নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম: স্বল্পমেয়াদি অর্থ দিয়ে দীর্ঘমেয়াদি শিল্পায়ন করা সম্ভব হয় না। কিন্তু একটি টেকসই বাজার কাঠামোর জন্য অর্থবাজার, পুঁজিবাজার এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক কাঠামোর একটি সমন্বিত ব্যবস্থা গড়ে তোলা প্রয়োজন। কিন্তু এখন পর্যন্ত আমাদের আর্থিক বাজার কাঠামো কার্যত অনেকাংশে ব্যাংক ব্যবস্থা তথা অর্থবাজারের ওপর নির্ভরশীল, যার বিভিন্ন নেতিবাচক প্রভাব আমাদের অর্থনীতিতে এরই মধ্যে প্রতীয়মান হচ্ছে। তাই জাতীয় বাজেটে পুঁজিবাজারের গুণগত সম্প্রসারণ এবং টেকসই উন্নয়নের জন্য যথাযথ পলিসি সাপোর্ট থাকা জরুরি। আসন্ন বাজেটে পুঁজিবাজারবান্ধব বাজেট প্রত্যাশায় চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম এসব কথা বলেন।
গতকাল নিজস্ব কার্যালয়ে আসন্ন বাজেটে পুঁজিবাজারবান্ধব বাজেট প্রণয়নের দাবিতে সংবাদ সম্মেলনে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম এসব কথা বলেন। এ সময়ে উপস্থতি ছিলেন সিএসই’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম সাইফুল রহমান মজুমদার, পরিচালক এমদুদুল ইসলাম, নকিব উদ্দিন খান ও আকতার পারভেজ হিরু। এ সময় তিনি বলেন, দেশের জনসংখ্যার তুলনায় এক শতাংশের কম বিনিয়োগকারী বাজারে আছেন। পাশে দেশগুলোয় বিনিয়োগকারীর হার ১২ শতাংশের কাছাকাছি। একইভাবেদেশের কয়েকটি লাভজনক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান আছে। অথচ মাত্র বর্তমানে ৩৪৯টি কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত আছে। স্থিতিশীল পুঁজিবাজারের জন্য গুণগত মানসম্পন্ন কোম্পানি তালিকাভুক্তির মাধ্যমে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে এ সংখ্যা একটি সন্তোষজনক সংখ্যায় উন্নীত করা প্রয়োজন। এজন্য তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির করপোরেট কর হারের ব্যবধান ন্যূনতম ১০ শতাংশ বৃদ্ধিকরণ। আর নতুন তালিকাভুক্ত কোম্পনিকে দু-তিন বছরের জন্য কর অব্যাহতি প্রদান করা।
তিনি আরও বলেন, বাজারের বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে হলে অবশ্যই লভ্যাংশের ওপর দ্বৈত কর প্রত্যাহার, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর মূলধনি লাভের ওপর কর প্রত্যাহার, মিউচুয়াল ফান্ড এবং ইটিএফ প্রভৃতি কালেকটিভ ইনভেস্টমেন্ট স্কিমে কর রেয়াতি সুবিধা বৃদ্ধি, মূলধনি লাভের ওপর কর কর্তন করা হলে তা চূড়ান্ত করদায় হিসাবে বিবেচনা করতে হবে।
সিএসই’র পরিচালক এমদাদুল ইসলাম বলেন, দেশের বড় বড় মেগা প্রকল্প ব্যয়ের অর্থায়ন পুঁজিবাজার থেকে নেয়া যায়। এসব মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে বিপুল পরিমাণে টাকা ব্যাংক ও দাতা সংস্থা থেকে নেয়া হয়। এতে ব্যাংক খাতের ওপর ব্যাপক চাপ পড়ে, যা আমরা বর্তমানের ব্যাংকগুলোর দিকে তাকালে দেখতে পাওয়া যায়, কত কঠিন অবস্থা আমাদের ব্যাংক খাতের। অথচ পুঁজিবাজার ব্লু বন্ড ও গ্রিন বন্ড ইস্যুর ওপর জায়গা হতে পারে। যেমন পদ্মা সেতুর টোল দিয়ে বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দেয়া যেত। এভাবে মাতারবাড়ীর মতো বড় প্রকল্পগুলোর অর্থায়নে সহজ ও নিরাপদ উৎস পুঁজিবাজার হতে পারে।
এম সাইফুল রহমান মজুমদার বলেন, আসন্ন জাতীয় বাজেটে পুঁজিবাজারের গুণগত সম্প্রসারণ এবং টেকসই উন্নয়নের জন্য যথাযথ কৌশল নির্ধারণ করে দিকনির্দেশনা অন্তর্ভুক্ত থাকা প্রয়োজন। বিগত বছরগুলোয় আমরা পুঁজিবাজারবান্ধব তেমন পলিসি সাপোর্ট বাজেটে দেখিনি। পাশাপাশি সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ওপর নতুন করে কর আরোপ করা ঠিক হবে না।