নিজস্ব প্রতিবেদক: চলতি অর্থবছরে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে বাজেট ঘাটতি পূরণে সঞ্চয়পত্রের ওপর সরকারের নির্ভরশীলতা বেড়েছে। অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর ২০১৭) জাতীয় সঞ্চয়পত্র বিক্রয়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৪২ দশমিক তিন শতাংশ। একই সময়ে নীট বৈদেশিক ঋণ গ্রহণের পরিমাণ হচ্ছে ২৪৪ কোটি টাকা। আলোচ্য সময়ে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে কোনো ঋণ নেয়নি সরকার। বরং পূর্বে গৃহীত ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করেছে এক হাজার ৬৮৫ কোটি টাকা।
গতকাল সোমবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপিত ‘বাজেট ২০১৭-১৮: প্রথম প্রান্তিক (জুলাই-সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত বাস্তবায়ন অগ্রগতি ও আয়-ব্যয়ের গতিধারা এবং সামষ্টিক অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এ প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাজেট ঘাটতি পূরণে সরকারি খাতের ঋণপ্রবাহ মুদ্রা ও আর্থিক খাত ব্যবস্থাপনার ওপর কোনোরূপ বাড়তি চাপ তৈরি করছে না। চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিক শেষে সরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ পূর্ববর্তী বছরের একই সময়ের তুলনায় কমেছে সাড়ে ১৩ শতাংশ কমেছে। অধিক পরিমাণে সঞ্চয়পত্র বিক্রয়ের কারণে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা কমেছে। বাজেট ঘাটতি অর্থায়নের ক্ষেত্রে ব্যাংকবহির্ভূত উৎসের মধ্যে প্রথম প্রান্তিকে জাতীয় সঞ্চয়পত্র বিক্রয়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৪২ দশমিক তিন শতাংশ।
প্রসঙ্গত: চলতি অর্থবছরে ব্যাংক ব্যবস্থা হতে সরকারের ঋণ গ্রহণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২৮ হাজার ২০২ কোটি টাকা।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এর বিপরীতে পূর্বে গৃহীত ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করা হয়েছে এক হাজার ৬৮৫ কোটি টাকা। এছাড়া আরও তিন হাজার ৩৭ কোটি টাকা ব্যাংকবহির্ভূত অন্যান্য ঋণ পরিশোধ করেছে সরকার।
বাজেট ঘাটতি অর্থায়নে বৈদেশিক ও অনুদান প্রসঙ্গে প্রতিবেদনে বলা হয়, আলোচ্য সময়ে মোট বৈদেশিক ঋণ পাওয়া গেছে দুই হাজার ৫২১ কোটি টাকা এবং বৈদেশিক অনুদান চার কোটি টাকা। অন্যদিকে একই সময়ে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করা হয়েছে দুই হাজার ২৭৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ নিট বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ হচ্ছে ২৪৪ কোটি টাকা।
‘আর্থ-সামাজিক সব ক্ষেত্রেই ইতিবাচক পরিবর্তনের ধারা অব্যাহত আছে’ দাবি করে প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে আমরা সাত দশমিক ২৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছি। দারিদ্র্য হ্রাস পেয়ে বর্তমানে ২৪ দশমিক তিন শতাংশে নেমেছে এবং অতিদারিদ্র্য কমে দাঁড়িয়েছে ১২ দশমিক ৯ শতাংশে। চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বাজেট বাস্তবায়ন, সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষা ও উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়নে সরকারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। বিশেষত অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে রফতানি আয়, প্রবাস আয়, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, ব্যাপক মুদ্রা সরবরাহসহ মৌলিক সামষ্টিক অর্থনৈতিক চলকসমূহের অবস্থান বেশ সন্তোষজনক।
চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় রাজস্ব আদায় ১৯ দশমিক তিন শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে; মোট সরকারি ব্যয় বেড়েছে আট দশমিক সাত শতাংশ; বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন বিগত অর্থবছরে প্রথম প্রান্তিকে ছিল মোট বরাদ্দের আট দশমিক সাত শতাংশ। এর বিপরীতে চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে বাস্তবায়নের হার দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক দুই শতাংশ; রফতানি আয় বিগত অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের আট দশমিক এক বিলিয়ন মার্কিন ডলার হতে বেড়ে আট দশমিক সাত বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে। প্রথম প্রান্তিকে রফতানি আয়ের প্রবৃদ্ধি হয়েছে সাত দশমিক ছয় শতাংশ, বিগত অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল তিন দশমিক আট শতাংশ; আমদানি ব্যয় ২৮ দশমিক চার শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ১৩ দশমিক দুই বিলিয়ন মার্কিন ডলার হয়েছে; বিগত অর্থবছরে এ প্রবৃদ্ধি ছিল আট দশমিক চার শতাংশ; আমদানি ঋণপত্র খোলার প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৬ দশমিক পাঁচ শতাংশ; ব্যক্তি খাতে ঋণপ্রবাহ ১৭ দশমিক আট শতাংশ বেড়েছে; প্রবাস আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে চার দশমিক চার শতাংশ। বিগত অর্থবছরের একই সময়ে প্রবাস আয়ে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি (-১৭.৫) ছিল।