নিজস্ব প্রতিবেদক: বৈশ্বিক করোনা পরিস্থিতির কারণে যে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিয়েছে, তা কাটিয়ে ওঠার জন্য যে রূপরেখা বাজেটে প্রতিফলিত হয়েছে এটা যথেষ্ট নয়। আরও সুনির্দিষ্ট কর্মপন্থা ও বাস্তবভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা বিস্তৃত হওয়া প্রয়োজন ছিল বলে মনে করছে বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই)। এজন্য শিল্প ক্ষেত্রে করপোরেট করহার হ্রাস, কাঁচামাল ও উপকরণ আমদানির ক্ষেত্রে অগ্রিম কর প্রত্যাহ্যার, রপ্তানিমুখী শিল্পের জন্য কর দশমিক ২৫ শতাংশ নির্ধারণ এবং করপোরেট কর ১০ শতাংশ নির্ধারণ, ভ্যাট রিটার্ন পদ্ধতি সম্পূর্ণ অনলাইন করা, রিফান্ড পদ্ধতি সহজীকরণ এবং ভ্যাট, শুল্ক ও অগ্রিম কর দুই মাসের মধ্যে রিফান্ড করার প্রস্তাব করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর এক প্রতিক্রিয়ায় গত শনিবার বাংলাদেশ বিসিআই’র সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী (পারভেজ) এ কথা জানান।
বিসিআই সভাপতি বলেন, বাজেটে করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলার দিকনির্দেশনা দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। সে জন্য বিসিআই’র পক্ষ থেকে বর্তমান সরকারকে ধন্যবাদ জানাই। করোনা মহামারির কারণে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠান আজ এক মারাত্মক ঝুঁকির সম্মুখীন। শুধু পোশাক শিল্প নয়, স্বল্প পুঁজির কলকারখানা সচল রাখা এবং এসব ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের আর্থিক প্রণোদনা ও দক্ষকর্মী সৃষ্টির মাধ্যমে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা অতি জরুরি।
বিসিআই মনে করে, প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যক্তি শ্রেণির করমুক্ত আয়সীমা তিন লাখ টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। সর্বনি¤œ কর ৫ শতাংশ এবং সর্বোচ্চ করের সীমা ২৫ শতাংশ করায় অর্থমন্ত্রীকে আন্তরিক ধন্যবাদ, যা বিসিআই’র বাজেট প্রস্তাবের প্রতিফলন।
কভিড-১৯-এর প্রভাবে বেকারত্বের হার বৃদ্ধি পেতে পারে জানিয়ে বিসিআই সভাপতি বলেন, এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টির লক্ষ্যে বিশেষ প্রণোদনার ব্যবস্থা রাখার অনুরোধ করছি। বর্তমান বাজেটে কভিড-১৯ মোকাবিলায় বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১০ হাজার কোটি টাকা। এই অর্থ ব্যয় ন্যায্যভিত্তিক ও বিচক্ষণতার সহিত করা প্রয়োজন। স্বাস্থ্য খাতের ব্যবস্থাপনায় প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাকে বেশি অগ্রাধিকার দিতে সরকারি ও বেসরকারি উভয় সেক্টরকে সম্পৃক্ত করে একটি অভিন্ন নীতিমালা এনে স্বাস্থ্যসেবা জনগণের কাছে সহজলভ্য করার বিষয় মাথায় রেখেই এ খাতে বরাদ্দ সুচারুরূপে ব্যয় করতে হবে বলে বিসিআই বিশ্বাস করে।
রপ্তানিমুখী শিল্পের রপ্তানি মূল্যের ওপর উৎসে কর দশমিক ৫ শতাংশ করা হয়েছে। বিসিআই সব রপ্তানিমুখী শিল্পের জন্য উক্ত কর দশমিক ২৫ শতাংশ নির্ধারণ এবং করপোরেট কর ১০ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করছে।
বিসিআই সভাপতি বলেন, কভিড-১৯ মোকাবিলায় বাজেটের দিকনির্দেশনাগুলো স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি হওয়া উচিত, যা প্রস্তাবিত বাজেটে পরিলক্ষিত হয়নি। শুধু রপ্তানির ওপর নির্ভর না করে অভ্যন্তরীণ বাজারমুখী যে শিল্পগুলো আছে সেগুলোর ওপর গুরুত্বারোপ করতে হবে স্থানীয় বাজার, স্থানীয় অর্থনীতির কুটির, ক্ষুদ্র শিল্পগুলো কীভাবে টেকসই হবে সেই বিষয়ে দিকনির্দেশনা থাকা জরুরি। সরকারের যে প্রণোদনা প্যাকেজ আছে অন্তত সেটা যথাযথভাবে বিতরণ করতে হবে। সুষম আঞ্চলিক উন্নয়নের মাধ্যমে অর্থনৈতিক অগ্রগতি অব্যাহত রাখার জন্য শুধু ঢাকা বা চট্টগ্রাম কেন্দ্রিক না করে দেশের উত্তরাঞ্চলসহ প্রত্যন্ত ও অনুন্নত অঞ্চলে বিনিয়োগ ও শিল্পায়ন উৎসাহিত করে কর্মসংস্থান সৃষ্টির উদ্যোগ গ্রহণ করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তাব করছি।
বাজেটে যে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ২ শতাংশ ধরা হয়েছে, তাও অনেক উচ্চাভিলাষী বলে মনে হয় এটা আরও বাস্তবভিত্তিক হওয়া প্রয়োজন। বাজেট ঘাটতি এক লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা, এ ঘাটতি পূরণে সরকার ব্যাংক খাত থেকে ৮৪ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা ঋণ গ্রহণের কথা বলেছে। সরকার যদি ব্যাংক খাত থেকে এ পরিমাণ ঋণ গ্রহণ করে, তাহলে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবাহে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে বাজেটের ১৫.১ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়েছে। উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে পর্যাপ্ত ভোকেশনাল ট্রেনিং স্কুল প্রতিষ্ঠা ও প্রয়োজনীয় লজিস্টিক সাপোর্ট দেওয়ার মাধ্যমে দক্ষকর্মী বাহিনী গড়ে তোলা প্রয়োজন, যাতে বৃহৎ ক্ষুদ্র ও মাঝারি কলকারখানার কর্মীদের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয় এবং উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পায়। বাজেটে অর্থ ব্যয়কালে এ বিষয়ে স্পষ্ট রূপরেখা থাকা প্রয়োজন বলে বিসিআই মনে করে।