পুঁজিবাজার ভালো অবস্থানে আছে সেটি দুভাবে বোঝা যায় এক. বাজারে অনেক বিনিয়োগকারী রয়েছে; দুই. স্বাভাবিক লেনদেন হচ্ছে। স্বাভাবিক লেনদেনের মানে দেশের অর্থনীতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে দৈনিক লেনদেন। জিডিপির গ্রোথ বেড়েছে এবং জিডিপির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন আট শতাংশের ওপরে। সে হিসেবে এখন পুঁজিবাজারে দৈনিক লেনদেন হওয়ার কথা তিন হাজার কোটি টাকা। সরকার ও বিএসইসি বলছে, বাজার ভালো আছে, কিন্তু বাজারের যে অবস্থা তাতে তাদের কথার সঙ্গে বাস্তবের বিশাল পার্থক্য। আসলে তাদের মধ্যে ভুল ধারণা কাজ করছে। যারা ন্যূনতম পুঁজিবাজার বোঝে তাদের মধ্যে যদি জরিপ চালানো হয় তাহলে ৮০ শতাংশের বেশি লোকই বলবে, বাজার এখন নাজুক অবস্থায় রয়েছে। সেখানে কীভাবে সরকার ও বিএসইসি বলে বাজার ভালো আছে? গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়।
হাসিব হাসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক এম শাহজাহান মিনা এবং আইসিএবির কাউন্সিল মেম্বার মাহমুদ হোসেন।
অধ্যাপক এম শাহজাহান মিনা বলেন, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা নেই। ২০১০ সালে বাজার ধসের পর ৯ বছরে অনেক নিয়মনীতি পরিবর্তন করা হয়েছে, কিন্তু তাতে কোনো ইতিবাচক প্রভাব দেখা যাচ্ছে না। আবার সরকার ও বিএসইসি’র পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এখন বাজার যে কোনো সময়ের চেয়ে ভালো। বাজার ভালো আছে, সেটি কীভাবে বুঝব? বাজার ভালো অবস্থানে আছে সেটি দুভাবে বোঝা যায়। একটি হচ্ছে, বাজারে অনেক বিনিয়োগকারী রয়েছে ও স্বাভাবিক লেনদেন হচ্ছে। স্বাভাবিক লেনদেন বলতে বুঝি, দেশের অর্থনীতি এগিয়ে যাচ্ছে, জিডিপি গ্রোথ বেড়েছে এবং জিডিপির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন আট শতাংশের ওপরে। সে হিসেবে এখন পুঁজিবাজারে দৈনিক লেনদেন হওয়ার কথা তিন হাজার কোটি টাকা। সেখানে মাত্র ৩০০ কোটি টাকা লেনদেন হচ্ছে। সরকার ও বিএসইসি বলছে, বাজার ভালো আছে, কিন্তু বাজারের যে অবস্থা তাতে তাদের কথার সঙ্গে বাস্তবের কোনো মিল নেই। আসলে তাদের মধ্যে বড় ধরনের একটি ভুল ধারণা কাজ করছে। যারা ন্যূনতম পুঁজিবাজার বোঝে তাদের মধ্যে যদি জরিপ চালানো হয়, তাহলে ৮০ শতাংশের বেশি মানুষই বলবে, বাজার এখন নাজুক অবস্থায় রয়েছে। সেখানে কীভাবে সরকার ও বিএসইসি বলে বাজার ভালো আছে। ২০১০ সালের পর বাজার যখনই স্থিতিশীল অবস্থানে যাওয়ার চেষ্টা করে, তখনই কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্ন ধরনের নিয়মনীতি পরিবর্তন করে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে বাধা সৃষ্টি করে। ডিএসই’র কিছু নিয়মকানুন রয়েছে, অর্থাৎ যখন বাজারে কোনো শেয়ারের দর বাড়ে, তখনই কারণ দর্শাতে হয়। বিএসইসির ক্ষেত্রেও ঠিক এমন অবস্থা। এই তিনটি নিয়ন্ত্রক সংস্থা যেসব সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, তাতে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা মনে করে তারাই বাজারকে ভালো করতে চায় না।
মাহমুদ হোসেন বলেন, পুঁজিবাজারসংক্রান্ত অনেক আইনকানুন করা হয়েছে, কিন্তু সেগুলো সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে না। আইনকানুনগুলো খাতা-কলমে রয়ে গেছে। বাজারে কৌশলগত অংশীদার অন্তর্ভুক্ত করা হলো, কিন্তু এখন পর্যন্ত তারা কতটুকু ভূমিকা পালন করেছে? নাকি তাদের ডিএসই বোর্ডে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে দেওয়া হচ্ছে না? পুজিবাজারকে ডিমিউচুয়ালাইজেশন করা হলো। যে উদ্দেশ্যে করা হলো সেটির সঠিক বাস্তবায়ন দেখা যাচ্ছে না। ইস্যু ম্যানেজাররা তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করছেন না। কপার টেক নিয়ে ডিএসই ও বিএসইসি ভিন্ন ধরনের সিদ্ধান্ত নিল। এখন আবার সেই কপারটেক তালিকাভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। আসলে সঠিক নিয়মে বাজার চলছে না। এমন অবস্থায় বাজার ভালো হবে কীভাবে আশা করা যাবে?
শ্রুতিলিখন: শিপন আহমেদ