জাকারিয়া পলাশ: ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার চতুর্থ দিন আজ। এখনও অধিকাংশ দোকানে শুরু হয়নি বিক্রি। অনেক স্টলে চলছে সাজসজ্জার কাজ। বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য বরাদ্দ রাখা প্যাভিলিয়নগুলোর মধ্যে ফাঁকা রয়েছে অনেক। বিভিন্ন দেশি প্রতিষ্ঠান পণ্য ও সেবার পসরা সাজিয়েছে সেখানে। একই প্যাভিলিয়নে দেশি-বিদেশি পণ্য একাকার হয়ে আছে। বিদেশি প্যাভিলিয়ন ও স্টলের সংখ্যার হিসাবও মিলছে না। এছাড়া এক দেশের জন্য সংরক্ষিত প্যাভিলিয়নে দোকান বসেছে অন্য দেশের পণ্যের।
গতকাল মঙ্গলবার মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা গেছে এ অবস্থা। মেলার দ্বিতীয় ফটক দিয়ে ঢুকতেই প্রথম প্যাভিলিয়নটিতে (এফপি-২৭) গতকাল পর্যন্ত মাত্র তিনটি স্টল বসেছিল। একেকটি বড় প্যাভিলিয়নে ছোট-বড় প্রায় ২০টি আলাদা স্টলের জায়গা রয়েছে। সেখানে বাকি স্টলগুলো ফাঁকা পড়ে থাকতে দেখা গেছে। বেশ কয়েকটিতে অবশ্য টেবিল-চেয়ার বসিয়ে দখলে রাখা আছে। প্যাভিলিয়নটির ওপর ভারতীয় প্যাভিলিয়ন লেখা থাকলেও তিনটির মধ্যে একটি হচ্ছে ইরানি মশলার দোকান। সেখানে শুকনো ফল ও ভারতীয় চকোলেটও দেখা গেছে। বাদাম-চকোলেটের ওই স্টলটি চালাচ্ছেন ঢাকার এক ব্যবসায়ী। ওই প্যাভিলিয়নের দ্বিতীয় স্টলটি গুলিস্তান ট্রেড সেন্টার নামে একটি প্রতিষ্ঠানের। সেখানে কম্বল বিক্রি হচ্ছে। সেখানকার বিক্রেতা রনি জানিয়েছেন, তাদের পণ্যগুলো চীন থেকে আনা। অপর একটি স্টলে অবশ্য কাশ্মীরি শাল নিয়ে বসেছেন কাশ্মীরি ব্যবসায়ীরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ভারতীয় প্যাভিলিয়নে দেশি ইমিটেশন গহনার দোকান পেয়েছেন ‘এনএইচ মিঠু’। বিদেশি প্যাভিলিয়নে দেশি দোকানের কারণ জানতে চাইলে তিনি জানান, ‘গলার হারসহ বিভিন্ন পণ্য ভারত থেকে আমদানি করা হয়েছে। তবে দেশি আইটেমও আছে। পণ্যের মান ভালো বলে তিনি বিদেশি প্যাভিলিয়নে বরাদ্দ পেয়েছেন’ বলে দাবি করেন তিনি।
একই প্রশ্নের জবাবে চট্টগ্রাম থেকে আসা এক অলঙ্কার ব্যবসায়ী জানান, ‘আমরা টাকা জমা দিয়ে দোকান বরাদ্দ পাই না কখনোই। পরিচিত একজনকে ধরে বরাদ্দ পেয়েছি। তবে দেশি প্যাভিলিয়নের চেয়ে বিদেশি প্যাভিলিয়নের নিরাপত্তা ভালো।’ চট্টগ্রামের ওই দোকানের নাম ‘ইরানি গোল্ড প্লেট’। কিন্তু প্যাভিলিয়নের পণ্যগুলো ভারতীয়।
ওই স্টলের অপর ব্যবসায়ী অভিযোগ করেন, ফাঁকা পড়ে থাকা স্টলগুলো সবই সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ইপিবির নিয়ম মেনে চট্টগ্রাম থেকে টাকা জমা দিলেই এর বরাদ্দ মেলে না। ওই প্যাভিলিয়নে অপর একটি স্টলে বসেছে সম্প্রতি চালু হওয়া অনলাইন শপিংয়ের প্রতিষ্ঠান ‘কী কিনবেন ডট কম’।
সেখানেই অপর একটি প্যাভিলিয়নে স্টল বসিয়েছে ‘মনির ইন্টারন্যাশনাল’। কাঠের তৈরি রুটি বানানোর যন্ত্র বিক্রি করছেন তারা। ‘রিংগো রুটি মেকার’ নামে ওই প্রতিষ্ঠানটি রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত। আরও একটি বিদেশি প্যাভিলিয়ন দেখা গেছে ‘গাউসিয়া ফরেন মার্কেট’ ও ‘নিউ মার্কেট তালুকদার স্টোরে’র দখলে।
