Print Date & Time : 19 June 2025 Thursday 4:21 pm

বাজার পতনে মনস্তাত্ত্বিক কারণই বেশি দায়ী

প্রতি রবি থেকে বৃহস্পতিবার পুঁজিবাজারের বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে এনটিভি ‘মার্কেট ওয়াচ’ অনুষ্ঠানটি সম্প্রচার করে। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ বিবেচনায় তার গুরুত্বপূর্ণ অংশ নিয়ে শেয়ার বিজের নিয়মিত আয়োজন ‘এনটিভি মার্কেট ওয়াচ’ পাঠকের সামনে তুলে ধরা হলো:

পুঁজিবাজারে সঠিক কী কারণে পতন হয় সেটি আমরা অনুমান করতে পারি মাত্র। বাজার পতনের প্রকৃত কারণ জানতে হলে অধিক উন্নত পর্যায়ের অনুসন্ধানী দল দরকার, যা আমাদের নেই। বাজারে ফান্ডামেন্টাল, টেকনিক্যালসহ যত কারণ আছে, এগুলো যত না কাজ করে তার থেকে বেশি কাজ করে বিনিয়োগকারীদের মানসিকতা বা আবেগপ্রবণ মনোভাব। কাজেই মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব থেকে আমাদের আরও সচেতন হতে হবে। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়। হাসিব হাসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আলোচক ছিলেন টেকনিক্যাল অ্যানালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ট্যাব) সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ মহসীন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক মো. সালাউদ্দিন চৌধুরী, এফসিএ।

মুহাম্মদ মহসীন বলেন, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীদের মনোভাব যদি স্বল্প সময়ের হয় তাহলে লাভ করা খুবই কষ্টকর। এখানে কোম্পানির ইতিহাস যাচাই-বাছাই করে দীর্ঘ সময়ের জন্য বিনিয়োগ করে অপেক্ষা করতে হবে। তাছাড়া পৃথিবীর সব দেশেই স্বল্প সময়ে মুনাফা করা কষ্টকর। পুঁজিবাজারে সাধারণত ৯০ শতাংশ মানুষ লুজার হিসেবে থাকে এবং বাকি ১০ শতাংশ মানুষ মুনাফা করে। আর এর মধ্যে এক শতাংশ মানুষ সর্বোচ্চ মুনাফা করে। আর এই নিয়ম সামগ্রিক অর্থনীতিতেও চলে। যেমন কিছুদিন আগে এক অনুসদ্ধানী দল বলেছে, ২০৩০ সালের মধ্যে পৃথিবীর এক শতাংশ ধনীর কাছে পৃথিবীর ৬৫ শতাংশ সম্পদ চলে যাবে। তাছাড়া আমাদের দেশের পুঁজিবাজারের অধিকাংশ বিনিয়োগকারী খুবই অল্প জ্ঞান ও অনুশীলন নিয়ে বাজারে সম্পৃক্ত হওয়ায় মুনাফা করতে ব্যর্থ হয়। লক্ষ্য করলে দেখবেন, গত কয়েক মাসে সূচক ছয় হাজার ৪০০ পয়েন্ট থেকে পাঁচ হাজার ৫০০ পয়েন্টে নেমে এসেছিল। প্রায় ৯০০ পয়েন্টের মতো পতন হয়েছে এই কয়েক দিনে। অর্থাৎ গড়ে ১৬ থেকে ১৭ শতাংশের মতো সূচকের পতন হয়েছিল, যদিও এখন আবার একটু বেড়েছে। ফলে খুব স্বাভাবিকভাবেই প্রতিটি পোর্টফলিওর ভ্যালু গড়ে ১৬ থেকে ১৭ শতাংশ কম থাকার কথা। কিন্তু কিছু পোর্টফোলিওর ভ্যালু তো অবশ্যই ৩০-৪০ শতাংশ কমবেই। অনুরূপভাবে কিছু পোর্টফোলিও এরই মধ্যে ৫-১০ শতাংশ মুনাফায় ছিল। সব মিলিয়ে ১৬-১৭ শতাংশ বাজার পতনের মধ্যে এটি ঘটেছে। এছাড়া বাজার সঠিক কী কারণে পরে সেটি আমরা মাত্র অনুমান করতে পারি। বাজার পতনের প্রকৃত কারণ জানতে হলে অধিক উন্নত পর্যায়ের অনুসন্ধানী দল দরকার, যা আমাদের নেই। বাজারে ফান্ডামেন্টাল, টেকনিক্যালসহ যত কারণ আছে এগুলো যত না কাজ করে তার থেকে বেশি কাজ করে বিনিয়োগকারীদের মানসিকতা বা আবেগপ্রবণ মনোভাব। কাজেই মনস্তাত্ত্বিক  প্রভাব থেকে আমাদের আরও সচেতন হতে হবে।

মো. সালাউদ্দিন চৌধুরী বলেন, একাধারে পুঁজিবাজার বাড়বে এটি আশা করা ঠিক নয়। সব দেশেই এটি ওঠানামার মধ্যে থাকে এবং এটাই বাজারের প্রকৃত ধর্ম। তবে অধিকাংশ দেশেই এই ওঠানামার মধ্য দিয়েই বাজার অনেক ওপরে চলে গেছে, কিন্তু আমাদের দেশে তা হচ্ছে না। কারণ ২০১০ সালে সূচক প্রায় ১০ হাজার পয়েন্টের কাছাকাছি চলে গিয়েছিল এবং সেখান থেকেই বড় ধরনের পতন হয়ে ধস নামে। ধসের এত বছর পর আমরা মাত্র ছয় হাজার পয়েন্ট অতিক্রম করেছিলাম, কিন্তু সেটিও টেকসই হয়নি। কাজেই দেশের বাজারে আস্থাহীনতা অনেক বেশি। ব্যাংকের ব্যাপারে সরকার থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এতগুলো পদক্ষেপ নিয়েছে, তারপরও বাজার ভালো আচরণ করছে না কেন? কথা হচ্ছে, বিনিয়োগকারীরা যদি বাজারের প্রতি আস্থা না পায় তাহলে যতই পদক্ষেপ নেওয়া হোক না কেন কোনো লাভ হবে না। তাই এই জায়গাটি আগে নিশ্চিত করতে হবে, তারপর অন্য কিছু ঠিক করতে হবে।

 

শ্রুতিলিখন: রাহাতুল ইসলাম