অর্থমন্ত্রী ৬ জুন সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট পেশ করেন। কিছু সংশোধনী আনার পাশাপাশি নতুন কিছু প্রস্তাব এনে জাতীয় সংসদে রোববার পাস হয়েছে বাজেট। এবারের বাজেট ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার।
বাজেট হচ্ছে একটি দেশের সম্ভাব্য আয়-ব্যয়ের হিসাব। সরকার দেশ পরিচালনা করে। সরকারের হয়ে যারা কাজ করেন অর্থাৎ প্রজাতন্ত্রের সব পর্যায়ের সরকারি কর্মচারীকে বেতন দিতে হয়, জনসাধারণের উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন অবকাঠামো, স্থাপনা নির্মাণসহ নানা উদ্যোগ নিতে হয়। তাই একটি নির্দিষ্ট অর্থবছরে কোথায় কত ব্যয় হবে, কোথা থেকে সেই খরচ সংকুলান হবে, সে পরিকল্পনার নামই বাজেট।
একজন মানুষকেও কিন্তু আয়-ব্যয়ের হিসাব করতে হয়। তবে ব্যক্তি আগে আয় কত হবে, সেটি ঠিক করেন, তারপর ব্যয়ের খাতগুলো নির্ধারণ করেন। অন্যদিকে রাষ্ট্র আগে ব্যয়ের খাতগুলো নির্ধারণ করে। এরপর ঠিক করে, কোথা থেকে অর্থ আসবে। আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সামঞ্জস্য না হলে রাষ্ট্র দেশ-বিদেশ থেকে অর্থ ধার করতে পারে।
প্রতি বছরই বাজেট প্রস্তাব পেশ বিংবা পাসের পর আলোচনা-সমালোচনা-বিতর্ক হয়। আমাদের বাজেট ভালো কি না, সেটি মূল্যায়ন, বিশ্লেষণ করবেন অর্থনীতিবিদরা। সাধারণ মানুষ বিবেচনা করে আমাদের দেশের সার্বিক অবস্থা নিয়ে, নিত্যপণের দাম বাড়া-কমা নিয়ে।
ঘোষিত বাজেট প্রস্তাবের পর অনেক প্রতিক্রিয়া এসেছে। এবারের বাজেট প্রস্তাবের একটি ভালো দিকÑএতে পূর্ববর্তী বাজেটের কী কী অর্জিত হয়নি, তা তুলে ধরা হয়েছে। পাস করার পর প্রধান উদ্দেশ্য হওয়া উচিত সেটির শতভাগ বাস্তবায়ন করা। যদিও বাজেটের পূর্ণ বাস্তবায়ন সাধারণত হয় না; তবু বাস্তবায়নে সর্বোচ্চ দায়িত্বশীলতা দরকার।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সোমবার অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী একটি বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেনÑসবাই যেন খুব যতেœর সঙ্গে ও নজরদারির মধ্য দিয়ে বাজেট বাস্তবায়নে মনোযোগ দেন। নিপুণতা ও স্বচ্ছতার সঙ্গে যেন বাজেট বাস্তবায়ন হয়, সে বিষয়ে সবাইকে নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।
কল্যাণ রাষ্ট্র না হলেও আমাদের বাজেটকে একটি মানবিক রূপ দেয়ার চেষ্টা থাকে। এজন্য নানা ধরনের সামাজিক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হয়। এখানে যেন কোনো দুর্নীতি না হয়, তাতে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দেশ তথা সাধারণ মানুষ যাতে বাজেটের পূর্ণ সুফল পায় সে জন্য, এটির পূর্ণ বাস্তবায়ন করা জরুরি। বাজেট পেশ করা, আর বাজেট বাস্তাবয়ন এক কথা নয়। অনেক সময় দেখা যায় বাজেট বাস্তবায়িত হয়নি।
বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) শীর্ষক একটি প্রকল্প খাত রয়েছে। এ খাতেই সাধারণত উন্নয়ন বাজেটের খরচ দেখানো হয়। কিন্তু এডিপির বাস্তবায়ন হার খুবই ধীর। বাজেট সময়োপযোগী, ব্যবসাবান্ধব, নাকি জনবান্ধবÑএ নিয়ে আলোচনা-বিতর্ক হবে। তা হোক কিন্তু প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত সাধারণ মানুষের জীবনমান উন্নয়নে বাজেটের পূর্ণ বাস্তবায়ন করা।