বাজেটে খাদ্য, কর্মসংস্থান, চিকিৎসা ও শিক্ষার জন্য বরাদ্দ সুনিশ্চিত করতে হবে

রেজাউল করিম খোকন : আগামী ৬ জুন জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করা হবে। আগামী অর্থবছরের বাজেট ছোটই রাখা হচ্ছে। এর আকার হতে পারে ৭ লাখ ৯৬ হাজার ৯০০ কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের মূল বাজেট ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা থেকে ৩৫ হাজার ১১৫ কেটি টাকা অর্থাৎ ৪ দশমিক ৬২ শতাংশ বেশি। অন্য বছরগুলোয় এ বৃদ্ধি হয় ১০ থেকে ১৩ শতাংশের মতো। আগামী বাজেটে সামগ্রিক ঘাটতি (অনুদান ছাড়া) ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা ধরা হতে পারে। এছাড়া রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ৫ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা, চলতি অর্থবছরে যা ছিল ৫ লাখ কোটি টাকা। এর মধ্যে এনবিআরের আদায় লক্ষ্যমাত্রা হতে পারে ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি থাকলেও সংশোধিত বাজেটে কমিয়ে ৪ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা করা হয়। আইএমএফের শর্ত অনুযায়ী আগামী অর্থবছরে সরকারের ৪ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকার কর রাজস্ব আদায় করার কথা। চলতি অর্থবছরের মতো আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটকেও ব্যয় সংকোচনমুখী করার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামী বাজেটেও বিলাসপণ্য আমদানিকে নিরুৎসাহিত করার পক্ষে মত দিয়েছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণই হবে আগামী বাজেটের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। প্রধানমন্ত্রী দেখতে চেয়েছিলেন, বর্তমান মেয়াদের প্রথম বাজেটে নির্বাচনী ইশতেহারের প্রতিফলন থাকছে কি না। অর্থ মন্ত্রণালয় বাজেটের যে কাঠামো দাঁড় করিয়েছে, তাতে সেই প্রতিফলন থাকছে বলে তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ৮ লাখ কোটি টাকার বাজেটে অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এবারের প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে। এছাড়া প্র্রস্তাবিত বাজেটে শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং গ্রামীণ অবকাঠামো খাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ থাকবে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, বৈদেশিক প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ (এফডিআই) বৃদ্ধি, আমদানি নিয়ন্ত্রণ, সতর্কতার সঙ্গে উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ, রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধি ও এজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ, বৈধ চ্যানেলে প্রবাসী আয় বৃদ্ধি এবং সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় উপকারভোগীর সংখ্যা বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। দেশে মূল্যস্ফীতির চাপ রয়েছে। তবে গোটা বিশ্বেই এখন সংকোচনমূলক ব্যবস্থা চলছে। যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ইত্যাদি উন্নত দেশ নীতি সুদহার বাড়িয়েছে। মার্কিন ডলার আগের তুলনায় দামি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র প্রাক্কলন করেছিল, গত এপ্রিলে মূল্যস্ফীতি কমে যাবে। তবে কমেনি। এমন পরিস্থিতিও তৈরি করা যাবে না, যাতে আমদানি বেশি কমে যায়। আমদানি ব্যবস্থাপনা দক্ষতার সঙ্গে করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী রাজস্ব সংগ্রহ বৃদ্ধির জন্য ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইসের (ইএফডি) বহুল ব্যবহার আশা করছেন। বেশি মূল্য সংযোজন কর (মূসক) আদায়ের ব্যাপারে তার পরামর্শ হচ্ছেÑএ কাজে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগকে কাজে লাগানো। তিনি চাইছেন, আইসিটি বিভাগ এমন অ্যাপ তৈরির উদ্যোগ নেবে, যাতে মূসকের চালান (ইনভয়েস) নিতে মানুষ আগ্রহী হন। নিজের নির্বাচনী এলাকার উদাহরণ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তার