নিজস্ব প্রতিবেদক: গত সপ্তাহে লেনদেন হওয়া পাঁচ কার্যদিবসের দুই কার্যদিবসেই শেয়ারবাজারে ঢালাও দরপতন হয়েছে। এতে সপ্তাহজুড়ে দরপতনের পাল্লাই ভারী হয়েছে। ফলে সপ্তাহের ব্যবধানে প্রধান মূল্য সূচকের বড় পতন হয়েছে। সেই সঙ্গে বড় অঙ্কে বাজার মূলধন কমেছে। গত সপ্তাহজুড়ে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা কমেছে। প্রধান মূল্যসূচক কমেছে প্রায় ১০০ পয়েন্ট। আর বাজারটিতে যে কয়টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে, তার থেকে সাড়ে আটগুণের বেশি প্রতিষ্ঠানের দাম কমেছে। তবে গড় লেনদেনের পরিমাণ বেড়েছে।
দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেয়া অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে এটি শেয়ারবাজারের সপ্তম সপ্তাহ। এর আগে অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে আরও ছয়টি সপ্তাহ পার করেছে শেয়ারবাজার। সব মিলিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে লেনদেন হওয়া সাত সপ্তাহের মধ্যে ছয় সপ্তাহেই শেয়ারবাজারে দাম কমার তালিকায় বেশি প্রতিষ্ঠান নাম লিখিয়েছে। হাসিনার সরকার পতনের পর শেয়ারবাজারে উল্লম্ফন হলেও নতুন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর প্রথম দুই সপ্তাহে শেয়ারবাজারে বড় দরপতন হয়। তবে তৃতীয় সপ্তাহে এসে শেয়ারবাজারে ঊর্ধ্বমুখিতার দেখা মেলে। কিন্তু চতুর্থ সপ্তাহে আবার দরপতন হয়। পঞ্চম ও ষষ্ঠ সপ্তাহেও দরপতনের ধারা অব্যাহত থাকে। গত সপ্তাহের আগের সপ্তাহে অর্থাৎ অন্তর্বর্তী সরকারের ষষ্ঠ সপ্তাহে ডিএসইতে ১৪২টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার বিপরীতে ২১৩টির দাম কমে।
বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম কমার ধারা অব্যাহত থাকে অন্তর্বর্তী সরকারে সপ্তম সপ্তাহেও। গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে লেনদেন হওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে মাত্র ৪০টির স্থান হয়েছে দাম বাড়ার তালিকায়। বিপরীতে দাম কমেছে ৩৪৯টির। আর ৭টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। অর্থাৎ দাম বাড়ার তুলনায় দাম কমার তালিকায় ৮ দশমিক ৭২ শতাংশ বেশি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এতে গত সপ্তাহ ডিএসইর বাজার মূলধন ৯ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা বা ১ দশমিক ৪৩ শতাংশ বেড়েছে। সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসের লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৮৫ হাজার ৬২১ কোটি টাকা; যা আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ৬ লাখ ৯৫ হাজার ৫৭১ কোটি টাকা।
এদিকে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স গত সপ্তাহে কমেছে ৯৬ দশমিক ১৪ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৬৮ শতাংশ। এর আগের ছয় সপ্তাহে সূচকটি কমে ১৮৮ পয়েন্ট। ফলে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর শেয়ারবাজারে লেনদেন হওয়া সাত সপ্তাহে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক সব মিলিয়ে কমেছে ২৮৪ পয়েন্ট।
প্রধান মূল্যসূচকের পাশাপাশি গত সপ্তাহে কমেছে বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক। গত সপ্তাহে সূচকটি কমেছে ৪১ দশমিক ৫১ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৯৭ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি বাড়ে ৫ দশমিক ৬৯ পয়েন্ট বা দশমিক ২৭ শতাংশ।
তবে ইসলামি শরিয়াহ ভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই শরিয়াহ সূচক গত সপ্তাহে বেড়েছে। গত সপ্তাহে এ সূচকটি বেড়েছে ৪ দশমিক ১৩ পয়েন্ট বা দশমিক ৩৩ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি বাড়ে ১২ দশমিক ১৩ পয়েন্ট বা দশমিক ৯৭ শতাংশ। প্রধান মূল্যসূচকের বড় পতনের পাশাপাশি গত সপ্তাহে লেনদেনের গতি বেড়েছে। গত সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৬৭৯ কোটি ৩০ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় ৬১৩ কোটি ৮ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন বেড়েছে ৬৬ কোটি ২২ লাখ টাকা বা ১০ দশমিক ৮০ শতাংশ।
সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে টাকার অঙ্কে বেশি লেনদেন হয়েছে ব্র্যাক ব্যাংকের শেয়ার। কোম্পানিটির শেয়ার প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে ৪৮ কোটি ৩৯ লাখ টাকা, যা মোট লেনদেনের ৭ দশমিক ১২ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা গ্রামীণফোনের শেয়ার প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে ৩৮ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। প্রতিদিন গড়ে ৩১ কোটি ১৯ লাখ টাকা লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে ছিল ইসলামী ব্যাংক।
এছাড়া লেনদেনের শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় ছিলÑ সোনালী আঁশ, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ইবনে সিনা, লিন্ডে বাংলাদেশ, লাভেলো আইসক্রিম, অগ্নিসিস্টেম এবং স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস।