বাজেটে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ নিন

 

উচ্চ দ্রব্যমূল্য দেশের অন্যতম প্রধান সমস্যা। প্রায় সময়ই প্রাক-বাজেট আলোচনায় এটি সমাধানে গুরুত্ব দেন আলোচরা। মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে প্রাক-বাজেট আলোচনায়ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়ার কথা বলেছেন আলোচকরা। তারা বলছেন, দুই বছর ধরে দেশে ৯ শতাংশের ওপরে মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে। এমন বাস্তবতায় আগামী অর্থবছরের বাজেটে দ্রব্যমূল্য হ্রাসকরণে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে। সেই সঙ্গে আর্থিক খাত ও সরকারি সংস্থাগুলোয় জরুরি সংস্কার কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।

গবেষণা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্ট (র‌্যাপিড) আয়োজিত প্রাক-বাজেট আলোচনায় অংশ নেন জাতীয় সংসদ সদস্য, অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ী নেতা ও আর্থিক খাতের বিশেষজ্ঞরা। আলোচনায় পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী বলেন, সরকার কর জিডিপি অনুপাত বাড়াতে আগ্রহী। আমরা প্রকৃত অর্থে মুক্ত অর্থনীতির নয়, কল্যাণকর অর্থনীতির অনুসারী।

উন্নয়ন, প্রবৃদ্ধি নিয়ে যত সাফল্যই থাকুক, তা ম্লান করে দেয়, নিত্যপণ্যের দামে ঊর্ধ্বগতি। কারণ সাধারণ মানুষ উন্নয়ন, প্রবৃদ্ধি বোঝে না। এটি মানতে এগুলোর সুফল সাধারণ মানুষ না পেলে, তা সত্যিই অর্থহীন। নীতিনির্ধারকরা কল্যাণকর অর্থনীতির অনুসারী হলে তাদের কাজে দেশের আপামর জনসাধারণের আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিফলন থাকতে হবে।

দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে পণ্যের উৎপাদন, মজুত, সরবরাহ শৃঙ্খল, বাজার নিয়ন্ত্রণ, সংঘবদ্ধ চক্রের কারসাজি, পরিবহনের চাঁদাবাজি প্রভৃতি অনেক কিছু বিবেচনায় নিতে হবে। কয়েকটি মন্ত্রণালয় এগুলোর সঙ্গে জড়িত। তাই কোনো একক প্রতিষ্ঠানের পক্ষে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়।  সুশাসন, স্বচ্ছতা ও জবাদদিহির সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা করা গেলে  সংশ্লিষ্ট সবাই নিজ দায়িত্বপালনে তৎপর হবে।

পণ্যমূল্য বৃদ্ধির প্রবণতা শুধু আমাদের দেশেই নয়, সব দেশেই আছে। উন্নত দেশগুলো এ সমস্যা সমাধানে কোনো কর্মপদ্ধতি গ্রহণ করে, সেটিও বিবেচনা করতে পারি।

প্রায়ই শোনা যায়, বাজারে পর্যাপ্ত পণ্য আছে, সরকারি গুদামের মজুতও সন্তোষজনক। এক মন্ত্রী অন্য মন্ত্রী, সব মন্ত্রী ব্যবসায়ীকে, ব্যবসায়ীরা আন্তর্জাতিক বাজারের অপর দায় চাপাচ্ছেন।  মধ্যখানে সাধারণ মানুষের বিড়ম্বনা!

অভিযোগ রয়েছে ব্যবস্থাপনার দুর্বলতার সুযোগে প্রভাবশালীরা বাজার নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন। এই প্রভাবশালীদের মধ্যে যেমন বড় ব্যবসায়ী আছেন, তেমনি আছেন মিলমালিক ও আড়তদাররা।  পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার পেছনে কয়েকটি বড় কোম্পানির কারসাজি আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে; যাদের বিরুদ্ধে সরকার কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না বা নিচ্ছে না।

আমরা মনে করি, দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে বাজারের ওপর সরকারের নিবিড় নজরদারি থাকা দরকার। বাজার ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে সরকারের কার্যকর উদ্যোগ প্রয়োজন। কারা বাজার অস্থিতিশীল করার সঙ্গে জড়িত; তাদের চিহ্নিত করে তাদের কার্যক্রম নজরদারি করতে হবে। নজরদারি করতে হবে নজরদারির দায়িত্বে থাকা সরকারি কর্মচারীদেরও।  পারস্পরিক যোগসাজশ ছাড়া কোনো অনিয়ম দীর্ঘদিন চলতে পারে না।

সরকারের উচিত বিশেষজ্ঞদের নিয়ে বসে অবিলম্বে কর্মপরিকল্পনা ঠিক করা।  বাজার বিশেষজ্ঞ, ব্যবসায়ীসহ অংশীজনদের সঙ্গেও আলোচনা করা আবশ্যক। খাদ্যনিরাপত্তার সঙ্গে সম্পৃক্ত মন্ত্রণালয়গুলোর কাজে সমন্বয় থাকতে হবে। সমস্যায় কাবু হয়ে পড়লে তড়িঘড়ি করে সমস্যা জটিল হওয়ার আগেই দীর্ঘমেয়াদি টেকসই সমাধান খুঁজতে হবে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০