মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে বাজার মূলধনের ৬০ শতাংশের বেশি দখল করে আছে চারটি খাতের কোম্পানি। এগুলো হচ্ছে ব্যাংকিং খাত, ওষুধ ও রসায়ন খাত, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাত এবং টেলিযোগাযোগ খাত। এসব প্রতিষ্ঠানগুলোর দখলে রয়েছে বাজার মূলধনের ৬০ দশমিক ২৭ শতাংশ। অন্যদিকে বাজার মূলধনে তালিকাভুক্ত পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণ রয়েছে ৩২ শতাংশের বেশি। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) এক প্রতিবেদন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, বর্তমানে বাজার মূলধনে সবচেয়ে বেশি অবদান রয়েছে ব্যাংকিং খাতের। সম্প্রতি এ খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ারের দর বৃদ্ধিতে বাজার মূলধনে এ খাতের অবদান বেড়ে গেছে। বাজার মূলধনের ১৭ দশমিক ৩১ শতাংশ রয়েছে এ খাতের অংশগ্রহণ। পরের অবস্থানে থাকা ওষুধ ও রসায়ন খাতের অবদান ১৫ দশমিক ৪৯। এছাড়া বাজার মূলধনে ১৪ দশমিক ৯৭ শতাংশ অবদান রয়েছে টেলিযোগাযোগ খাতের। অন্যদিকে বাজার মূলধনে ১২ দশমিক ৫০ অবদান রেখে চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাত।
বিষয়টি নিয়ে আলাপ করলে অর্থনীতিবিদ আবু আহমেদ বলেন, ‘আমাদের দেশে বহুজাতিক ও ভালো মানের প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা তুলনামূলক কম। বাজার মূলধন বাড়ানোর জন্য এসব প্রতিষ্ঠান বাজারে আনা জরুরি। কিন্তু গ্রামীণফোনের পর তেমন কোনো প্রতিষ্ঠান বাজারে তালিকাভুক্ত হতে দেখিনি। এমন কিছু প্রতিষ্ঠান বাজারে থাকলে বাজার মূলধন দ্রুত বৃদ্ধি পাবে।’
বাজারসংশ্লিষ্টরা বলেন, এসব খাতের বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থা ভালো। সেই জন্য এসব শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বেশি পরিলক্ষিত হয়। সে কারণে শেয়ারের দর বাড়ে। আর দর বাড়লে বাজার মূলধনে এর অংশগ্রহণও বেড়ে যায়। এছাড়া এসব প্রতিষ্ঠানে শেয়ারসংখ্যা তুলনামূলক বেশি। সে কারণে এসব খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর বাজার মূলধনে অবদান রাখতে সুবিধা হয়।
সংশ্লিষ্টদের মতে, বর্তমানে সবচেয়ে বেশি ঘুরে দাঁড়িয়েছে ব্যাংকিং খাত। এর মূল কারণ, ২০১০ সালের পর ব্যাংকের শেয়ারের দর অস্বাভাবিকহারে কমে যায়। কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দর চলে আসে অভিহিত দরের নিচে। ফলে ব্যাংকের বাজার মূলধন উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পায়। সম্প্রতি ব্যাংকগুলোর ভালো মুনাফার খবরে এ খাত আবারও ঘুরে দাঁড়িয়েছে। ফলে প্রতিটি ব্যাংকের শেয়ারের দরই বেড়েছে। যার প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়েছে বাজার মূলধনে। সে কারণে মোট বাজার মূলধনে এ খাতের অংশগ্রহণ অনেকাংশে বেড়েছে। এটা বাজারের জন্য ভালো লক্ষণ।
এ প্রসঙ্গে ডিবিএয়ের প্রেসিডেন্ট আহমেদ রশিদ লালী বলেন, ‘ব্যাংক হচ্ছে পুঁজিবাজারের সবচেয়ে শক্তিশালী খাত। এখান থেকে বেশিরভাগ সময়ই সন্তোষজনক রিটার্ন পেয়ে থাকেন। সেজন্য এসব শেয়ারের প্রতি সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বেশি দেখা যায়। তাছাড়া এ খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ার সংখ্যাও বেশি। সেজন্য এসব শেয়ারের দর একটু বাড়লেই বাজার মূলধনে এ খাতের অংশগ্রহণ বেড়ে যায়।’
অন্যদিকে মোট বাজার মূলধনের প্রায় ৩২ শতাংশ অবদান রয়েছে তালিকাভুক্ত পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের। এরা হচ্ছেÑগ্রামীণফোন, স্কয়ার ফার্মা, ব্রিটিশ-আমেরিকান টোব্যাকো, ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ ও লাফার্স সুরমা সিমেন্ট। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে গ্রামীণফোনের বাজার মূলধন রয়েছে ১৪ দশমিক ৩৬ শতাংশ। পরের অবস্থানে থাকা স্কয়ার ফার্মার দখলে রয়েছে ছয় দশমিক ১৪ শতাংশ। তৃতীয় অবস্থানে থাকা ব্রিটিশ-আমেরিকান টোব্যাকোর অংশগ্রহণ রয়েছে পাঁচ দশমিক ২৪ শতাংশ। এছাড়া বাজার মূলধনের তিন দশমিক ৪১ শতাংশ আইসিবি ও দুই দশমিক ২৬ শতাংশ অবদান রয়েছে লাফার্স সুরমা সিমেন্টের।