এলাকায় আয়কর দেওয়ার মতো সক্ষম ব্যক্তি অনেক আছেন। কিন্তু তারা করজালের বাইরে। আয়কর যারা দিচ্ছেন বা যারা করজালের মধ্যে আছেন, শুধু তাদের ওপর করের বোঝা না চাপিয়ে করের আওতা বৃদ্ধির পদক্ষেপ নিতে হবে। আশা করা যায়, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পরিস্থিতি ভালো হয়ে যাবে। আর বিনিময় হার নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাতে ডলারের দামও স্বাভাবিক হয়ে আসবে। বাজেট প্রণয়নে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পরামর্শকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। তার অংশ হিসেবে কিছু ক্ষেত্রে করছাড় এবং অব্যাহতি কমানো হবে।

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার সঙ্গে আমরাও একমত। তবে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি এবং তা বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি বাজেটে থাকছে কি না, তা-ও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। ভারত, নেপাল ও শ্রীলঙ্কার মতো দেশ যে হারে দক্ষ শ্রমিক পাঠিয়ে প্রবাসী আয় অর্জন করছে, বাংলাদেশকেও সে ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে এবং বাজেটে তার প্রতিফলন থাকতে হবে। ডলারের দাম এক লাফে ৭ টাকা বৃদ্ধির মাধ্যমে টাকার বড় অবমূল্যায়ন হয়েছে। বাজেটের আকারের ওপর এর প্রভাব পড়তে পারে। ঢাকায় এসে আইএমএফের দল আগামী বাজেট ছোট রাখার পরামর্শ দিয়েছেন। আগামী অর্থবছরের বাজেট ছোটই রাখা হচ্ছে। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি থাকলেও সংশোধিত বাজেটে কমিয়ে ৪ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা করা হয়। আইএমএফের শর্ত অনুযায়ী আগামী অর্থবছরে সরকারের ৪ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকার কর রাজস্ব আদায় করার কথা। সে হিসাবে সরকারের লক্ষ্য ও আইএমএফের লক্ষ্য কাছাকাছিই থাকছে। চলমান ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ কর্মসূচির আওতায় আইএমএফের পরামর্শ ছিল করছাড় কমানো। ২০২৭ সালের ১ জুলাইয়ের আগে তিন ধাপে সব ধরনের করছাড় বাতিলের শর্ত রয়েছে আইএমএফের। প্রথম দফায় তথ্যপ্রযুক্তি খাতে কর অব্যাহতি-সুবিধা বাতিল হতে পারে। দেশীয় শিল্পের বিকাশে বিভিন্ন শিল্প খাতে যেসব মূসক অব্যাহতি রয়েছে, সেগুলোও প্রত্যাহারের দিকনির্দেশনা থাকবে আগামী বাজেটে। তবে ব্যক্তিশ্রেণির করমুক্ত আয়ের সীমা বর্তমানে যে সাড়ে তিন লাখ টাকা রয়েছে, এবার তা না-ও বাড়তে পারে। নারী করদাতাদের করমুক্ত আয়ের সীমা ৪ লাখ টাকা, প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের করদাতাদের ৪ লাখ ৭৫ হাজার এবং গেজেটভুক্ত যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা করদাতাদের করমুক্ত সীমা যে ৫ লাখ টাকা আছে, তাতেও কোনো পরিবর্তন আনা হবে না। সামষ্টিক অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা আনা, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা এবং ডলার-সংকট নিরসন করাÑ অর্থনীতির এই তিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে ব্যয় সংকোচনের বাজেট করা ছাড়া উপায় নেই। বাজেট বড় করলে তা হয়ে যাবে বিষাক্ত জিনিস। করোনা মহামারির কারণে দেশের শিক্ষা খাতে বড় ক্ষতি হয়েছে। আবার ওই মহামারির সময়ই স্বাস্থ্য খাতের দুরবস্থার চিত্র ফুটে উঠেছিল। কিন্তু এরপরও বাজেটে এই দুটি খাত প্রত্যাশিত মনোযোগ পাচ্ছে না। টাকার অঙ্কে বরাদ্দ বাড়লেও বাজেট এবং মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) তুলনায় এই দুই খাতে বরাদ্দ খুব একটা বাড়ছে না। কভিডের আগের ধারাবাহিকতায় বাজেটে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাত অনেকটা অবহেলিত থেকে যাচ্ছে। আগামী বাজেটেও এর ব্যতিক্রম হওয়ার ইঙ্গিত নেই।

