বাজেটের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত কর্মসংস্থান সৃষ্টি: ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

নিজস্ব প্রতিবেদক: কভিড-পরবর্তীকালে মানুষের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর্মহীনতা বেড়েছে বলে উল্লেখ করে এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, নানা কারণে মানুষের আয় কমেছে, মানুষ কর্মহীন হয়েছে, তাই এবারের বাজেটের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত কর্মসংস্থান সৃষ্টি। আর এই লক্ষ্য শুধু মুখে মুখে থাকলে হবে না, সরকারি ও বেসরকারি খাতকে এগিয়ে এসে এর সঠিক বাস্তবায়ন করতে হবে। গতকাল এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম আয়োজিত ‘আসন্ন বাজেটে জনমানুষের প্রত্যাশা’ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, আগামী বাজেটে জনমানুষের প্রত্যাশা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ হলো আমরা কভিড-উত্তর যে পুনরুত্থানের চেষ্টা করেছি, ঠিক তখনই ২০২২ সালের দিকে সেটি ধাক্কা খেয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পণ্যের দাম বৃদ্ধি, জ্বালানির দাম বৃদ্ধি, সারের দাম বৃদ্ধি ও ইউক্রেনের যুদ্ধ। সুতরাং ২০২৩-২৪ অর্থবছরের যে চ্যালেঞ্জ রয়েছে, সেগুলো মাথায় রেখে প্রথাগত বাজেট তৈরির প্রক্রিয়া থেকে সরে আসতে হবে।

তিনি আরও বলেন, আমরা বলছি বাজেট দেয়ার আগে বাজেটের নীতিকাঠামো প্রকাশ করার কথা। যদি একটি খসড়া নীতি কাঠামো প্রকাশ করা হয় তাহলে সরকারকে ওই নীতি কাঠামোর ওপর মানুষের প্রতিক্রিয়া দেয়ার সুযোগ হবে এবং মূল বাজেটে সরকার তা অন্তর্ভুক্ত করতে পারে।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, এ সময় যেন আগের মতো সাধারণ বাজেট না হয়। আমরা অসাধারণ সময়ে একটি ব্যতিক্রমধর্মী বাজেট চাচ্ছি। বাস্ততসম্মত বাজেটের পাশাপাশি গত অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসের বাজেটের বাস্তবায়ন সম্পর্কিত বিষয়গুলো প্রকাশ করার দাবি জানাচ্ছি।

তিনি বলেন, একাধিকবার প্রণোদনা দেয়া হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। এর অভিন্ন তালিকা প্রকাশ করতে হবে। তাহলে সরকার কতটা  প্রণোদনা প্যাকেজ ও দারিদ্র্যের মধ্যে খাবার বিতরণ করতে পারল, তার সঠিক তথ্য জানা যাবে। কারণ দেশের মানুষ জানতে চায়, আসলে পিছিয়ে পড়া মানুষের হাতে অর্থ সঠিকভাবে পৌঁছেছে কি না, আর এটা চাইলে করা সম্ভব। পাশাপাশি বর্তমান প্রেক্ষাপটকে বিবেচনা করে জনগণকে, বিশেষ করে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে সরাসরি বিভিন্ন প্রণোদনা, যেমন অর্থনৈতিক সুরক্ষা ও খাদ্য প্রণোদনার আওতায় আনতে হবে।

এ সময় ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ পরিচালক টনি মাইকেল গোমেজ বলেন, অতিমারির জন্য শিশুদের পড়াশোনা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শহরকেন্দ্রিক বিদ্যালয়গুলো চালু থাকলেও গ্রামাঞ্চলে বা দুর্গম জায়গাগুলোয় শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ ছিল। একই কারণে বিগত দুই বছরে শিশুশ্রম ও বাল্যবিয়ে দুটোই বেড়েছে। তিনি আরও উল্লেখ করেন, বিভিন্ন কারণে যারা ঝরে পড়েছে, তাদের স্কুলে ফেরত যাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। তাই এই সমস্যাগুলোর নিরসনে শিশু বাজেট নতুন আঙ্গিকে প্রণয়ন করা দরকার। পাশপাশি বাজেট প্রণয়নে শিশুদের সরাসরি অংশ নেয়া নিশ্চিত করা উচিত।

এ সময় সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে ট্রান্সজেন্ডারের সংজ্ঞায়ন সুস্পষ্ট নয়। এমনকি ট্রান্সজেন্ডারদের ওপর অতীতে কখনও কোনো শুমারি পরিচালনা করা হয়নি। ফলে তাদের দাবি ও চাওয়া-পাওয়া এক অর্থে হিসাবের বাইরে চলে যায়। এ সময় তিনি বাজেটে তাদের ভাতার পরিমাণ বাড়ানোর পাশাপাশি ট্রান্সজেন্ডারদের স্বল্প সুদে ব্যবসায়িক ঋণ, কর্মসংস্থানে যুক্ত করার লক্ষ্যে নিয়োগদাতাদের সুনির্দিষ্ট প্রণোদনা দেয়া এবং ট্রান্সজেন্ডারদের স্বাভাবিক পারিবারিক জীবন নিশ্চিত করতে তাদের পরিবারদের প্রণোদনা দেয়ার কথা বলেন।

সেন্টার ফর সার্ভিসেস অ্যান্ড ইনফরমেশন অন ডিজেবিলিটির (সিএসআইডি) নির্বাহী পরিচালক খন্দকার জহুরুল আলম বলেন, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বাজেট বলতে শুধু সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়য়ের বাজেটকে বোঝায়। অন্যদিকে প্রতিবন্ধী মানুষদের সামাজিক সুরক্ষা বেষ্টনীর আওতায় মাসিক মাত্র ৭৫০ টাকা ভাতা দেয়া হয়, যা দৈনিক হিসাবে ২৫ টাকা। সহজে অনুমেয়, ভাতার পরিমাণ বাড়ানো উচিত। কিন্তু আমরা লক্ষ করছি, প্রতিবছর ভাতাপ্রাপ্যদের সংখ্যা বাড়লেও ভাতার পরিমাণ বাড়ে না। আসন্ন বাজেটে তাই প্রতিবন্ধী মানুষদের সুরক্ষা বেষ্টনী টাকার অঙ্কে বাড়ানোর দাবি করছি।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, পুরুষতান্ত্রিক সমাজে সব নারীই একধরনের প্রান্তিক অবস্থানে বিরাজ করেন। অতিমারিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেক নারী উদ্যোক্তার আবির্ভাব ঘটেছে। অন্যদিকে তৈরি পোশাকশিল্পে সাম্প্রতিককালে নারী শ্রমিকদের অংশগ্রহণ ক্রমহ্রাসমান, যার মূল কারণ হচ্ছে উৎপাদন ব্যবস্থায় স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তির আবির্ভাব। তাই নিত্যনতুন প্রযুক্তির আগমনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিদ্যমান নারীকর্মীদের দক্ষ করে তুলতে বাজেটে বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে।

এর আগে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) যুগ্ম পরিচালক অভ্র ভট্টাচার্য বলেন, বিভিন্ন কারণে বর্তমান বাজেট বেশ গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত, দুই বছর আগে উদ্ভূত অতিমারির অভিঘাত এখনও বিদ্যমান। দ্বিতীয়ত, বিভিন্ন গবেষণায় এটি প্রমাণিত যে, অতিমারির প্রভাব পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর ওপর সবচেয়ে বেশি। তাছাড়া বৈশ্বিক পরিস্থিতির দ্রুত পরিবর্তন ও দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি এসব চ্যালেঞ্জের কারণে আগামী বাজেট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০