বাজেটে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাবে বৈশ্বিক অনিশ্চয়তা

নিজস্ব প্রতিবেদক: অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, এবারের বাজেটে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাবে অনিশ্চয়তা। বিশ্ব অর্থনীতিতে যে অনিশ্চয়তা বিরাজমান, এটা বিবেচনায় নিয়েই এবারের বাজেট হবে। দেশের অর্থনীতি আরও কীভাবে গতিশীল করা যায়, সেগুলো বাজেটে গুরুত্ব দেয়া হবে। গতকাল দুপুরে ভার্চুয়ালি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা প্রশস্ত করা হয়েছে। যে চ্যালেঞ্জিং সময় মোকাবিলা করে যাচ্ছি, এ সময়ে আমাদের দেশের মানুষকে যতটা পারি সহায়তা করব। ন্যায়সংগত হবে না, এমন কিছু তাদের ওপর চাপিয়ে দেব না।

বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম বাড়ানোর প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমি বলব আপনারা অপেক্ষা করেন। পাকিস্তান কী করল, সেটা আমরা করতে পারব না। তাদের চাহিদা এবং আমাদের চাহিদা ভিন্ন। তাদের যেটা প্রয়োজন, সেটা আমাদের প্রয়োজন নাও হতে পারে। সেটা নিরূপণ করে আমরা কাজটি করব। আমি আগেই বলেছি, আমরা অন্য কোনো দেশের সঙ্গে রিলেট করব তখনই যখন আমরা লাভবান হতে পারি। যুদ্ধ থেমে গেলে রাশিয়া বা ইউক্রেন থেকে সরাসরি প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র, জ্বালানি ও ভোজ্যতেল আনতে পারলে আমরা লাভবান হব।

বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম বৃদ্ধি অর্থনীতির জন্য আত্মঘাতী হবে বলে ব্যবসায়ীদের বক্তব্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমার সঙ্গেও আলোচনা হয়েছে। এ বিষয়ে আমি ভিন্ন মতামত দিতে চাই না। গত সপ্তাহে এটি নিয়ে মিডিয়ায় কথা হয়েছে।

দেশের আর্থিক খাতে কোনো দুর্বৃত্তায়ন নেই বলে দাবি করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেন, সারাবিশ্বে সংকটের মধ্যে বাংলাদেশের অর্থনীতি অন্যদের তুলনায় ভালো গতিতে এগিয়েছে।

এর আগে আর্থিক খাত দুর্বল নেতৃত্বে চলছে বলে মন্তব্য করেছিলেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমি তার (দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য) প্রতি সম্মান রেখে বলতে পারি, সারাবিশ্বে সংকটের মাঝে বাংলাদেশের অর্থনীতি যেভাবে আমরা এগিয়ে নিয়েছি, আমার মনে হয়Ñদিস ইজ বেস্ট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এটাই সেরা প্রশাসন)। মন্ত্রী বলেন, অন্যদের সঙ্গে তুলনা করলেও বুঝতে পারবেন, আমরা ভালো আছি। কেউ যদি ভালো সময়ের সঙ্গে এই সময় মেলানোর চেষ্টা করে, তাহলে মেলানো যাবে না। এটা যদি একই রকম না হয়, তাহলে কার সঙ্গে কার কম্পেয়ার (তুলনা) করবেন?

আসন্ন বাজেট নিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, বাজেট নিয়ে আমরা কোনো চাপ বোধ করছি না। আমরা যুদ্ধ (রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ) নিয়ে চাপ বোধ করছি। আমরা চাই যুদ্ধটি শেষ হোক। অর্থনীতিতে করোনা মহামারির প্রভাব নিয়ে তিনি বলেন, কভিড শেষ করলাম, কভিড যা ক্ষতি করার করেছে। কভিডের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতিতে আমরা যখন বিভিন্ন দিকে মগ্ন ছিলাম, সেই সময় আবার যুদ্ধ শুরু হয়ে গেল। এটা ঠিক যে, আমাদের বাহ্যিক যে দুর্বলতাগুলো রয়েছে, সে সম্পর্কে প্রজেকশন (ধারণা) করা যায় না। প্রজেকশন করতে তো এজামপশন (অনুমান) করা লাগে, কিন্তু যুদ্ধের কারণে সেটি করতে পারব না। এতটুকু চাপ তো অবশ্যই। সবাইকে কিন্তু এটি নিয়ে ভাবতে হচ্ছে।

বাজেটে সরকারি বা প্রকল্পের খরচ কমাতে কোনো নির্দেশনা থাকবে কি নাÑজানতে চাইলে তিনি বলেন, বাজেটে যেগুলো যুক্ত করা দরকার, সেগুলো যুক্ত করব। সরকারি সিদ্ধান্ত আমরা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি।

দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির চাপ কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করবেনÑজানতে চাইলে তিনি বলেন, পলিটিক্যাল ইন্ডিকেশন (রাজনৈতিক নির্দেশ) কেন লাগবে? একটা ডিসিশন (সিদ্ধান্ত) হলে, সেটা নিয়ে সারাদেশের মানুষই অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে পড়বে, এখানে রাজনীতি নেই।

দেশের সব মানুষ ঐক্যবদ্ধ বলে জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের বিদ্যমান যে অবস্থা, সেখান থেকে সুন্দরভাবে জনগণকে সঙ্গে নিয়েই আমরা যাতে এগুতে পারি, সেজন্য এ কাজটি করতে পারি। আমি মনে করি না, আমাদের অন্য কোনো চিন্তা আছে। আমাদের চিন্তাই হলো এটাকে মোকাবিলা করতে হবে।

রেমিট্যান্স নিয়ে মুস্তফা কামাল বলেন, আমরা গণমাধ্যমে দেখেছি, রেমিট্যান্স বেশি আসছে। আমাদের এক্সপোর্ট (রপ্তানি) বেড়ে গেছে। কোনো না কোনো চ্যালেঞ্জিং টাইম (সময়) থাকবেই। এগুলো একদিকে যেমন কঠোর, আরেক দিক থেকে এগুলো আমাদের সুযোগ সৃষ্টি করে। আমাদের এই সুযোগ কাজে লাগাতে হবে। এই কভিড আর ইউক্রেনের যুদ্ধ অনেক সম্প্রসারিতভাবে সুযোগ সৃষ্টি করবে। সেগুলো আমাদের কাজে লাগাতে হবে। আমি মনে করি, যেকোনো অর্থনীতিবিদ এর বাইরে চিন্তা করতে পারেন না। এর বাইরে চিন্তা করার কিছু নেই।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০