নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. হাফিজ মুহাম্মদ হাসান বাবু বলেছেন, সরকার হয়তো এবার আমাদের পুঁজিবাজারে কর আরোপ করেনি, কিন্তু পুঁজিবাজারের জন্য আমাদের কিছু চাহিদা ছিল, সেটার বিষয়ে দৃষ্টি দেয়নি।
গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর একটি হোটেলে ডিএসইর বাজেট-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। এসময় ডিএসইর স্বতন্ত্র পরিচালক আবদুল্লাহ আল মাহমুদ, রুবাবা দৌলাসহ অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।
প্রস্তাবিত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটকে অভিনন্দন জানিয়ে সাতটি প্রস্তাব পুনর্বিবেচনা করার দাবি জানিয়েছেন ডিএসই চেয়ারম্যান। এরই মধ্যে ওই প্রস্তাবগুলো পুনর্বিবেচনা করার জন্য অর্থমন্ত্রী, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), পরিকল্পনামন্ত্রী, বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
ডিএসই চেয়ারম্যান বলেন, সরকার হয়তো এবার আমাদের পুঁজিবাজারে করারোপ করেনি, তবে আমাদের কিছু চাহিদা ছিল, সেটার বিষয়ে দৃষ্টি দেয়নি। এ বিষয়েও পরিকল্পনামন্ত্রী গত রোববার তার বক্তব্যে বলেছেন। আমাদের পুঁজিবাজার অর্থনৈতিক উন্নয়নের মূল উপকরণ। তাই আমাদের সাতটি প্রস্তাব পুনর্বিবেচনা করার জন্য দাবি জানাচ্ছি।
অধ্যাপক ড. হাফিজ মুহাম্মদ হাসান বাবু বলেন, একটি কার্যকরী বন্ড বাজার অর্থনীতিকে বিভিন্নভাবে সহায়তা করতে পারে। যদি সব ধরনের বন্ডের সুদ অব্যাহতির আওতায় আনা যায়, তখন তা একটি শক্তিশালী বন্ড বাজার সৃষ্টিতে উৎসাহিত করবে। কোম্পানিগুলো কর-পরবর্তী মুনাফা থেকে লভ্যাংশ দিচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে লভ্যাংশের ওপর কর এক ধরনের দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্তরের করারোপ। লভ্যাংশের ওপর উৎসে কর চূড়ান্ত কর হিসেবে বিবেচিত হলে বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগে উৎসাহিত হবে। ডিএসইর ট্রেকহোল্ডার কোম্পানির প্রধান আয় (টার্নওভার) হচ্ছে কমিশন। যদি বেশি হারে কর নেয়া হয়, তবে ট্রেকহোল্ডারদের পক্ষে টিকে থাকা এবং পুঁজিবাজারে অবদান রাখা কঠিন হবে। তাই ট্রেকহোল্ডারদের লেনদেনের ওপর উৎসে কর শূন্য দশমিক শূন্য ৫ থেকে কমিয়ে শূন্য দশমিক শূন্য ১৫ শতাংশ করা যেতে পারে।
তিনি বলেন, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ও অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানির করপোরেট করহারের পার্থক্য ১০ শতাংশ করার প্রস্তাব করছি। এছাড়া
এসএমই বোর্ডের অধীনে তালিকাভুক্ত এসএমই কোম্পানির করপোরেট করহার ও অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানির করহারের পার্থক্য ন্যূনতম ১০ শতাংশ করার প্রস্তাব করছি। এতে অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানি স্টক এক্সচেঞ্জের এসএমই প্ল্যাটফর্মে তালিকাভুক্ত হতে উৎসাহিত হবে। তালিকাভুক্ত কোম্পানির ভ্যাট হার হ্রাস করতে হবে। বর্তমানে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ও অ-তালিকাভুক্ত উভয় কোম্পানির ভ্যাট হার ১৫ শতাংশ। তালিকাভুক্ত কোম্পানির ভ্যাট হার হ্রাস করে ১০ শতাংশ করার সুপারিশ করছি।
ডিএসই চেয়ারম্যান বলেন, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতসহ অন্যান্য উন্নত দেশের পুঁজিবাজারে বহুজাতিক কোম্পানিকে তাদের মোট শেয়ারের ন্যূনতম ১০ শতাংশ তালিকাভুক্ত করা বাধ্যতামূলক। অন্যথায় সেসব কোম্পানি সেদেশে ব্যবসা করার অনুমতি পায় না। তাই আমাদের দেশেও পুঁজিবাজারের উন্নয়নকল্পে এইরূপ আইন প্রণয়ন করা এবং তার প্রয়োগ জরুরি।
পুঁজিবাজার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ডিএসই হবে অত্যন্ত টেকনোলজিনির্ভর। ডিএসই হওয়া দরকার সম্পূর্ণ পেপারলেস। আমি অল্প কিছুদিন হলো দায়িত্ব পেয়েছি, তাই সব কাজ শুরু করতে পারিনি। তবে শিগগির আমরা কাজ শুরু করব। ডিএসইকে আমরা আইটি খাতে সমৃদ্ধ করব। এটাকে আমরা অনেক বেশি গুরুত্ব দেব। পুঁজিবাজার সাধারণ মানুষের বাজার। এটা গণমানুষের বাজার, যেখানে তাদের রুজির জায়গা। এই বাজারে সরকারের সুদৃষ্টি অত্যন্ত প্রয়োজন বলে মনে করছি। এর মাধ্যমে এই বাজেট জনগণের বাজেট হয়ে উঠবে। বর্তমানে মানুষ পুঁজিবাজারবিমুখ হয়ে যাচ্ছে। তবে অনেকে পরিবেশের অপেক্ষায় আছে আবার এই বাজারে ফিরে আসতে। বিশ্বে পুঁজিবাজারকে অর্থনীতির গতি বাড়ানোর ওপর কাজে লাগাচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশের পুঁজিবাজার ব্যাংকনির্ভরতায় পড়ে রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, পুঁজিবাজারের বর্তমানের যে অবস্থা, সেটা বেশি দিন থাকবে না। এই সমস্যা পার হয়ে যাবে। এই পুঁজিবাজার হবে সরকারের অর্থ সংগ্রহের অন্যতম মাধ্যম। তাই আমাদের সবাইকে এক হয়ে কাজ করতে হবে। তবেই এই বাজারের সফলতা সম্ভব। আমাদের অনেক পরিকল্পনা রয়েছে। এই পরিকল্পনার মধ্যে অন্যতম হলো আমরা জাপানি বিনিয়োগ আনতে কাজ করছি। আপনারা আশাহত হবেন না। কাজগুলোর অগ্রগতিতে দেরি হচ্ছে, তবে অপেক্ষা করলে আমরা ভালো কিছু পাব। সবার সহযোগিতা পেলে আমরা সুন্দর একটা পুঁজিবাজার পাব। এছাড়া এই বাজারের উন্নয়নে সরকারের ভূমিকা অনেক, যা পেতে সাধারণ মানুষ মুখিয়ে রয়েছে।