নিজস্ব প্রতিবেদক: বাজেট সহায়তা দেয়ার আগে বাংলাদেশের অর্থনীতির অবস্থা পর্যালোচনা করছে বিশ্বব্যাংক। এর অংশ হিসেবে গতকাল পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলমের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিশ্বব্যাংকের একটি প্রতিনিধিদল। এতে নেতৃত্ব দেন সংস্থাটির দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক ম্যাথিউ ভারগিস। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম।
রাজধানীর শেরে বাংলা নগরের পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সšে§লন কক্ষে ব্রিফিংয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রতিশ্রুত ২৫ কোটি ডলার বাজেট সহায়তা ছাড় করার আগে বেশ কিছু বিষয় জানতে চেয়েছে বিশ্বব্যাংক। এর মধ্যে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি, রিজার্ভের অবস্থা, মূল্যস্ফীতি, ভ্যাট আইন সংস্কার, সিপিটিইউকে পাবলিক প্রকিউমেন্ট অথরিটিতে রূপান্তর করার অগ্রগতি, প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীর গতি প্রভৃতি। বিশ্বব্যাংকের এসব প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের বিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন থেকে কমে গেছে। এটি একটি চ্যালেঞ্জ। কিন্তু আমাদের রপ্তানি বাড়ছে ২৫ শতাংশ হারে। আমদানি বাড়ছে ২৩ শতাংশ হারে। এক্ষেত্রে আমদানির চেয়ে রপ্তানির বৃদ্ধির গতি ভালো। পাশাপাশি প্রতি মাসে দুই বিলিয়ন ডলার করে বৈদেশিক আয় আসছে। ফলে রিজার্ভ পুনরায় শক্তিশালী অবস্থানে চলে যাবে।’
মূল্যস্ফীতির প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধিদের বলেন, ‘আমাদের মূল্যস্ফীতি যতটা বাড়ার কথা ছিল ততটা বাড়েনি। খাদ্যপণ্যের দাম আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির তুলনায় বেশি বাড়েনি। মূল্যস্ফীতি কমাতে অনেক পদক্ষেপ নিয়েছি।’
রিজার্ভ ব্যাপকহারে হ্রাস পাওয়ার কারণ জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বিশ্বব্যাংক প্রতিনিধিদলকে বলেন, ‘সাম্প্রতিক বছরগুলোয় আমাদের আমদানি অনেক বেড়ে গিয়েছিল। এতে করে চলতি হিসাবে বিরাট অঙ্কের ঘাটতি দেখা দিয়েছিল। বৈদেশিক লেনদেনের এ ঘাটতি হ্রাস করার জন্যই রিজার্ভ থেকে বাড়তি অর্থ ব্যয় করতে হয়েছে। যে কারণে রিজার্ভ হ্রাস পেয়েছে। তবে চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই আমদানি কমাতে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এতে করে চলতি হিসাবে যে বিশাল ঘাটতি তৈরি হয়েছিল, তা ধীরে ধীরে কমে আসছে।’
অচিরেই রিজার্ভ শক্তিশালী হবে উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আনুষ্ঠানিক মাধ্যমে রেমিট্যান্সের প্রবাহ ভালো। প্রতি মাসে দুই বিলিয়ন মার্কিন ডলারের মতো রেমিট্যান্স আমরা পাচ্ছি। এর আগে একসঙ্গে কখনও দুই বিলিয়ন ডলার পাইনি। এছাড়া আমদানির তুলনায় রপ্তানির প্রবৃদ্ধি ভালো। আমরা সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় স্বস্তির দিকে এগোচ্ছি।’
তিনি আরও বলেন, আমরা মুদ্রার বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দিয়েছি। বৈদেশিক মুদ্রার বাজারও স্থিতিশীল হবে। দেশের উৎপাদনশীল কোনো খাত ব্যাহত হয়নি। কৃষি ও শিল্পে সমানতালে উৎপাদন হচ্ছে। উৎপাদন ব্যবস্থা ঠিক আছে। দেশের পুরো অর্থনীতি আমাদের আয়ত্তের মধ্যে আছে। এসব বিষয় বিশ্বব্যাংক প্রতিনিধিদলকে অবহিত করা হয়েছে।’
সরকারে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতির প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, মেগা প্রকল্পসহ দেশের সব প্রকল্পের গতি বৃদ্ধির প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। বিশ্বব্যাংক বাজেটে প্রকল্প ব্যবস্থাপনার উদ্যোগ বিষয়ে জানতে চেয়েছে। তারা প্রকল্পের খরচ কমিয়ে সঠিক সময়ে বাস্তবায়নের বিষয়ে জোর দিয়েছে। আমরা এ বিষয়ে কাজ করছি। এক্ষেত্রে ইজিপি ব্যবস্থা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বিশ্বব্যাংকের হিসাব মতে, ইজিপি চালু হওয়াতে প্রকল্প বাস্তবায়নে বছরে এক বিলিয়ন ডলার সাশ্রয় হচ্ছে।’
গ্রিন গ্রোথ বা সবুজ প্রবৃদ্ধি অর্জনে বাংলাদেশ কী পদক্ষেপ নিয়েছে, সে বিষয়ে জানতে চান বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধিরা। এ বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী তাদের বলেন, এখন থেকে গ্রিন গ্রোথে জোর দেবে বাংলাদেশ। সে জন্যই বদ্বীপ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।’ এর বাইরে বিশ্বব্যাংক সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা আনয়নের জন্য ভ্যাট ও ট্যাক্স আইন সংস্কারের পাশাপাশি নানা ধরনের সংস্কার কার্যক্রম জোরদার করার বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছে।
এর আগে জুলাই মাসে সরকার বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে ১০০ কোটি ডলার বাজেট সহায়তা চেয়েছিল। ওই সময় বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সরকারের আলোচনা হয়েছিল। তারই পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের রিজিওনাল ডিরেক্টর পরিকল্পনা মন্ত্রীর সঙ্গে দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা সচিব মামুন আল রশীদ, পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদস্য (সচিব) ড. কাওসার আহমেদ প্রমুখ।