Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 4:30 pm

বাজার সুবিধা নিতে পারছে না বিপিসি

সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: সারাবছর বাংলাদেশে অভ্যন্তরীণ চাহিদা প্রায় ৬৫ লাখ টন। এর বিপরীতে বাংলাদেশে দেশের একমাত্র জ্বালানি তেল নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরশনের সব ধরনের জ্বালানি তেলের মজুত সক্ষমতা প্রায় ১৩ লাখ টন, যা বর্তমান প্রেক্ষাপটে কম। আর সক্ষমতা বাড়ানো গেলে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়লেও লোকসানের পরিমাণ কম কিংবা দাম কমলে মুনাফা বেশি হতো।

বাংলাদেশে পেট্রোলিয়াম করপোরেশন সূত্রমতে, সারা বছরে দেশে অভ্যন্তরীণ চাহিদা প্রায় ৬৫ লাখ টন। এর বিপরীতে বাংলাদেশে দেশের একমাত্র জ্বালানি তেল নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরশনের (বিপিসি) সব ধরনের জ্বালানি তেলের মজুত সক্ষমতা ১৩ লাখ টন। এর মধ্যে ইস্টার্ন রিফাইনারির মজুত সক্ষমতা পাঁচ লাখ মেট্রিক টন, পদ্মা অয়েলের দুই লাখ ৮৯ হাজার মেট্রিক টন, যমুনা অয়েলের দুই লাখ ১৫ হাজার টন, মেঘনার দুই লাখ ৩২ হাজার টন এবং অন্যান্য সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর ৬৪ হাজার টন। আবার পণ্যভিক্তিক মজুত সক্ষমতার দিকে ডিজেলের পরিমাণ ছয় লাখ ১৫ হাজার টন, ক্রুড অয়েল দুই লাখ ২৫ হাজার, ফার্নেস অয়েল এক লাখ ৫০ হাজার জেট অয়েল ৬৫ হাজার মেট্রিক টন এবং অন্যান্য জ্বালানি পণ্য মজুত সক্ষমতা আছে দুই লাখ ২৫ হাজার মেট্রিক টন।

অন্যদিকে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ব্লুমবার্গের তথ্যানুসারে, মহামারি করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারে সব ধরনের অপরিশোধিত ও পরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম বাড়ছে। গত সাত বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ দামে ব্রেন্ট ক্রুড অয়েল বিক্রি হচ্ছে। বর্তমানে ব্যারেলপ্রতি প্রায় ৮৮ ডলারে উঠেছে এর দাম। আর গত এক মাসের ব্যবধানে ব্রেন্ট ক্রুড অয়েলের দাম বাড়ার হার ২৩ শতাংশ। এছাড়া বিশ্ববাজারে পরিশোধিত জ্বালানির দামও বেড়েছে। বর্তমানে ডিজেল ব্যারেলপ্রতি ১০৫ ডলারের বেশি বুকিং হচ্ছে। বাজার পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, চলতি বছরের প্রথম সপ্তাহে পাঁচ দশমিক ১২ শতাংশ বেড়ে প্রতি ব্যারেল ব্রেন্ট ক্রুড অয়েলের দাম ৮১ দশমিক ৭৬ ডলারে উঠে আসে। দ্বিতীয় সপ্তাহে পাঁচ দশমিক ৭৭ শতাংশ বেড়ে প্রতি ব্যারেলের দাম দাঁড়ায় ৮৬ দশমিক ৪৭ ডলার। এক মাস আগে এই তেলের দাম ছিল ৭১ দশমিক ৫৭ ডলার।

গত রোববার বিশ্ববাজারে ক্রুড অয়েলের দাম ছিল ব্যারেলপ্রতি ৮৭ দশমিক ৮৯ ডলার। মাসের ব্যবধানে দাম বাড়ল ২৩ শতাংশ। ডব্লিউটিআই ক্রুড অয়েলের দামও ঊর্ধ্বমুখী। মঙ্গলবার এ তেলের দাম ছিল প্রতি ব্যারেল ৮৫ দশমিক ১৪ ডলার।

যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ ব্যাংক গোল্ডম্যান স্যাকস বলছে, তেলের বাজারে সরবরাহ ঘাটতির পরিমাণ বিস্ময়কর হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেইসঙ্গে ওপেকের তেল সরবরাহের সক্ষমতাও কমছে। এই বাস্তবতায় জ্বালানি তেলের দাম চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে ১০০ ডলার এবং আগামী বছরের শুরুতে ১০৫ ডলারে উঠতে পারে। আর সরবরাহ কমার কারণে উন্নত দেশগুলোর তেলের মজুত ২০০০ সালের পর সর্বনি¤œ পর্যায়ে নামবে।

জ্বালানি সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০২১ সালের লকডাউনের সময় অধিক জ্বালানি তেল মজুত হয়ে গিয়েছিল। তখন অয়েল ট্যাংকারসহ বেসরকারি রিফাইনারিগুলোকে ট্যাংক ভাড়া নিয়ে তেল মজুত করতে হয়েছিল। এমনকি আমদানিকৃত তেল জাহাজে বসিয়ে রাখতে হয়। এরপর থেকে ২৮ ডলারের তেল এখন ৯০ ডলারে বিক্রি হচ্ছে। আমাদের মজুত সক্ষমতা যদি হ্রাস পেয়ে ৩০ লাখ টন হতো, তাহলে দামের হ্রাস ও বৃদ্ধিতে তেমন প্রভাব পড়ত। এছাড়া অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কথা তো কেউ জানে না। তাই আমাদের নীতিনির্ধারকদের উচিত মজুত সক্ষমতা বাড়ানো। এ খাতে প্রয়োজনে বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো যেতে পারে। এতে আমাদের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। তা না হলে কিছুদিন পরপর ডিজেল, পেট্রোল, ফার্নেস, বিটুমিনসহ অন্য সব জ্বালানির দামও বাড়বে। এতে বিনিয়োগ ও প্রবৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হবে।

নাম প্রকাশে অনচ্ছিুক এক মহাব্যবস্থাপক শেয়ার বিজকে বলেন, বেন্ট ক্রুড অয়েল ৯০ ডলার এবং পরিশোধিত জ্বালানি ডিজেল ১০৫ ডলারের বেশি করে কিনতে হয়েছে। বর্তমানে শুধু ডিজেলে লিটারপ্রতি পাঁচ টাকা করে লোকসান গুনতে হচ্ছে। আর বাজার পর্যবেক্ষণে বলা যাচ্ছে দাম আরও বাড়বে। আমাদের মজুত সক্ষমতা বাড়ানো গেলে হয়তো লোকসান কম হতো। আর মজুত সক্ষমতা বাড়ানো নিয়ে সম্প্রতি একটি সভা হওয়ার কথা ছিল।

পরে এ বিষয়ে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের পরিচালক (পরিকল্পনা ও পরিচালন) খালিদ আহম্মেদ কোনো ধরনের মন্তব্য করতে রাজি হননি। উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক সময়ে সরকার দেশের বাজারের জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় করে। এতে ডিজেলে লিটারপ্রতি একবারে ১৫ টাকা দাম বাড়ানো হয়।