প্রতি রবি থেকে বৃহস্পতিবার পুঁজিবাজারের বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে এনটিভি ‘মার্কেট ওয়াচ’ অনুষ্ঠানটি সম্প্রচার করে। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ বিবেচনায় তার গুরুত্বপূর্ণ অংশ নিয়ে শেয়ার বিজের নিয়মিত আয়োজন ‘এনটিভি মার্কেট ওয়াচ’ পাঠকের সামনে তুলে ধরা হলো:
এবারের বাজেটে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর করপোরেট কর ছাড় দেওয়া হতে পারে। কারণ বাংলাদেশে করপোরেট ট্যাক্সের পরিমাণ বেশি। তাছাড়া পুঁজিবাজারের একটি বড় সমস্যা হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তাদের কারণেই ক্যাপিটাল মার্কেটের প্রবৃদ্ধি হচ্ছে না। এখানে বাজেটের থেকে বড় বিষয় হচ্ছে দেশের মুদ্রাবাজারকে স্থিতিশীল রাখা এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অযাচিত হস্তক্ষেপ বন্ধ করা। এবার যেমন আইসিবিকে সিঙ্গেল এক্সপোজার সীমার মধ্যে আনা হয়েছে, যা এতদিন ছিল না। যে কারণে বর্তমান বাজারের এই নেতিবাচক অবস্থা। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়। হাসিব হাসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আলোচক ছিলেন আইনজীবী ও পুঁজিবাজার বিশ্লেষক হাসান মাহমুদ বিপ্লব এবং আইসিএবির কাউন্সিল মেম্বার শাহাদাৎ হোসেন, এফসিএ।
হাসান মাহমুদ বিপ্লব বলেন, সামনে বাজেট আসছে। আর এই বাজেটের আগে দেখা যায়, বিভিন্ন খাতের প্রতিনিধিরা এনবিআর ও অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসেন তাদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে। এ ক্ষেত্রে অনেকেই বলেন, এটি শুধুই লোক দেখানো বৈঠক। কারণ এনবিআর ও অর্থ মন্ত্রণালয় যে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে সেটাই হয়। এমনকি ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই’র দাবি-দাওয়ারও কোনো মূল্য থাকে না। কিন্তু আমি এ বিষয়ে একমত নই এবং আমরা ঢালাওভাবে বলতে পারি না যে, সবগুলো দাবি মেনে নেওয়া হয় না। গত বাজেটেও এনবিআর ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের কিছু সিদ্ধান্ত তারা পরিবর্তন করেছেন বিভিন্ন খাতের প্রতিনিধিদের দাবিতে। কাজেই বাজেটের আগের এ আলোচনা সভায় তারা কারো কথা একটুও মানে না সেটি বলা যাবে না। তবে বাজেটে সবচেয়ে অবহেলিত হচ্ছে পুঁজিবাজার। ২০১০ সালে ধসের পর পুঁজিবাজার-সংক্রান্ত যত প্রস্তাবই অর্থ মন্ত্রণালয় বা এনবিআরে গেছে তাতে তারা যতটুকু করেছে তা একেবারেই বলার মতো নয়। এবারের বাজেটে হয়তো পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর করপোরেট কর ছাড়ের দরকার হতে পারে। কারণ বাংলাদেশে করপোরেট ট্যাক্সের পরিমাণ বেশি। তাছাড়া পুঁজিবাজারের একটি বড় সমস্যা হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তাদের কারণেই ক্যাপিটাল মার্কেটের প্রবৃদ্ধি হচ্ছে না। ফলে এখানে বাজেটের থেকে বড় বিষয় হচ্ছে, দেশের মুদ্রাবাজারটিকে স্থিতিশীল রাখা এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অযাচিত হস্তক্ষেপ বন্ধ করা। এবার যেমন আইসিবিকে সিঙ্গেল এক্সপোজার সীমার মধ্যে আনা হয়েছে, যা এতদিন ছিল না। যে কারণে বর্তমান বাজারের এই নেতিবাচক অবস্থা। এছাড়া আমাদের দেশে আরেকটি বড় বিষয় হচ্ছে, ট্যাক্স জিডিপি রেশিও এত কম যে চাইলেও ব্যবসায়ীদের সব দাবি মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। ট্যাক্স নেটের বাইরে দেখেন নিবন্ধিত করদাতা কতজন আছে? এখানে যারা ট্যাক্স দিচ্ছে তাদের থেকেই বেশি করে কর আদায় হচ্ছে। কিন্তু অনেকে আছে যাদের আয় অনেক অথচ করের আওতার বাইরে থেকে যাচ্ছে।
শাহাদাৎ হোসেন বলেন, বাজেট একটি কঠিন কাজই বলব। একদিকে যেমন সরকারকে জনগণের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করতে হচ্ছে, অন্যদিকে সেই অর্থ আবার জনগণের কল্যাণে ব্যবহার করা হচ্ছে। তাই এই অর্থ সংগ্রহ করতে গিয়ে যাতে মানুষের ওপর বা কর দাতার ওপর অতিরিক্ত চাপ না পরে সেই বিষয়টি বিবেচনায় রাখতে হয়। স্বাধীনতার এত বছর পরেও দেশের কর জিডিপির হার দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সর্বনি¤œ পর্যায়ে আছে। ফলে এখানে করদাতার পরিমাণকে আরও বাড়ানোর জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে। কিন্তু সেই পদক্ষেপটিই আসলে নেওয়া যাচ্ছে না। যে কারণে বারবার একই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ওপরই অধিক পরিমাণে করের বোঝা চেপে যাচ্ছে।
শ্রুতিলিখন: রাহাতুল ইসলাম