বাংলাদেশের প্রত্যন্ত দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় পার্বত্য চট্টগ্রামে (সিএইচটি) ইউনিসেফের সহায়তাপ্রাপ্ত গৃহশিক্ষা উদ্যোগ কভিড-১৯-এর কারণে দেশব্যাপী শিক্ষা ক্ষেত্রে যে লকডাউন কার্যকর করা হয়েছে, তার প্রভাব কাটানোর ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে।
মূলত বিভিন্ন আদিবাসী জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত যে তিন জেলা নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম গঠিত, সেই তিন জেলায় গড়ে ওঠা ৪ হাজার ৩০০ পাড়া সেন্টারের মাধ্যমে সাধারণত প্রারম্ভিক শিক্ষা ও প্রাক-স্কুল কার্যক্রম পরিচালিত হয়।
কভিড-১৯-এর কারণে এই কেন্দ্রগুলো অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে গেছে। এ অবস্থায় পার্বত্য চট্টগ্রামে শিশুদের বেশিরভাগ সময়ে বিদ্যুৎ এবং টেলিভিশন ও ইন্টারনেটের মতো আধুনিক প্রযুক্তির সুবিধাবিহীন অবস্থায় বাড়িতে বসে পড়াশোনা করা ছাড়া অন্য বিকল্প নেই। তারা একটি সামগ্রিক বিকাশ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, যা তাদের প্রাক-স্কুল প্রস্তুতির একটি অপরিহার্য অংশ।
রাঙামাটির বাসিন্দা স্নেহা চাকমা পার্বত্য চট্টগ্রামে ৩ থেকে ৫ বছর বয়সী দেড় হাজার শিশুর মধ্যে একজন, যাকে সম্প্রতি একটি গৃহভিত্তিক শিক্ষা উপকরণ সরবরাহ করা হয়েছে।
স্নেহা জানায়, ‘পাড়া কেন্দ্রে’ বন্ধু ও শিক্ষকদের সঙ্গে থাকতেই সে বেশি পছন্দ করে। তবে এখন অন্তত বাসায় আমরা বেশি করে ছবি আঁকতে, পড়তে, লিখতে ও খেলতে পারছি।
শিক্ষা উপকরণের মধ্যে দুই মাসের উপযোগী পাঠ্যক্রম রয়েছে, যেখানে বাড়িতে শিশুদের কীভাবে অর্থপূর্ণ শিক্ষা কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত রাখতে হবে সে বিষয়ে মা-বাবার জন্য পরামর্শ রয়েছে।
ইউনিসেফ-চট্টগ্রাম ফিল্ড অফিসের শিক্ষা অফিসার আফরোজা ইয়াসমিন বলেন, পাঠ্যক্রমটি বিদ্যমান পাড়া কেন্দ্রগুলোর মডিউল থেকে গৃহীত ও পরিমার্জিত হয়েছে, যা ইতোমধ্যে শিশুদের কাছে পরিচিত।
তিনি বলেন, পাঠ্যক্রমের বিষয়বস্তু বিশেষ করে শিশুদের জন্য বেশ সহজ এবং উপযোগী। পাড়া কেন্দ্রগুলো থেকে ন্যূনতম সহায়তা নিয়ে বাড়িতে মা-বাবা এটা ব্যবহার করতে পারেন। শিক্ষাপঞ্জিতেও শিক্ষামূলক উপকরণ রয়েছে, যা সংক্রমণ প্রতিরোধের বিষয়ে বিশেষ মনোযোগ প্রদানের মাধ্যমে শিশু ও তাদের পরিবারকে কভিড-১৯ মোকাবিলায় সহায়তা করে।
আফরোজা ইয়াসমিন বলেন, গৃহভিত্তিক শিক্ষার এই প্যাকেজটি বিশেষ করে দুর্গম এলাকাগুলোর শিশুদের জন্য তৈরি করা হয়েছে, যেখানে আবৃত্তি ও গানসহ শিশুদের দৈনিক নিয়মিত কার্যক্রমকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। আর ঘরে শিশুদের শিক্ষায় সহায়তা দিতেই এই প্যাকেজ তৈরি করা হয়েছে।
ইউনিসেফের তথ্য অবলম্বন