**দেশের পণ্য বাজার প্রতারনামূলক
**২০৪১ সালের পর কুড়েঘর জাদুঘরের উপকরণে পরেণত হবে
**আইএমএফেরর শর্তের কারণে দ্রব্যমূল্য বাড়ানো হয়নি
নিজস্ব প্রতিবেদক : পুরো চালের বাজার ব্যবস্থাকে প্রতারণামূলক বলে মন্তব্য করেছেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক ড. শামসুল আলম। তিনি বলেন, আমাদের বাজার ব্যবস্থাকে সংস্কার করতে হবে। চালার বাজার পুরো প্রতারণামূলক। যে নামের ধান থেকে চাল তৈরি হয়, বাজারে সেই নামে চাল পাওয়া যায় না। উদাহরণস্বপূর তিনি বলেন, স্বর্ণা চাল মোটা। এটাকে চিকন করে পূষ্মমতি নামে বিক্রি করা হয়। তিনি আরো উল্লেখ করেন, দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও সরকারি সেবা প্রদানে দক্ষতার ঘাটতি থাকতে পারে। কিন্তু অর্থনৈতিক উন্নতি যে হচ্ছে, তা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। তিনি উল্লেখ করেন, দেশ অগ্রগতির ধারায় এগিয়ে যাচ্ছে। এ অগ্রগতির ধারায় ২০৪১ সালের পর কুড়ে ঘর জাদুঘরের উপকরণে পরিণত হবে।
রাজধানীর শেরে বাংলানগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে আজ (মঙ্গলবার) ডেভলপমেন্ট জার্নালিস্ট ফোরাম অব বাংলাদেশ (ডিজেএফবি) আয়োজিত উন্নয়ন সংলাপে তিনি এসব কথা বলেন। ডিজেএফবি’র সাধারণ সম্পাদক সাহানোয়ার সাইদ শাহীনের সঞ্চালনায় উন্নয়ন সংলাপে সভাপতিত্ব করেন ডিজেএফবি সভাপতি হামিদ-উদ-জামান।
পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী বলেন, পলিশ করে চালের ওপরের আবরণ ফেলে দেয়া হয় এবং সেটি চিকন করে বাজারে বিভিন্ন নামে বিক্রি করা হয়। কোটি কোটি টাকার যন্ত্রপাতি কিনে এনে চিকন চাল তৈরি করা হয়। তিন ধরনের মেশিনে পলিশ করে মোটা চাল চিকন করা হয়। এ বিষয়ে দ্রুত পক্ষেপ নেয়া হবে বলে উল্লেখ করেন প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, চালের প্রকৃত পুষ্টি চালের ওপরের স্তরে থাকে। অথচ এটা ছেটে ফেলে দেয়া হয়। চালের বাজারে এমন প্রতারণা চলতে পারে না।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের সঙ্গে দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধির কোন সম্পর্ক নেই জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আইএমএফ ঋণ না দিলেও আমাদের কিছু কিছু জায়গায় দাম বাড়ানোর প্রয়োজন হতো। আইএমএফ আমাদের মোট জিডিপির তুলনায় যে ঋণ দিয়েছে সেটার পরিমাণ খুবই কম। এ জন্য বলি আইএমএফের শর্তে দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়েনি। আইএমএফ ঋণ না দিলেও আমাদের ভর্তুকি কমাতে হতো এবং কিছু দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়াতে হতো। সুতরাং আইএমএফ এর ঋণের সঙ্গে জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধির কোন সম্পর্ক নেই। পণ্যের দাম বৃদ্ধির শর্ত আইএমএফ-এর ঋণে নেই। যা চেয়েছি তার থেকে বেশি পেয়েছি। আমাদের সার্বিক অর্থনীতির প্রতি আইএিএফ আস্থাশীল বলেই ঋণ দিয়েছে। ঋণ দিতে পেরে আইএমএফ খুব খুশি। পাকিস্তান এখনও আইএমএফ থেকে ঋণ পায়নি। কিন্তু আমরা যা চেয়েছি তার চেয়ে বেশি পেয়েছি।’
