Print Date & Time : 18 June 2025 Wednesday 8:40 pm

বাড়ছে রেমিট্যান্স, ডলার বাজারে স্বস্তির আভাস

নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রবাসীদের পাঠানো আয় বেড়েছে। কমতে শুরু করেছে আমদানি। এতে স্বস্তির আভাস দিয়েছে ডলার বাজার। চলতি মাস আগস্টে প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে তুলনামূলক বেশি টাকা পাঠাচ্ছেন। চলতি মাসের ১৬ দিনে ১১৭ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৬ দশমিক ৩০ শতাংশ বেশি। কমেছে এলসি খোলার হার। সব মিলিয়ে অনেক বেড়ে যাওয়া ডলারের দর কিছুটা কমেছে। গত দুই দিনে সেটি নেমে এসেছে ১১০ থেকে ১১১ টাকায়। অর্থাৎ এক সপ্তাহের ব্যবধানে খোলা বাজারে ডলারের দাম কমেছে ১০ টাকা। এছাড়া বুধবার ব্যাংকগুলো আমদানির জন্য ১০৮ টাকা পর্যন্ত দর নিয়েছে। সম্প্রতি আমদানি ডলারের সর্বোচ্চ দর ওঠে ১১২ টাকা। আর খোলাবাজারে ১২০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। এতে ডলার বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়।

অর্থনীতিবিদরা বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় অর্থনীতিতে যে নতুন সংকট দেখা দিয়েছে, সেই সংকট কাটাতেও সবার আগে এগিয়ে এসেছেন প্রবাসীরা। আবার বেশি বেশি রেমিট্যান্স দেশে পাঠাচ্ছেন। এ সময় এটারই খুব দরকার ছিল।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সূত্র জানায়, আগস্টের ১৬ দিনে ১১৭ কোটি ১০ লাখ ডলার দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। বর্তমান বিনিময় হার হিসাবে (প্রতি ডলার ৯৫ টাকা) টাকার অঙ্কে এই অর্থের পরিমাণ ১১ হাজার ১২৪ কোটি টাকা, যা গত বছরের আগস্টের একই সময়ের চেয়ে ১৬ দশমিক ৩০ শতাংশ বেশি। এ হিসাবে প্রতিদিন এসেছে ৭ কোটি ২৬ লাখ ডলার বা প্রায় ৭০০ কোটি টাকা।

জানা যায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ২০৯ কোটি ৬৯ লাখ ১০ হাজার (২ দশমিক ১ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা, যা ছিল গত ১৪ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। আর গত বছরের জুলাইয়ের চেয়ে বেশি ছিল ১২ শতাংশ।

এদিকে ডলারের বাজারে স্থিতিশীলতা আনতে গত অর্থবছরের ধারাবাহিকতায় রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করেই চলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। চলতি অর্থবছরের ১ মাস ১৬ দিনে (১ জুলাই থেকে ১৬ আগস্ট) বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ থেকে ১৮৫ কোটি ৩০ লাখ (১ দশমিক ৮৫ বিলিয়ন) ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত ২০২১-২২ অর্থবছরের পুরো সময়ে ৭ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রতিদিন ডলার বিক্রির কারণে রিজার্ভ চাপের মধ্যে রয়েছে। ১৬ আগস্ট পর্যন্ত রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৯ দশমিক ৫৫ বিলিয়ন ডলারে। অথচ গত বছরের একই সময় রিজার্ভ ছিল ৪৬ বিলিয়ন ডলার। আর গত জুনের শেষেও রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৪১ দশমিক ৮২ বিলিয়ন ডলার।

এছাড়া ডলারের সংকট কাটাতে কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আমদানিতে দেয়া হয়েছে নানা শর্ত। রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে দেয়া হয়েছে নীতিগত ছাড়। এছাড়া ব্যাংক ও মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বৈঠক করছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। ডলার কারসাজির জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ধরতে চালাচ্ছে অভিযান। অনিয়মকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও নেয়া হচ্ছে।

গত বুধবার মানিচেঞ্জারগুলোর প্রতি ডলারে সর্বোচ্চ দেড় টাকা মুনাফার সীমা ঠিক করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর আগে গত রোববার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন এবিবি ও বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনকারী ব্যাংকের সংগঠন বাফেদা বৈঠক করে

সিদ্ধান্ত নেয় ডলার বেচাকেনার মধ্যে সর্বোচ্চ এক টাকা পার্থক্য থাকবে। এই সিদ্ধান্ত কার্যকরের আগে ব্যাংকগুলো নিজেরা বসে সব ব্যাংকে একটি চিঠি দেয়ার কথা। আর কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যাংকের সেই দর কার্যকর হচ্ছে কি না, তা তদারক করবে। সেখানে কোনো হেরফের পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, এবিবি ও বাফেদার সঙ্গে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, ব্যাংকগুলো যে দামে রেমিট্যান্স ও রপ্তানি বিল কিনবে, তার চেয়ে সর্বোচ্চ এক টাকা বেশি দরে বিক্রি করবে। মানিচেঞ্জার অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে বৈঠক করে ব্যাংকের গড় দর থেকে এক টাকা বেশি দামে ডলার কেনার কথা বলা হয়েছে। বিক্রির ক্ষেত্রে এক থেকে সর্বোচ্চ দেড় টাকা পর্যন্ত মুনাফা করতে পারবে।

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের নানামুখী পদক্ষেপে কমেছে আমদানি। কমেছে আমদানি এলসি খোলার হারও। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, আগস্টের ১১ দিনে দেশে মোট ১৬১ কোটি ডলার সমপরিমাণ মূল্যের আমদানির ঋণপত্র খোলা হয়েছে। জুলাইয়ের ওই ১১ দিনের তুলনায় যা ৯৪ কোটি ডলার বা ৩৬ শতাংশ কম। তখন আমদানি হয়েছিল ২৫৫ কোটি ডলার।

তথ্য বলছে, জুলাইয়ে দেশে মোট ৫৫৫ কোটি ডলার মূল্যের পণ্যের আমদানি ঋণপত্র খোলা হয়েছে, যা জুনের তুলনায় ৩০ দশমিক ২০ শতাংশ কম। জুনে আমদানি ঋণপত্র খোলা হয়েছিল ৭৯৬ কোটি ডলারের।