পৃথিবীর যে ১০টি দেশ অর্থনীতির আকারের তুলনায় শিক্ষা খাতে সবচেয়ে কম বরাদ্দ দেয়, বাংলাদেশ তার একটি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, মৌলিক স্বাস্থ্যসেবা পেতে একজন বাংলাদেশির বছরে ৮৮ ডলার খরচ করা প্রয়োজন। কিন্তু বাংলাদেশে চিকিৎসা খাতে মাথাপিছু খরচ হয় ৫৮ ডলার, যার বড় অংশই নাগরিকরা নিজেরা সংস্থান করেন। আগামী অর্থবছরের শুধু শিক্ষা খাতে প্রায় ১ লাখ কোটি টাকার বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। আর স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ থাকবে প্রায় ৪২ হাজার কোটি টাকা। এসব বরাদ্দ সরকারের পরিচালন ও উন্নয়ন ব্যয় মিলিয়ে। গত পাঁচ বছরের বাজেট বরাদ্দ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এ সময় শিক্ষা খাতের বরাদ্দ বাজেটের ১২ শতাংশ এবং স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দ ৫ শতাংশের আশপাশে ছিল। অন্যদিকে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) অনুপাতের শিক্ষা খাতের বরাদ্দ ২ শতাংশের মতো, আর স্বাস্থ্য খাতে তা ১ শতাংশের মতো। বাজেটের শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাত একসঙ্গে দেখানো হয়। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী অর্থবছরের শুধু শিক্ষা খাতে প্রায় ১ লাখ কোটি টাকার বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। আর স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ থাকবে প্রায় ৪২ হাজার কোটি টাকা। এসব বরাদ্দ সরকারের পরিচালন ও উন্নয়ন ব্যয় মিলিয়ে। উন্নয়ন খাতের বরাদ্দে অবশ্য সরকার শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের চেয়ে রাস্তাঘাট, জ্বালানি খাতকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে। আগামী অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) শীর্ষ তিনটি খাতের মধ্যে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাত নেই। বরাদ্দ পাওয়ার বিবেচনায় শীর্ষ তিন খাত হলো স্থানীয় সরকার বিভাগ; সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ এবং বিদ্যুৎ বিভাগ। এই তিন খাতই এডিপির প্রায় ৪০ শতাংশ বরাদ্দ পাচ্ছে। যেখানে বিনিয়োগ করলে লাভের ভাগ বেশি হবে, সেখানেই বিনিয়োগ করা দরকার। তাই বাজেটে প্রথম অগ্রাধিকার হওয়া উচিত শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাত। শিক্ষায় দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তুলতে না পারায় বিদেশ থেকে জনবল আনতে হয়। শিক্ষিতদের মধ্যে বেকার বেশি। দেশে অনেক এমবিএ ডিগ্রিধারী আছেন, কিন্তু ভারত, শ্রীলঙ্কাসহ বিভিন্ন দেশ থেকে লোক আনতে হচ্ছে। তারা বছরে ৬০০ কোটি ডলার নিয়ে যাচ্ছেন, যা দেশের প্রবাসী আয়ের চার ভাগের এক ভাগের সমান। গত পাঁচ বছরের বাজেট বরাদ্দ পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, শিক্ষা খাতে বরাদ্দ টাকার অঙ্কে বাড়লেও বাজেটের অনুপাতে তা ১২ শতাংশের আশপাশে আছে। এর মানে হলো, সরকার এই খাতের বিষয়ে অগ্রাধিকার দিচ্ছে না। শিক্ষা খাতের দুর্বলতা আমরা জানি। কিন্তু বাজেট ব্যবস্থাপনার দুর্বলতার অজুহাতে শিক্ষা খাতকে পঙ্গু করে রাখতে পারি না। এ জন্য জিডিপির অনুপাতে বাজেটে বরাদ্দ বাড়ানোয় রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রয়োজন। মেধাবী শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে। এ ছাড়া সামাজিক দায়বদ্ধতাও দরকার। আগামী বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দেও বড় কোনো পরিবর্তন আসছে না। করোনার পর স্বাস্থ্য বাজেট বাড়ানোর বিষয়ে নানা আলোচনা হলেও বাস্তব অবস্থার খুব একটা পরিবর্তন হয়নি। স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দ বাজেটের ৫ শতাংশ ও জিডিপির ১ শতাংশের মধ্যে আটকে আছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে স্বাস্থ্য বাজেটের আকার ছিল ২৯ হাজার ২৪৫ কোটি টাকা, যা ছিল ওই বাজেটের ৫ দশমিক ১৪ শতাংশ। পরের কয়েক বছর কভিড মহামারির প্রকোপ থাকলেও অগ্রাধিকারে তেমন পরিবর্তন আসেনি। স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাজেটের ৫ শতাংশের আশপাশেই ছিল। সর্বশেষ চলতি অর্থবছরে ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। আগামী অর্থবছরে তা বেড়ে ৪২ হাজার কোটি টাকা হতে পারে। রাষ্ট্রের স্বাস্থ্যবিষয়ক কার্যক্রম সক্রিয় করার জন্য বাজেটে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। স্বাস্থ্যসেবা বাড়াতে চিকিৎসক, নার্সসহ অন্যান্য জনবল বাড়াতে বিনিয়োগ করতে হবে। দিতে হবে শূন্য পদে লোকবল। কিন্তু সরকার অবকাঠামো নির্মাণে বেশি আগ্রহী। কারণ, এখানে স্বার্থ আছে। সেবায় বিনিয়োগ নেই। উদ্বোধন করা হয় ভবন, সেবা উদ্বোধন করা হয় না।

