চলতি বাজেটে অর্থের ঘাটতি রয়েছে। সরকার ব্যাংকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে ব্যাপক ঋণ নেওয়া প্রায় শেষ করেছে। কিন্তু উন্নয়ন কাজ তো করতে হবে। এখন ভরসা বা আশার আলো পুঁজিবাজার। এটি যদি ভালো করতে না পারে, তাহলে অর্থনীতির জন্য সংকট রয়ে যাবে। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়।
হাসিব হাসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পুঁজিবাজার বিশ্লেষক হাসান মাহমুদ বিপ্লব ও এএফপির ব্যুরো চিফ শফিকুল আলম।
হাসান মাহমুদ বিপ্লব বলেন, বকেয়া আদায় নিয়ে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ও বহুজাতিক কোম্পানি গ্রামীণফোনের সঙ্গে একটি দ্বন্দ্ব চলছে। এতে কিছুটা হলেও সাধারণ ও বিদেশি বিনিয়োগকারীর মধ্যে আস্থার সংকট দেখা গেছে। এখানে আসলে সমন্বয়ের উদ্যোগের অভাব রয়েছে। এ বিষয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রতিবাদ করা উচিত ছিল। সম্প্রতি স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত, সংবিধিবদ্ধ সরকারি প্রতিষ্ঠাসহ স্বশাসিত সংস্থাগুলোর প্রায় ৬৮ প্রতিষ্ঠানের উদ্বৃত্ত দেশের উন্নয়নকাজে লাগাতে চায় সরকার। এমন বিধান রেখে নতুন একটি আইন অনুমোদন করা হয়েছে। কিন্তু এর মধ্যে পুঁজিবাজারে অন্তর্ভুক্ত সরকারি প্রতিষ্ঠানসহ আরও অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সমস্যা হচ্ছে, যদি বাজারে অন্তর্ভুক্ত কোম্পানিগুলোর অর্থ নিয়ে যায়, সেক্ষেত্রে বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এখানেও নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে কোনো হস্তক্ষেপ করতে দেখা যায়নি।
তিনি আরও বলেন, বাজার ভালো হলে অর্থপ্রবাহ বাড়বে। বাজার খারাপ হলে অর্থ বাজার থেকে ‘নাই’ হয়ে যাবে। তাই বাজারে ভালো কোম্পানি আনার বিকল্প নেই। আবার বাজেটে অর্থের ঘাটতি রয়েছে। সরকার ব্যাংকসহ অনেক প্রতিষ্ঠান থেকেই ঋণ নেওয়া প্রায় শেষ করেছে। উন্নয়ন কাজ তো করতে হবে। এখন আশার আলো হচ্ছে ক্যাপিটাল মার্কেট। এটি যদি ভালো করতে না পারে, তাহলে অর্থনীতির জন্য সংকট রয়ে যাবে।
শফিকুল আলম বলেন, গ্রামীণফোনের সঙ্গে বাজারে বিদেশি বিনিয়োগের একটি সম্পর্ক রয়েছে। এটি সবাইকে মানতেই হবে। গ্রামীণফোন হচ্ছে দেশের বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর মধ্যে অন্যতম। কথা হচ্ছে, সরকার এটি কীভাবে পরিপালন করছে। যারা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে চায়, তারা এ বিষয়টি বিবেচনা করে। সম্প্রতি গ্রামীণফোন নিয়ে একটি ইস্যু তৈরি হয়েছে। যদি সে ইস্যুর অর্থ সরকার স্বচ্ছভাবে নেয়, সেক্ষেত্রে কোনো কথা নেই। তবে সে স্বচ্ছতা দৃশ্যমান হতে হবে। আর যদি এ বিষয়ে স্বচ্ছতা না থাকে, তাহলে বাজারে নেতিবাচক প্রভাব দেখা দেবে। কারণ, এ কোম্পানিটি বাজারে আসায় অনেক দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারী বাজারে বিনিয়োগ করেছে। তাই বিষয়টি সরকারকে ভাবতে হবে। আবার আমাদের ভিশন রয়েছে ২০৪১ সালে বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোর কাছাকাছি থাকব। যদি দেশকে এ অবস্থানে নিতে হয়, সেক্ষেত্রে কাজে স্বচ্ছতা আনতে হবে এবং বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।
তিনি আরও বলেন, অর্থনীতির আকার অনুযায়ী বাজারে গভীরতা অনেক কম। বাজারকে শক্তিশালী করতে হলে ভালো কোম্পানি আনতে হবে এবং স্বচ্ছতা থাকতে হবে। বাজারে নামমাত্র কয়েকটি মৌলভিত্তির কোম্পানি রয়েছে। যখন বাজারে কোনো একটি ভালো কোম্পানি আসে, তখন এমনিতেই বাজার গতিশীলতা ফিরে পায়। যখন গ্রামীণফোন বাজারে আসে, তখন বাজারে এর প্রভাব দেখা গেছে। দেশে এখন অনেক বেসরকারি, রাষ্ট্রায়ত্ত ও বহুজাতিক কোম্পানি রয়েছে, যাদের এখনও বাজারে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। অথচ বহুজাতিক কোম্পানিগুলো অন্য দেশের পুঁজিবাজারে ঠিকই অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
শ্রুতিলিখন: শিপন আহমেদ