপর জনগণের আস্থা নেই। নিয়ন্ত্রক সংস্থা জনগণের মধ্যে আস্থা আনতে পারেনি। অথচ সেই নেতৃত্বের মেয়াদ অজ্ঞাত কারণে বারবার প্রসারিত হচ্ছে।
শ্রুতিলিখন: রাহাতুল ইসলাম