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, ডলারের মূল্যবৃদ্ধি, খেলাপি ঋণ ও অর্থ পাচার শুধু অর্থনৈতিক সমস্যা নয়, এগুলো রাজনৈতিক সংকটও। এজন্য বিদ্যমান রাজনৈতিক ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন জরুরি। আসন্ন বাজেটে খাদ্য, কর্মসংস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা ও বাসস্থানের নিশ্চয়তার জন্য বরাদ্দ সুনিশ্চিত করতে হবে। ওই বরাদ্দ যাতে দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি ছাড়াই খরচ হয়, সেই ব্যবস্থা করতে হবে। সরকার বাজেটের আগে ব্যবসায়ী, শিল্পপতি ও বড়লোকদের সঙ্গে সংলাপ করে। যারা দেশের টাকা পাচার করছে, ব্যাংকের টাকা নিয়ে শোধ করে না, এসব সংলাপ তাদের সঙ্গেই হয়। অথচ দেশের অর্থনীতির চাকা যারা সচল রেখেছে, সেই শ্রমজীবী মানুষের সঙ্গে সংলাপ হয় না। এবারের বাজেটে প্রধান দুটি সংকট হলো অস্বাভাবিকভাবে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির হার ও ডলারের মূল্যবৃদ্ধি। ঋণখেলাপি ও টাকা পাচারকারীদের ক্ষমতা বর্তমানে শক্তিশালী অবস্থানে পৌঁছেছে। পাচারের টাকা ফেরত আনার ক্ষেত্রে কোনো আইনগত বাধা নেই। সে জন্য বাজেটে এ ব্যাপারে প্রথম পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে। শীর্ষ খেলাপিদের নাম প্রকাশ ও তাদের বিরুদ্ধে মামলা হতে পারে। বাজেটের লক্ষ্য স্থির থাকছে না। তাতে আসল সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। এর মূল কারণ রাজনীতি ঠিক নেই। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ও ডলার-সংকটের মতো সমস্যা এখন প্রকট। দেশে যথাযথভাবে ডলার আসে না। আবার দেশ থেকে ডলার চলে যায়। যথাযথ পরিকল্পনা ছাড়া সম্পদের লুটপাট ঠেকানো যাবে না। বাজেটে গরিবের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। স্বাধীনতার পর যত ঋণ নেয়া হয়েছে, তার চেয়ে বেশি ঋণ নিয়েছে এই সরকার। সরকারের সংকট এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে তারাই বলছে, জ্বালানি খাতে ৩২ হাজার কোটি টাকার ঋণ পরিশোধ করতে পারছে না। এর জন্য দায়ী কে? সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর নামে কয়েকটি খাতে বরাদ্দ দিয়ে দেশের মানুষের সংকট সমাধান করা যাবে না। সর্বজনীন সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি নিতে হবে। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির মূল কথা হবে জš§ থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সব বিষয়ে মানুষের দায়িত্ব নেয়া। করের টাকা লুটপাট নয়, জনস্বার্থে ব্যবহার করতে হবে। প্রকৃত কৃষক জমি চাষ করে না, বর্গাচাষিরাই কৃষি কাজ করেন। অথচ তারা ক্ষতিগ্রস্ত হলে সরকারি কোনো প্রণোদনা পান না। ফসলের ন্যায্য দামও পান না। দিন দিন উৎপাদন খরচ বাড়ছে, ঠিকমতো বিদ্যুৎ নেই। সারের দাম বাড়তি, ভালো মানের কীটনাশক ও কৃষি বিভাগ থেকে ঠিকমতো পরামর্শ পাওয়া যায় না। বাজেটে এসব নিশ্চিত করতে হবে। পোশাক শ্রমিকদের নিয়ে অনেক কথা বলা হয়। তারা নাকি দেশের অর্থনীতিতে সবচেয়ে বড় অবদান রাখছেন। কিন্তু তারা যে বেতন পান, তা দিয়ে ঠিকমতো ভালো খাবার খেতে পারেন না। ব্যাংকের ঋণ নিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা মেরে দিচ্ছে অনেকে। অথচ গ্রামাঞ্চলে ঋণ করার পর অনেক মানুষকে রিকশা চালিয়ে কিস্তি পরিশোধের জন্য ঢাকায় আসতে হচ্ছে। তাদের এ দেশের মানুষ মনে করলে বাজেটে দরিদ্রদের জন্য আলাদা বরাদ্দ দিতে হবে।

অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার, কলাম লেখক

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০