নিজস্ব প্রতিবেদক: বাজেট ঘোষণা হয় জাতীয় সংসদে। আর এটি অনুমোদন দেন সংসদ সদস্যরা। কিন্তু বাজেট প্রণয়নে সংসদ সদস্যদের ভূমিকা তেমন নেই। বরং সংসদ সদস্যদের তুলনায় স্বার্থান্বেষী সিন্ডিকেট বাজেটে আরও বেশি প্রভাব রাখে। আর বাজেটে যেসব ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়, তার অনেক কিছু জনকল্যাণের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। সরকারের কর প্রশাসনে রয়েছে নানা দুর্নীতি। এ সবকিছু ঠিক করার জন্য প্রয়োজন বড় ধরনের সংস্কার।
রাজধানীর একটি হোটেলে গতকাল সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বাজেট সংলাপে বক্তারা এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান। বিশেষ অতিথি ছিলেন সংসদ সদস্য আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও কাজী নাবিল আহমেদ। সিপিডির ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য সৈয়দ মঞ্জুর ইলাহীর সঞ্চালনায় এতে আরও বক্তব্য রাখেন ব্র্যাকের চেয়ারপার্সন ড. হোসেন জিল্লুর রহমান, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধূরী, শ্রমিক নেতা রাজেকুজ্জামান রতন ও দৈনিক বণিক বার্তা সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন।
অনুষ্ঠানে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, বাজেটে সংসদ সদস্যদের চেয়ে সিন্ডিকেটের ভূমিকা বেশি। তাদের প্রভাবে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ যুক্ত হয়েছে বাজেটে। এ বিধান যুক্ত করায় বাজেট তার নৈতিক চরিত্র হারিয়েছে। এখন যদি কেউ চুরি, ডাকাতি ও খুন-খারাবির মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করে, তাহলে সেটিও বৈধ করা যাবে। তিনি বলেন, যারা অর্থ পাচার করে মালয়েশিয়া ও কানাডাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাড়ি করেছে, তাদেকে কেন ধরা হচ্ছে না? বাজেটে খেলাপি ঋণ ব্যবস্থাপনায় কোনো উদ্যোগ নেই বলে মন্তব্য করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে এমএ মান্নান বলেন, বাজেট কোথায় ব্যয় হয়, সেখান থেকে জনগণ কী পাচ্ছে, তা বিচার করা দরকার। তিনি বলেন, এমন প্রকল্প আমার হাত দিয়ে গেছে বা যাচ্ছে যেগুলোর সঙ্গে আমি মনে-প্রাণে একমত নই। আমরা বাস করি ভূতলে, বিনিয়োগ করি পাতালে। এটা আমার নিজের বক্তব্য। আমি সরকারের অংশ এই মুহূর্তে নই। রাজনৈতিকভাবে দলে ও সংসদে আছি। সাধারণ মানুষ ও গ্রামীণ এলাকার প্রতিনিধিত্ব করছি। আমরা গ্রামে বিদ্যুৎ পেয়েছি, কমিউনিটি ক্লিনিক পেয়েছি। প্রধানমন্ত্রী এসব দিয়েছেন। কৃষিতে আমাদের বিশাল অর্জন হয়েছে।
প্রকল্প বাস্তবায়নে ১০ বছরের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে এমএ মান্নান বলেন, বাজেটে কোথায় ব্যয় করছি, সেখান থেকে আমরা কী পাচ্ছিÑএসব বিচার করা দরকার। তিনি বলেন, আমি প্রকল্প বাস্তবায়নে জড়িত ছিলাম প্রায় ১০ বছর। আমার অনেক ব্যক্তিগত আপত্তি আছে। যেহেতু আমি টিম ওয়ার্কার, ক্যাপ্টেন, আমার দলের জন্য মানা উচিত, না হলে আমি আছি কেন দলের সঙ্গে। রাজনৈতিকভাবে বৃহত্তর অর্থে আমি তার সঙ্গে আছি। বাট এখানে ফাঁকফোকরে কোনো কোনো জায়গায় আমার ভিন্নমত অবশ্যই আছে।
হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, বাজেটে কর্মসংস্থানের বিষয়টি খুবই কম গুরুত্ব পেয়েছে। তিনি বলেন, দেশে উদ্যোগের অভাব নেই। কিন্তু সেসব উদ্যোগ বাস্তবায়নে তেমন পদক্ষেপ নেয়া হয় না। তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ একটি অদক্ষতার ফাঁদে আটকে গেছে। এ থেকে বের হয়ে আসতে হলে শিক্ষায় গুণগত বিনিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বরাদ্দ যৌক্তিকীকরণের প্রস্তাব দেন দেওয়ান হানিফ মাহমুদ। তিনি ভারতের উদাহরণ দিয়ে বলেন, সেখানে পাইকারিতে যে দামে বিদ্যুৎ বিক্রি হয়, বাংলাদেশে তার চেয়ে অনেক বেশি দাম পরিশোধ করতে হয়। কী কারণে বাংলাদেশে বিদ্যুতের দাম বেশি পড়ছে, তার কারণ অনুসন্ধানের তাগিদ দেন তিনি।
মূল প্রবন্ধে ড. ফাহমিদা খাতুন উল্লেখ করেন, বাজেটে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি কমিয়ে ধরা হয়েছে। এছাড়া মূল্যাস্ফীতি সাড়ে ছয় শতাংশে নামিয়ে আনার যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে, সে বিষয়টিকে তিনি অতি উচ্চ আশাবাদ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।