আইএমএফের ঋণ কোন খাতে ব্যয় হবে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আইএমএফ মূলত বাজেট সহায়তা দিহেবে ঋণ দিয়েছে। কাজেই বাজেট বাস্তবায়নেই এ ঋণ বিতরণ করা হবে।’
দেশে বৈষম্য কমছে দাবি করে তিনি বলেন, বৈষম্য সব দেশেই বাড়ে। সামাজিক বৈষম্য কমাতে আমরা কাজ করছি। আমরা আড়াই কোটি মানুষকে সাহায্য দিয়েছি। বিনামূল্য বই দিয়েছি বৈষম্য কমিয়ে রাখার জন্য। তিনি বলেন, যে অগ্রগতির ধারায় এগিয়ে যাচ্ছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে ২০৪১ সালে কুড়ে ঘর জাদুঘরের উপকরণে পরিণত হবে। তিনি বলেন, ‘এখন সবার হাতে মোবাইল, ঘরে কালার টিভি এবং কেউ খালি পায়ে হাঁটে না। তার মানে বৈষম্য কমছে। বৈষম্য কমাতে গিয়ে আমরা নানা পদক্ষেপ নিচ্ছি।’
চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে সাধারণ মূল্যস্ফীতির হার ৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ, গত বছরের জানুয়ারি মাসে এ হার ছিল ৫ দশমিক ৮৬ শতাংশ। এক বছরের ব্যবধানে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ৪৬ শতাংশ। নানা কারণে মূল্যস্ফীতি বাড়তেই থাকে। তিনি বলেন, পণ্যের বর্ধিত মূল্য হয়তো কখনও পূর্বের অবস্থায় ফিরে যাবে না, তবে এটি অনেকটা কমে আসবে।
মূল্যস্ফীতি প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী বলেন, উৎপাদন উপকরনের দাম বেড়েছে। পাশাপাশি বেড়েছে জ্বালানি তেলের দাম। এর ফলে মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৯ শতাংশ পর্যন্ত হয়েছিল। গত এক বছরে ৪৬ শতাংশ বেড়েছে। তবে কয়েক মাস ধরে ধীরে ধীরে কমে আসছে মূল্যস্ফীতির প্রবণতা। মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মজুরি হারও বাড়ছে। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে মজুরির হার বেড়ে ৭ দশমিক ০৬ শতাংশ হয়েছে, গত বছরের জানুয়ারি মাসে ছিল ৫ দশমিক ৯৩ শতাংশ। মজুরি ভালোই বেড়েছে।’
দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি প্রসঙ্গে ড. শামসুল আলম বলেন, গত এক মাসে রেমিট্যান্সের ভালো প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর সময়ে রেমিট্যান্স এসেছিল ১০ দশমিক ৪৯ বিলিয়ন ডলার। জানুয়ারি মাসের রেমিট্যান্স যোগ করলে সেটি দাঁড়াবে ১২ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলার। তিনি বলেন, রিজার্ভের প্রধান উপাদান প্রবাসী আয় ও রপ্তানি আয়। বর্তমানে এটি বিষয়ই ঊধ্বমুখী প্রবণতায় রয়েছে। ফলে রিজার্ভের তথ্যও অনেক ইতিবাচক হতে শুরু করেছে। জুলাই থেকে ডিসেম্বর সময়ে রপ্তানি আয় ছিলো ২৭ দশমিক ৩১ বিলিয়ন ডলার। জানুয়ারি মাসের রপ্তানি আয় যোগ করলে এ অংক ৩২ দশমিক ৪৪ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হবে। তার মানে এক মাসে রপ্তানি আয়ে বড় ধরনের উল্লম্ফন হয়েছে।
অনুষ্ঠানে অংশগ্রহন করেন ডিজেএফবির সহ-সভাপতি মাসুম বিল্লাহ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মফিজুল সাদিক, অর্থ সম্পাদক সাইদ রিপন, দপ্তর সম্পাদক এম আর মাসফিসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা।