নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের পুঁজিবাজারে বাজেট-পরবর্তী প্রথম কার্যদিবস ছিল গতকাল রোববার। এদিন পুঁজিবাজারে বড় ধরনের দরপতন হয়েছে। প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) এদিন লেনদেন হওয়া বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম কমেছে। তাতে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স কমেছে ৬৬ পয়েন্ট। ফলে ডিএসইএক্স সূচকটি প্রায় ৩৮ মাস আগের অবস্থানে ফিরে গেছে।
গত বৃহস্পতিবার ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। ঘোষিত বাজেটে পুঁজিবাজারে মূলধনি আয়ের ওপর নতুন করে করারোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। অর্থমন্ত্রী বাজেটে প্রস্তাব করেছেন, পুঁজিবাজারে ব্যক্তিশ্রেণির কোনো বিনিয়োগকারী ৫০ লাখ টাকার বেশি মূলধনি মুনাফা করলে তার ওপর করারোপ করা হবে।
যদিও বাজেট ঘোষণার আগে থেকে পুঁজিবাজার-সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ থেকে মূলধনি মুনাফার ওপর করারোপ না করার দাবি জানানো হয়েছিল। তা সত্ত্বেও মূলধনি মুনাফায় করারোপ করা হয়। এরপর গতকাল বাজেট-পরবর্তী প্রথম কার্যদিবসে বাজারে তার নেতিবাচক প্রভাব দেখা যায়। এদিন লেনদেন শুরু হয় সূচকের সামান্য উত্থান দিয়ে। কয়েক মিনিটের মধ্যে সেই উত্থান দরপতনে রূপ নেয়। এরপর বেলা যত বেড়েছে, পতনও তীব্র হয়েছে। শেষ পর্যন্ত ডিএসইএক্স সূচকটি ৬৬ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ১৭১ পয়েন্টে নেমে এসেছে।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আল-আমীন বলেন, ‘পুঁজিবাজারে দীর্ঘদিন ধরে মন্দাভাব চলছে। এ অবস্থায় বাজেটে পুঁজিবাজারে গতি ফেরাতে সরকারের পক্ষ থেকে প্রণোদনামূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে আশা করেছিলেন বিনিয়োগকারীরা। পাশাপাশি বাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে, এমন কোনো পদক্ষেপ না নেয়ারও দাবি ছিল বিভিন্ন পক্ষের। কিন্তু বাজেটে পুঁজিবাজারের জন্য প্রণোদনার বদলে নতুন করে মূলধনি মুনাফা আরোপের সিদ্ধান্ত হয়, যার নেতিবাচক প্রভাব পরিলক্ষিত হয়েছে বাজারে।’
গতকাল দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে মাত্র ৩৩টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। বিপরীতে দাম কমেছে ৩৪০টি প্রতিষ্ঠানের। আর ১৯টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
ফলে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ৬৫ পয়েন্ট কমে পাঁচ হাজার ১৭১ পয়েন্টে নেমে গেছে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ সূচক আগের দিনের তুলনায় ১৫ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ১২০ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আর বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ২২ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৮৩৫ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৩৫৭ কোটি ৯০ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৫৪২ কোটি ৬০ লাখ টাকা। সে হিসাবে লেনদেন কমেছে ১৮৪ কোটি ৭০ লাখ টাকা।
অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ১০৬ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন হওয়া ২১৭টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩৪টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৫১টির এবং ৩২টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ১০৭ কোটি ৮২ লাখ টাকা।
