বাজেট ব্যয়ের গুণগত মান ও স্বচ্ছতা নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের বাজেট নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে। কিন্তু জনমতের প্রতিফলন হচ্ছে কি না, তা নিয়ে পর্যালোচনা হচ্ছে না। এছাড়া বাজেটে যেসব খাতে ব্যয় বরাদ্দ হয়, সেগুলো মানসম্মতভাবে ব্যয় হচ্ছে না। ব্যয়গুলো যথাসময় হচ্ছে না, সম্পূরক ব্যয় নিয়ে আলোচনা হচ্ছে না, ব্যয়ের ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত জবাবদিহিতাও নেই। এসব নিশ্চিতের মাধ্যমে বাজেটের গুণগত মান বৃদ্ধির পরামর্শ দিয়েছেন বিশিষ্টজনরা।
দি ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউনটেন্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএবি) ও প্রথম আলোর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত প্রাক-বাজেট আলোচনায় বক্তারা এসব কথা বলেন। গতকাল রাজধানীর সিএ ভবনে অনুষ্ঠিত ‘কেমন চাই জাতীয় বাজেট’ শীর্ষক এ আলোচনায় প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য ও সিনিয়র সচিব ড. শামসুল আলম। এতে সভাপতিত্ব করেন আইসিএবি’র সভাপতি দেওয়ান নুরুল ইসলাম।
আইসিএবি’র সাবেক সভাপতি মো. হুমায়ুন কবিরের সঞ্চালনায় এ আলোচনায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির (বেলা) পরিচালক সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) ড. নাজনীন আহমেদ, সাবেক রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ। এছাড়া সাবেক সচিব ও এসইসি’র সাবেক সভাপতি ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী, বেসিস সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবির, মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের মুহাম্মদ আহসান উল্লাহ, বিজিএমইএ সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান, প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আবদুল কাইয়ুম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনা কমিশনের ড. শামসুল আলম বলেন, ‘বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য অবকাঠামোর দিকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু আমাদের চিন্তা-চেতনায় কিছু সমস্যা রয়েছে। আমরা আমাদের ছেলেমেয়েকেই দেশে রাখতে চাই না। টাকাও রাখতে চাই না। বিদেশি বিনিয়োগের পাশাপাশি দেশের টাকা দেশে কীভাবে রাখা যায় সে বিষয়ে কাজ করতে হবে।
বাজেটের ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতি, আয় বৈষম্য আর সব ক্ষেত্রে গুণগত মান বজায় রেখে ব্যয় করার প্রয়োজন। স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা দরকার। সে সঙ্গে উন্নয়ন প্রকল্পগুলো সময়মত শেষ হওয়া দরকার। এজন্য সবাইকে কাজ করতে হবে। অনেকে ট্যাক্স দিতে চান না। আমি তাদের বলব, আপনি নিজের ও সম্পদের নিরাপত্তা চাইবেন না, অবকাঠামো চাইবেন না আর পরিষেবাও চাইবেন না; তাহলে আমরাও সরকার থেকে ট্যাক্স নেব না।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, বাজেটে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ কমছে। অর্থমন্ত্রী বলেছেন এটা চতুর্থ অগ্রাধিকারের দিক থেকে। জ্বালানি ও অবকাঠামোকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু দুর্নীতির কারণে জিডিপির দুই শতাংশ নষ্ট হয়, নারীর প্রতি সহিংসতার কারণে দুই শতাংশ জিডিপি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আইনের শাসনের মাধ্যমে এগুলো নিয়ন্ত্রণ করা গেলে তা শিক্ষায় বিনিয়োগ করা যেত। কাজেই আইনের শাসনের দিকে গুরুত্ব দেওয়া জরুরি। তাছাড়া দক্ষতা উন্নয়নের দিকে নজর দেওয়া জরুরি। ২৬টি মন্ত্রণালয় দক্ষতা উন্নয়ন নিয়ে কাজ করছে, তাদের মধ্যে সমন্বয় নিয়ে কোনো কাজ দেখছি না। আমাদের মনে রাখতে হবে, বৈষম্যমুক্ত উন্নয়ন দেখতে হলে স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষার মান নিশ্চিত করতে হবে।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, বাজেট নিয়ে আমি ভালো বলতে পারব না। তবে এতটুকু বুঝি যে, একটা গোষ্ঠীকে দূষণ করার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। আরেকটি গোষ্ঠী ট্যাক্সের টাকা দিয়ে দূষিত পানি বিশুদ্ধ করে তারপর পান করছে। আমাদের বাতাস ও খাবার এতটাই দূষিত যে, এটা জানলে আমরা তা গ্রহণ করতাম না। তিনি ঢাকার যানজট ও পরিবহন ব্যবস্থা অসহনীয় উল্লেখ করে বলেন, ঢাকার সাতটি নদী ও জলাশয় উদ্ধার করে সেখানে জলযান চালু করতে বাজেট রাখা প্রয়োজন।
এ সময় বক্তারা আয়বৈষম্য ও কর্মসংস্থানহীন প্রবৃদ্ধির বিষয়ে কথা বলেন। তাছাড়া বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ বাড়াতে করপোরেট করহার কমানো এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ওপর করপোরেট করের বৈষম্যমূলক হার সমন্বয়ের প্রয়োজন বলে মত দেন।
ড. নাজনীন আহমেদ তার বক্তব্যে বলেন, বড় উদ্যোক্তাদের ঋণ দেওয়া হয়, তাদের মধ্যে খেলাপিও হয়। কিন্তু ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা ঋণ পরিশোধে বেশি আন্তরিক। অথচ তাদের ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা সীমিত। তাদের পৃষ্ঠপোষকতার জন্য বাজেটে ব্যবস্থা থাকা দরকার। তিনি আরও বলেন, সুশাসন নিশ্চিতে বাড়তি ব্যয়ের ফলে সক্ষমতা কতটুকু বেড়েছে, তা নিয়ে পর্যালোচনা করা দরকার। সরকারি চাকরিতে বেতন বাড়ানোর কারণে রাজস্ব ব্যয় বেড়েছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, এর ফল হিসেবে সরকারি প্রতিষ্ঠানের দক্ষতা বেড়েছে কি না, তা নিয়ে পর্যালোচনা হওয়া দরকার।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০