ওই দোকানের পরিচালক আবুল হাসনাত বলেন, ‘চীন-ভারতের বিভিন্ন খেলনা ও গৃহস্থালির বাসন-কোসন আমদানি করে নিউমার্কেট ও গাউসিয়ায় বিক্রি করেন তারা। বাংলাদেশের তৈরি পণ্যও রয়েছে সেখানে। চন্দ্রিমা সুপার মার্কেটের রিটেইল দোকান ‘সুইফট হ্যান্ড’ও ফরেন প্যাভিলিয়নে নিয়েছে তাদের স্টল।
অবশ্য সংখ্যায় কম হলেও বেশ কয়েকটি বিদেশি পণ্যের স্টল ও প্যাভিলিয়ন সুসজ্জিত হয়েছে মেলায়। মেলা এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বিদেশি প্যাভিলিয়নগুলোর মধ্যে তুরস্ক, জাপান ও থাইল্যান্ডের প্যাভিলিয়নে কোনো অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলা নেই। থাইল্যান্ড অ্যাম্বেসির উদ্যোগে দুটি থাই প্যাভিলিয়নকে বিশেষভাবে সাজানো হয়েছে। বাংলাদেশের যেসব ব্যবসায়ী থাইপণ্য আমদানি করে, তাদের স্টল বসানো হয়েছে তাতে। এছাড়া ইরান ও পাকিস্তানি কিছু পণ্যের বাংলাদেশি হোলসেলার সংশ্লিষ্ট দেশের নামে দোকান নিয়েছেন।
পাঞ্জাবি নাগরা জুতা নিয়ে স্টল খুলেছেন জয় কুমার। তিনি মেলার দ্বিতীয় দিন পর্যন্ত তার দোকান শুরু করতে পারেননি। তিনি জানিয়েছেন, ‘প্রতিবছরই মেলার কাজ শুরু করতে দেরি হয়।’
দিল্লির অপর এক কাপড় ব্যবসায়ী গতকাল পর্যন্ত ভারতীয় প্যাভিলিয়নের মধ্যে তার স্টলের সাজসজ্জার কাজ করছিলেন। ভারতীয় পণ্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি এসেছে কাশ্মীরি শাল ও পোশাক। ইরান থেকে আংটি ও অন্যান্য অলঙ্কার নিয়ে এসেছেন আলী নামে একজন। তিনি তার দোকান বসিয়েছেন পাকিস্তানি প্যাভিলিয়নে।
নেপালি নাগরিক পুষ্পরতœ তার স্টলে বসে শেয়ার বিজকে জানান, ‘নেপালি পণ্যের জন্য দুটি স্টল নেওয়া হয়েছে।’
উল্লেখ্য, রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) দেওয়া তথ্যমতে, নেপালি স্টলের সংখ্যা তিনটি।
ইপিবির তথ্যমতে, এবারের মেলায় ২০টি দেশের ৪৮টি স্টল বরাদ্দ হয়েছে। এর মধ্যে ভারত, পাকিস্তান, চীন, মালয়েশিয়া, ইরান, থাইল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র, তুরস্ক, সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া, ব্রিটেন, দক্ষিণ কোরিয়া, মরিশাস, নেপাল, ভুটান, জাপান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, ভিয়েতনাম ও হংকংয়ের স্টল বা প্যাভিলিয়ন রয়েছে বলে জানানো হয়। কিন্তু মেলায় ঘুরে সব দেশের স্টল পাওয়া যায়নি।
এসব বিষয়ে ইপিবির সচিব ও মেলা আয়োজক কমিটির পরিচালক মো. আবদুল মজিদ শেয়ার বিজকে বলেন, ‘বিদেশি স্টলে দেশি পণ্য সাজানো ও বিক্রির কোনো সুযোগ নেই। এমনটি হওয়ার কথা নয়।’
অনেক প্যাভিলিয়ন ও স্টল খালি থাকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এ ব্যাপারে খোঁজখবর নিয়ে জানানো হবে। অনেকে প্রস্তুতি নিচ্ছে। দ্রুত তারাও স্টলে পণ্য সাজিয়ে বসবেন।’